ফারজানা মুন্নির চারটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০৩ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

 

সঞ্চয়

যা কিছু সঞ্চয় ছিল মিশিয়ে দিয়েছি স্রোতে
হাত পাতো, মুক্তোর মতো কুড়িয়ে নাও
ভাবো, আনন্দকে ছুঁয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিরহ কান্তার।

অনুভব করো, কেউ তোমাকে চুমু খাচ্ছে
কারো বেদনা উড়ে যাচ্ছে পাখি হয়ে
আমি এক বেদনা অপার।
উড়ে যাচ্ছি সামুদ্রিক ঝড়ে।
আমাকে নিঃসঙ্গ রেখে প্রেমিক-পুরুষ
চুমু খায় মহাকালের ঠোঁটে।

ঝড়ে উড়ে যেতে যেতে ভাবি,
কিছুটা বিরহ লিখিত থাকুক
বুকের পাঁজরে।

****

পিপাসা রং

চলো, আজ ভুলে যাই সব আঁধার
পুরোনো ভাঙন পুঁতে দিই অনুর্বর মৃত্তিকায়
হৃদয় গহ্বর নিংড়ে জ্যোৎস্না পোহাই
চলো, ভেসে যাই জল-হাওয়াময় সমুদ্রস্নানে।

কথাদের শবদাহ জ্বলে উঠুক চিতায়
নিমিষেই নেমে যাক সমূহ বিষাদ
দুপুর মিলিয়ে গেলে বিকেলের দেহে
চলো, আমরা জাগিয়ে তুলি মাঘের সন্ন্যাস।

জলে ডুবে গেলে কাঠ-পুতুলের গা
কুয়াশা শুকিয়ে যায় সবুজ রঙের ভেতর
পাতাদের পুড়তে দিলে জেগে ওঠে ছাই
উড়ে যায় অচেনা প্রেমিকের মার্বেল চোখে
আর ফিরে আসে নগ্ন আঁধার প্রেমিকার গায়ে।

চলো, বেদনার মুখোমুখি হয়ে ডুবে যাই পরস্পর
ডুবতে ডুবতে জেনে নিই পিপাসার রঙ।

****

প্রলাপ

বুকের পাঁজর থেকে তুলে আনি এক ফালি আকাশ
সিথানে তার অস্পষ্ট অবয়ব রেখে সূর্যোদয়ের আগেই ডুবে যাই, ডুবে যাই করাতের দাঁতে কাঠ ঠুকে।
মিটিমিটি আঁধারে পৌষের হাড় কম্পিত রাতে ফালি আকাশ গায়ে মাখে মেকি ঢং। নৈঃশব্দ্যের ভাষায় কেঁদে ওঠে প্রাণ। চোখে ভাসে সন্তানের ক্ষুধা, সংসার-সংগ্রাম।

নির্বিঘ্নে চোখের জল চেয়ে দ্যাখে—দু’পাশে দুটি দুঃখী নদীর মতো ছুটে চলে বাবার রোজগার ও মায়ের যুদ্ধ-সংসার।

****

ভাঙন

দু’হাত ভরে বিরহ কুড়িয়ে নেয় রহস্যময় রাত
জন্মের ক্ষতগুলো বিষাদের একতারা—অবিরাম বাজতে বাজতে ফুরিয়ে যায়,
ফুরিয়ে যায় রক্তাভ পদচ্ছাপ আর উদ্যত কালো ছায়া রেখে।

পৌরাণিক গল্পে তুমি শায়িত এক অতিথি যোদ্ধা
আগুনের লেলিহানে নিজেকে রেখে শব্দ পোড়াও, আর
নিঃস্ব ধূলির চিরায়ত শোক জেগে ওঠে জলপ্রপাতের মতো।

তারপর ভুল ও ভাঙনের দাবি নিয়ে সমাগত হবে তোমার এক অদ্ভুত আক্ষেপ। আর বর্ষার বেনোজলে ভেসে যাবে পাড়,
সবশেষে ঝুলে থাকা বৃক্ষমূলে তোমার বেজে উঠবে সুর,
তারপর একদিন—
বুকের ভেতর একটানা ঢেলে যাবে ক্ষরণের বিষ।

এসইউ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।