দীর্ঘদিন রক্তে শর্করা বেশি থাকলে শরীরের কোন অঙ্গে কী ক্ষতি হয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০৫ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ডায়াবেটিস রোগের নাম জানেন না, এমন মানুষ নেই বললেই চলে। তবে ডায়াবেটিস শুধু রক্তের শর্করা বাড়ায় — এমন ভাবলে ভুল হবে। শর্করা দীর্ঘসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে শরীরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সমস্যা হলো, বেশিরভাগ ক্ষয় নীরবে ঘটে। তাই কেউ টের পাওয়ার আগেই শরীরের ভেতরে বড় ধরনের বিপর্যয় শুরু হয়ে যায়। যারা এই রোগে আক্রান্ত এবং যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের জেনে রাখা দরকার যে, দীর্ঘদিন রক্তে শর্করা বেশি থাকলে শরীরের কোন অঙ্গে কী ক্ষতি হয়?

১. হৃদযন্ত্র ও রক্তনালিতে কী হয়?

ব্লাড সুগার বেশি থাকলে রক্ত মোটা ও আঠালো হয়ে যায়। এতে রক্তনালির দেওয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রদাহ তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে জমতে থাকে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল, যাকে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলা হয়। এতে বাড়ে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর ও স্ট্রোকের ঝুঁকি।

দীর্ঘদিন রক্তে শর্করা বেশি থাকলে শরীরের কোন অঙ্গে কী ক্ষতি হয়

২. কিডনি কেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়

দীর্ঘদিন অতিরিক্ত শর্করা কিডনির ক্ষুদ্র ফিল্টার (গ্লোমেরুলাস) নষ্ট করতে থাকে। এ কারণে রক্ত থেকে বর্জ্য বের করতে কিডনির বাড়তি চাপ পড়ে। ধীরে ধীরে তৈরি হয় ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি, যা শেষ পর্যন্ত কিডনি বিকল হওয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

৩. চোখে কেন দৃষ্টিহানি হয়

উচ্চ শর্করা চোখের রেটিনার ক্ষুদ্র রক্তনালি দুর্বল করে দেয়। এগুলো ফুটো হয়ে রক্তপাত ঘটাতে পারে। চিকিৎসা না করলে রেটিনোপ্যাথি থেকে দৃষ্টিক্ষীণতা ও স্থায়ী অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।

দীর্ঘদিন রক্তে শর্করা বেশি থাকলে শরীরের কোন অঙ্গে কী ক্ষতি হয়

৪. নার্ভ ক্ষতি কীভাবে হয়

শর্করা বেশি থাকলে স্নায়ুর চারপাশের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে স্নায়ুতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায় কম। এতে হাতে-পায়ে ঝিনঝিনি, জ্বালা, অসাড়তা শুরু হয় — যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। সময় গেলে এসব স্নায়ু স্থায়ীভাবে দুর্বল হয়ে যায়।

৫. লিভারে ফ্যাট জমা

ডায়াবেটিসের সঙ্গে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। রক্তে শর্করা বেশি থাকলে লিভারে ফ্যাট জমতে থাকে। এটি পরে লিভার প্রদাহ, এমনকি সিরোসিস পর্যন্তও গড়াতে পারে।

দীর্ঘদিন রক্তে শর্করা বেশি থাকলে শরীরের কোন অঙ্গে কী ক্ষতি হয়

৬. ত্বক ও রোগ প্রতিরোধে প্রভাব

উচ্চ শর্করা শরীরের প্রতিরোধশক্তি দুর্বল করে। ক্ষত শুকাতে দেরি হয়, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস সংক্রমণ বাড়ে। ত্বক শুষ্ক ও স্পর্শে ব্যথা লাগার প্রবণতাও দেখা যায়। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে রোগীর পা।

সতর্কতা

নিয়মিত রক্তে সুগার চেক করা, পর্যাপ্ত ঘুম, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, কম তেল-চিনি-লবণযুক্ত খাবার — এগুলো বজায় রাখলে অঙ্গের ক্ষতি ঠেকানো অনেক সহজ হয়। কারণ ডায়াবেটিস এমন এক রোগ যা, প্রতিদিনের সচেতনতা ও নিয়মের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

সূত্র: ডব্লিউএইচও ডায়াবেটিস রিপোর্ট ২০২৪, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ডায়াবেটিস রিভিউ ২০২৪, মায়ো ক্লিনিক ডায়াবেটিস কমপ্লিকেশনস গাইড ২০২৪

এএমপি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।