নাজমুল হোসাইন আকাশের তিনটি কবিতা
তোমাকে বলেছিলাম আকাশ দেবো
কেমন আছো প্রিয়তা!
শুনেছি সকালি রোদ্দুর মেখে স্বামীর উষ্ণ নিশ্বাসে প্রতিটি প্রভাতে ঘুম ভাঙে তোমার।
কাজলের মতো এক আকাশ মেঘ মেঘ স্বপ্ন লেপ্টে থাকে তোমার চোখের কার্ণিশে।
কত কত রঙিন হয়ে ভোরের সূর্য উঁকি দেয় তোমার জানালার চৌকাঠজুড়ে...
মনেপড়ে, একদিন বোকার মতো তোমার দু’চোখে চেয়ে আমি অনেকগুলো সূর্যোদয় দেখতে চেয়েছিলাম!
এখন হয়তো অন্য কেউ সবটুকু মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে থাকে তোমার চোখের তারায়, দেয়ালজুড়ে বাঁধিয়ে রাখে তোমার সেঁওতি রঙের অধর ছুঁয়ে নির্লিপ্ত ভালোবাসার চিত্রপট বুকের দিগন্তে।
তুমি কি এখনো গাঢ় করে কাজল আঁকো দু’চোখের পাতায়!
ঘুম ভাঙার পর এখনো কি তুমি বেনিসের আয়নাজুড়ে নতুন এক সকাল আঁকো প্রতিটি প্রভাতে!
তোমার অধর ছুঁয়ে আমি একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম, দু’চোখের কাজল ছুঁয়ে বলেছিলাম, ‘তোমাকে একটা আকাশ দেবো’।
আমি আকাশ হতে পারিনি।
জীবনের পরিসরে তোমার আর মেঘ হওয়া হলো না।
আজ তুমি অন্যের বারান্দায়, আর আমি শীতের শুষ্কতায় ঝরে পড়া দু’লাইন কবিতার মাঝে জীবন বেঁধেছি।
ভালো থেকো তুমি।
গোধূলির সবটুকু রঙ মেখে প্রিয় মানুষের বুকে মুখ লুকাতে লুকাতে প্রতিটি সন্ধ্যায় ভালোবাসা এঁকো জীবনের গল্পে।
****
প্রযত্নে আকাশ
বুকের ভাঁজে পঞ্চমীর ভরা যৌবনা চাঁদকে জড়িয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছ নির্জীব অন্ধকার শশ্মানে, মর্গে, প্রেমিকের ক্ষয়ত্রি বুকে।
বেদনার বিষুব রেখায় একমুঠো রুপালি আলো ছড়িয়ে আলো-আঁধারি ধ্রুমজাল এঁকেছো জোৎস্নার প্রলেপে।
এতো যৌবনবতী চাঁদ বোধহয় আগে কখনো তোমার বুকে আগুন জ্বালায়নি।
এতো টলটলে মাদকতায় আগে কখনো মাতাল হওনি সারাটা রাতজুড়ে।
অথচ সকাল হলেই কুয়াশার চাদর জড়িয়ে কুসুম কলিকার মতো প্রস্ফুটিত হলুদাভ সূর্য বুকে নিয়ে ভুলে যেতে থাকবে
পুরোটা রাতজুড়ে কোনো এক অভাগা চাঁদ সবটুকু আলো জ্বেলে রাতের শেষপ্রান্তে মরে গিয়েছিলো তোমার দিগন্তরেখা
তোমার অজান্তেই গায়ে মেখে থাকা জোৎস্না ধুয়ে যাবে সকালি শিশির।
এক ফালি রৌদ্র কিরণ মেখে কত সহজেই ভালোবেসে ফেলবে শুভ্র পবিত্র সকাল।
কত সহজেই বদলে যাও, কত সহজেই দিনকে ভালোবেসে গোধূলি আলোয় সূর্য ডুবাও।
কত সহজেই পূর্ণিমা ভুলে বিরহী অমাবস্যায় নিজেকে আঁধার করো অন্ধকারে।
কত কত সূর্য ডুবে যায় রোজ, কত কত চাঁদ নিভে যায় রাত্রি শেষে।
কত কত শতাব্দী পেরিয়ে যায়, নক্ষত্ররা হারিয়ে যায় পাশাপাশি জ্বলতে থাকা নক্ষত্রের খোঁজে।
মনে পড়ে
রাত্রি নিমজ্জিত কোনো এক পূর্ণিমা জোৎস্নায়
ভরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে আমিও একদিন খুব আকাশ হতে চেয়েছিলাম...
****
হিম শিশিরে প্রিয়ার জন্য
তোমার ছবির ফ্রেম বাঁধিয়ে রাখি আকাশের গায়। দু’চোখের পাতায় আঁকি সপ্তর্ষী মণ্ডল। তারায় তারায় জ্বেলে দেই তোমার নামের লিরিকগুচ্ছ।
তারপর আমি কিশোরের খোলা জানালা হই, হই ফাঁকা ছাদ অথবা কার্ণিশ।
কুয়াশার শালে শীত শীত ভিজতে থাকি তোমার প্রেমে সারারাত। এক সময় শিশিরের মতো বিন্দু বিন্দু জমতে থাকে কবিতার বাষ্প তোমার ছবির ফ্রেমে।
একটু ছুঁয়ে দেখবে প্রিয়তা?
কতটুকু বাষ্প হলো প্রেম, কতটা ভিজে গেলাম আমি!
ডুমুরের ডালে ডানা ঝাপটায় বুনো কপোতি, তারা নিভে যায় আকাশে,
নিশ্চুপ নিশুতি অন্ধকার বলয়ে, কত তারা খসে পড়ে শিওরে।
তোমার জানালার ঝিলমিলে বয় হিম কুহেলি, তুমি ডুবে থাকো কম্বলের উম জড়িয়ে।
আমার কার্ণিশ বেয়ে টপকিয়ে পরে রাত, কুয়াশা মেখে জ্বর নামে শরীরে।
হিম হিম প্রেম ছুঁয়ে তোমাকে নিয়ে আরো দু’লাইন কবিতা লিখি, লিখি অদূরে জেগে থাকা হাসনাহেনার মাতম গন্ধ অথবা টবে ঝরে যাওয়া সন্ধ্যামালতির গল্প। ধ্রুবতারা নিভু নিভু করে মেঘের আড়ালে, ঘুম মেখে বুজে আসে চোখ।
ইচ্ছে হয় একদিন সারারাত তোমার মাথার কাছে বসে একগুচ্ছ কবিতা শুনাবো, তারপর রাতের শেষে যখন শুকতারা ওঠে পশ্চিমে তখন না হয় কবিতার খাতা আর বুনো মালতির গল্প তোমার চুলের ভাঁজে রেখে এক ফোঁটা শিশিরের মতো টুপ করেই ঝরে যাবো।
এসইউ/পিআর