সুপ্রিম কোর্টের অনুসন্ধান কমিটির অভিযান, মুচলেকা দিলো ৩ জন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ২২ মে ২০২৩
ফাইল ছবি

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত ফটোকপি ও কম্পিউটার টাইপের দোকানে অভিযান চালিয়ে ভুয়া টোকেনসহ দুইজন ও একজন ভুয়া ডেপোনেন্টকে (সাক্ষ্যদাতা) আটক করা হয়। রোববার (২১ মে) সুপ্রিম কোর্টের অনুসন্ধান কমিটি এ অভিযান চালায়। পরে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশে গত বছরের ৬ জানুয়ারি প্রথমে তিন সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। একজন সদস্য বদলি হওয়ার প্রেক্ষাপটে আরও একজন নতুন সদস্য নিয়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত কমিটির সদস্য এখন চারজন।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জাগোনিউজকে বলেন, অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত ফটোকপি ও কম্পিউটার টাইপের দোকানে অভিযান চালিয়ে দুই ব্যক্তিকে ভুয়া টোকেনসহ হাতেনাতে ধরা হয়। তাদের কাছে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাফিডেভিট শাখার জাল টোকেন ছিল। এ ছাড়া একজন ভুয়া ডেপোনেন্টকে ধরা হয়। পরে তিনজনের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কি না, তা অনুসন্ধান কমিটি খতিয়ে দেখছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখায় দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বলা হলেও দুঃখজনক হলেও সত্য অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগসংক্রান্ত প্রাথমিক অনুসন্ধান কমিটি কিংবা সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে কোনো আইনজীবী কিংবা ভুক্তভোগী ব্যক্তি অভিযোগ দিতে চান না। তবে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে লিখিত অভিযোগ তদন্তের পাশাপাশি কমিটি তাদের নিজস্ব কর্মপন্থা অনুসারে অনুসন্ধান করে থাকে।

উচ্চ আদালতের বিভিন্ন শাখার দুর্নীতিরোধ করতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন ও দুর্নীতিরোধের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০২৩ উপলক্ষে উচ্চ আদালতে সরকারি আইনী সহায়তার অগ্রগতি শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না আসে, তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেবো? যখন কারও দুর্নীতি হাতেনাতে ধরা হয়েছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

গত ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (সার্বিক), আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকীকে সভাপতি, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. মিজানুর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার (বিচার) রাশেদুর রহমান এবং আপীল বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও অর্থ) এম,এম, মোর্শেদকে সদস্য করে উভয় বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতিবিষয়ক অভিযোগ সংক্রান্তে প্রাথমিক অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ওই দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি প্রতিদিনই বিভিন্ন শাখায় আকস্মিক পরিদর্শন করে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখার কার্যক্রমে কোনোরূপ অনিয়ম ও দুর্নীতি পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। শাখা পরিদর্শনকালে আইনজীবী সহকারীদের ড্রেস ও আইডি কার্ড ছাড়া কোনো প্রকার সেবা প্রদান থেকে বিরত রাখার জন্য শাখা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তা ছাড়া আপিল বিভাগের কোনো সেবা গ্রহণের নিমিত্ত গ্রহীতার প্রবেশ পাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।

টাস্কফোর্স বা কমিটির সিদ্ধান্ত ক্রমে ফৌজদারী মিস শাখা, আইটি শাখা এবং আদান-প্রদান শাখার বেইল অর্ডার প্রেরণ সংক্রান্ত কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত ফরম অনুযায়ী প্রতি কর্মদিবসে কতটি বেইল অর্ডার শাখা হতে প্রস্তুত করা হয়েছে, তার মধ্যে কতটি বেইল অর্ডার আইটি শাখার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে এবং কতটি ডাক বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রেরণ করা হয় তা মনিটরিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহ থেকে প্রতিদিন অনিয়ম ও দুর্নীতিবিষয়ক কমিটির সভাপতির কার্যালয় বরাবর এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধান কমিটি এর আগেও কয়েকজন ভুয়া ডেপোনেন্টকে আটক করে। পরবর্তীতে তাদেরকে কঠোরভাবে সর্তক করে মুচলেকা গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়। এর ফলে সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভুয়া ডেপোনেন্টর মাধ্যমে এফিডেভিট প্রদানের প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।