অন্যের সাফল্যে খারাপ লাগা সবসময় হিংসা নয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৫৫ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

আজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। অনেকে ভালো করেছেন, অনেকে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেননি। সাফল্যের উদযাপনে বন্ধুদের মধ্যে তুলনামূলক খারাপ ফলাফল করেছে যে শিক্ষার্থী, সে হয়তো মন খারাপ করে আছে।

নিজের মন খারাপ প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করে হয়তো সে সবার মাঝে হাসিখুশি ভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। অনেকে আবার প্রকাশ করে বিপদেও পড়ছেন, কারণ অন্যরা তাকে হিংসুটে ভাবছেন। কিন্তু এটি কি আসলে হিংসা?

জনপ্রিয় ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘থ্রি ইউয়টস্’-এ একটি সংলাপ ছিল। ‘বন্ধু ফেল করলে কষ্ট লাগে, কিন্তু বন্ধু ফার্স্ট হলে আরও বেশি কষ্ট লাগে।’ কেন হয় এমন?

মনোবিজ্ঞানী নুজহাত রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর নিজের ফলাফল যখন আশানুরূপ হয় না, সে নিজেই তখন কষ্টে থাকে। এ সময় বন্ধুর ভালো ফলাফলে সে খুশি হবে এমনটা আশা করা বেশি হয়ে যায়। কারণ সে নিজের মন খারাপের অনুভূতি নিয়ে মানসিকভাবে এলোমেলো থাকে।’

নিজের ফলাফল ভালো না হওয়ার কারণে আপনার কি বন্ধুর প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি আসছে? তার আনন্দ দেখে খারাপ বোধ করছেন? করলেও এই কথাগুলো শেয়ার করা যায় না। তখন একদিকে বন্ধুর সঙ্গে যেমন দূরত্ব তৈরি হয়, অন্যদিকে নিজেকে নিয়েও নেতিবাচক অনুভূতি তৈরি হতে পারে।

নুজহাত রহমান বলেন, এটি হিংসা নয়। বরং একে বলা যেতে পারে মন খারাপের বহিঃপ্রকাশ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় হীনম্মন্যতা, ভয় ও দুশ্চিন্তা। পরিবার ও আত্মীয়রা হয়তো ভালো ফল করা কারও সঙ্গে তুলনা করবেন, সেই ভয়! ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা ও নিজেকে অযোগ্য মনে করার প্রবণতা তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে মানসিক সাপোর্টের জন্য বন্ধুদের চেয়ে পরিবারের ভূমিকাই বেশি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক শিক্ষার্থীকেই শুনতে হয়, ‘একই রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে তোমার বন্ধু ভালো করলো, তুমি পারলে না কেন, কীসের অভাব তোমার?’

এই ধরনের তুলনা ছেলে-মেয়েদের আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দেয়। তারা ভাবে, বাবা-মায়ের ভালোবাসা তার পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে, নিজেকে মূল্যহীন ভাবার যাত্রা এখানেই শুরু হয়। তাই বন্ধুর জন্য খুশি হওয়ার চেয়ে বেশি জরুরি নিজেকে সামলে নেওয়া।

ভালো ফলাফল করা বন্ধুরা নিজেদের উদযাপনে মন খারাপ করে থাকা বন্ধুটিকে ডাকতে পারেন। তবে জোরাজুরি করবেন না। তাকে নিজের কষ্টের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় দিন। তবে খেয়াল রাখবেন, আপনার ওই বন্ধুটি যাতে একেবারে একলা হয়ে না যায়। এই ধাপেই অভিভাবক ও পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

মনে রাখা প্রয়োজন যে, সন্তান আপনার প্রথম প্রায়োরিটি, রেজাল্ট দ্বিতীয় প্রায়োরিটি

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতি বছরই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর অনেক শিক্ষার্থী ব্যর্থতার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেঁছে নেয়। তাই অভিভাবকদের উদ্দেশে নুজহাত রহমান বলেছেন, সন্তানকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেবেন, জীবনের চেয়ে পরীক্ষার রেজাল্ট বড় নয়।

আপনার সন্তানকে তার মূল্য বুঝতে সাহায্য করুন। খারাপ সময়ে সন্তানের প্রয়োজন পরিবারের সমর্থণ। সন্তানকে জানান যে, আপনার কাছে আপনার সন্তানের গুরুত্ব তার ফলাফলের চেয়ে অনেক বেশি।

এএমপি/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।