গাজীপুর

মসজিদের মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

অভিজিত রায় (কৌশিক)
অভিজিত রায় (কৌশিক) অভিজিত রায় (কৌশিক) , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ট্র্যাপে ফেলা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আহত শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ, ডাকাতি ও হামলার কথা বলে ডেকে নেওয়া হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের। পরে রুমে আটকিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে করা হয় হামলা। চালানো হয় নির্যাতন।

এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি ভর্তি রয়েছেন আইসিইউতে। এছাড়া গতকালের ঘটনার পর ১১ জন চিকিৎসা নিতে এলেও তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

Treatment

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ভবনের ষষ্ঠ তলার ৬১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন গাজীপুরে হামলার ঘটনার আহত ৬ জন। সবারই মাথায় রয়েছে ব্যান্ডেজ। চলছে স্যালাইন। আহতদের কেউ কেউ বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। কেউ ঘুমাচ্ছেন। তবে কেউই ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না।

আহতরা ৬১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৬১৮, ৬১৯, ৬২০, ৬২১, ৬২৮ ও ৬২৯ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছেন।

আহত ইয়াকুব বলেন, গতকাল আমাদের কাছে একটা সংবাদ আসে যে মোজাম্মেলের বাড়িতে হামলা-ডাকাতি-ভাঙচুর হচ্ছে। তখন আমরা ৬০/৭০ জন ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। যারা আমাদের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয় দিয়েছিল, তারা বলে যে ভেতরের অবস্থা খুব খারাপ। আপনারা একটু দেখেন। এ কথা বললে আমরা প্রায় ৩০ জন ভেতরে প্রবেশ করি। তারা চালাকি করে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এরমধ্যে ৪০০ থেকে ৫০০ আওয়ামী লীগের লোক আমাদের বাইরে যারা ছিল, তাদের ওপর আক্রমণ করে। কিছু ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। যাদের তারা ধরতে পারে তাদের মাথায় আঘাত করে, মাথা ফাটিয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এরপর তারা যাদের ভেতরে আটকিয়ে রেখেছিল, সেই গেট ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। এসময় আমরা পালিয়ে ছাদে চলে যাই এবং ছাদের গেট আটকিয়ে দেই।

তিনি বলেন, তখন তারা মাইকে ঘোষণা দেয় যে মোজাম্মেল ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাত ঢুকেছে। হামলা হয়েছে। মোজাম্মেল ভাইয়ের যত লোক আছেন সবাই এসে ওদের ধরেন। এভাবেই মাইকে একটা ঘোষণা দেয়।

এরপর তারা ছাদের গেট ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা সেখানে যে ৩০ জনের মতো ছিলাম প্রত্যেককে দা, চাপাতি দিয়ে কোপানোর চেষ্টা করে। তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক আমাদের ওপর নির্যাতন চালায়। এর মধ্যেই আমাদের কাছে যে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ যা ছিল, সব নিয়ে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের হত্যা করা। তারা আমাদের টর্চার করে চলে যাওয়ার পর লোকজন এসে আমাদের হাসপাতালে পাঠায়। আমাদের একজন প্রতিনিধি আইসিইউতে ভর্তি আছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পরও এখনো কোন আইনি ব্যবস্থার সাড়া পাচ্ছি না আমরা। এখনো কেন ফ্যাসিস্টরা তাদের মত করে কাজ করতে পারছে? আইন কী করছে? ফ্যাসিস্টরা যেন পুনরায় আর জন্ম নিতে না পারে আমরা সেভাবে আমাদের দাঁড় করাবো।

Treatment

হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ওমর হামজা। তিনি বলেন, আমার মাথায় ৫টার মতো কোপ দিয়েছে। ১৯টা সেলাই লেগেছে। কথা বলতে পারছি না।

আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন সাব্বির খান হিমেল। সোহরাওয়ার্দী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থী তিনি। হিমেলের ভাই সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের মাস্টার্সের তাহসিন আহমেদ। তিনি বলেন, কাল এদের ট্র্যাপে ফেলে এ কাজটা করেছে। ও তো সাধারণ ছাত্র। ছাত্র হিসেবেই ওখানে গিয়েছিল। তারপর ওদের আটকে নির্যাতন করেছে। ওরা মূলত সমস্যার সমাধান করতে গিয়েছিল। এরপর ওদেরই কুপিয়া যখম করেছে।

আহত আবির খানের ফুপাতো ভাই আল আমিন বলেন, আমি যতটুকু জানতে পারছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ধরে বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট চলছিল। পরে ওদের কাছে খবর আসে আ কম মোজাম্মেলের বাড়িতে নাকি লুটপাট চলছে। এটা বলে মূলত ওদের ওখানে ডেকে নেওয়া হয়েছে। ওরা যখন গেছে তখন ওখানকার আওয়ামী লীগের লোকরা ওদের ওপর আক্রমণ করে।

তিনি বলেন, ভেতরে যে ৩০ থেকে ৩৫ জন ঢুকেছে তাদের প্রত্যেককে মাথায় কুপিয়েছে। এমন একজনও নেই যার মাথায় আঘাত নেই। প্রতিটা লোক আহত। ওদের ট্র্যাপে ফেলে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে ওদের ডেকে নেওয়া হয়েছিল।

মর্নিং সান স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহত শুভ শাহরিয়ার বলেন, আমাকে এলাকার এক বড় ভাই ওখানে নিয়ে গিয়েছিল। প্রথমে এসব কিছুই বলেননি আমাকে। বিএনপির কমিটি দেওয়ার জন্য একটা মিলাদের কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়েছিল। সেখান থেকে মোজাম্মেলের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। আমি কিছুই জানতাম না। সেখানে গিয়ে দেখি বাড়ি ভাঙচুর করতেছে। পরে আমরা ভেতরে ঢুকলে আমাদের একটা রুমে আটক করে। কিছুক্ষণ পর মসজিদের মাইকে আমাদের ডাকাত বলে ঘোষণা করে। আমরাও এ রুমের দরজা ভেঙে ছাদে যাই। ছাদের দরজা আটকে দেই। মসজিদের মাইকে বলে যে বাড়ির মধ্যে ডাকাত আটক করেছি। কিছুক্ষণ পর তারা সবাই ওপরে গিয়ে ছাদের দরজা ভেঙে আমাদের আটকিয়ে মারধর করে। সে সময় আমরা পুলিশকে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু তাদের আসতে দেরি হয়েছিল।

গতকাল (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হন শিক্ষার্থীরা। আহতরা দাবি করেছেন, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

কেআর/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।