ঢাকায় পার্ক-মাঠ থেকে বাণিজ্যিক স্থাপনা সরানোর দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১১ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ঢাকা শহরের উদ্যান (পার্ক) ও খেলার মাঠ থেকে বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ঢাকায় বিভিন্ন উদ্যান ও মাঠে দুই সিটি করপোরেশনসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বেআইনিভাবে স্থাপনা নির্মাণ করছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এতে নগরের পরিবেশ আরও সংকটাপন্ন হবে। তাই দ্রুত ঢাকার ধূপখোলা মাঠ, বাহাদুর শাহ পার্ক ও গুলশান সাহাবুদ্দিন পার্কসহ অন্যান্য পার্ক ও মাঠে নির্মিত বা নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। পাশাপাশি এগুলো যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরও পড়ুন: বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে হচ্ছে খাবারের দোকান, স্থানীয়দের ক্ষোভ

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়াতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় সাত একরের ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ রয়েছে। ২০১৬ সালে সেখানে একটি বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদ করেন স্থানীয় লোকজন। তখন বাধ্য হয়ে গণশুনানি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বাসিন্দাদের আপত্তি ও আন্দোলনের মুখে প্রকল্পের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। পরে ২০২১ সালে রাজউকের অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই মাঠে রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে একটি বিপণিবিতান তৈরির কাজ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তাতে মাঠের শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ জায়গা কমে যাচ্ছে।

jagonews24

ঢাকা দক্ষিণ সিটি বাহাদুর শাহ পার্কের জায়গা ইজারা দিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ইজারাদার সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো ও দোকান নির্মাণ করেছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের। স্থানীয় লোকজনের নির্মল বাতাস গ্রহণ, শরীরচর্চা ও হাঁটাচলার সুযোগ ব্যাহত হচ্ছে। অথচ ইতিহাস, ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এই পার্ক পুরান ঢাকাবাসীর স্বস্তির জায়গা। পাশাপাশি আশপাশের ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এটি ব্যবহার করেন।

আরও পড়ুন: পার্কে হকার পুনর্বাসন নিয়ে বেকায়দায় ডিএসসিসি

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি গুলশানে সাহাবুদ্দিন পার্কে একটি কফিশপ স্থাপন করেছে। জনগণের ব্যবহারের একটি পার্কে ভবন ও কফিশপ নির্মাণের কোনো যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।

jagonews24

বিবৃতিতে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, তিনটি পার্ক ও মাঠের ক্ষেত্রেই নির্মাণসংক্রান্ত বিদ্যমান আইন এবং ২০০০ সালের মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের (২০০০ সালের ৩৬ নম্বর আইন) স্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে। এসব আইন সিটি করপোরেশন কোন ক্ষমতাবলে ও বিবেচনায় লঙ্ঘন করছে তা বোধগম্য নয়। এ ক্ষেত্রে রাজউকের নীরবতাও অগ্রহণযোগ্য। এসব বাণিজ্যিক স্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো জনমত যাচাই করা হয়নি। এমনকি নগর পরিকল্পনাবিদসহ অন্য বিশেষজ্ঞদেরও মতামত নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: নতুন ড্যাপে ২৫টি পার্ক-খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা

কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, সেবা প্রদানকারী নগর প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের কাছে মুনাফা বা টাকা আয় করাই কী মুখ্য? মানুষের বসবাসের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করা কী একেবারেই গৌণ?

jagonews24

বিবৃতিতে সই করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, গ্রিন সেইভার্সের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি, গ্রিন ভয়েসের সম্পাদক আলমগীর কবির এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আরও পড়ুন: নতুন রূপে সাজছে ঢাকা শিশু পার্ক

এতে তারা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ঢাকার দুই সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টিতে কোনো খেলার মাঠ নেই। অথচ একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটারে একটি মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটির ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তুলনায় মাঠ দরকার অন্তত ৬১০টি। আছে মাত্র ২৫৬টি, তা-ও এগুলোর আকার জনসংখ্যার অনুপাতে অপর্যাপ্ত।

এফএইচ/জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।