বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র

সাবেক জিএমের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে আটকা ৬ মাস

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:১৬ এএম, ২৯ নভেম্বর ২০২৫

বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নূর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি ছয় মাসেও। অভিযোগ উঠেছে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব প্রতিবেদনটি আটকে রেখেছেন।

জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিয়মবহির্ভূত পদোন্নতি বাগিয়ে নেন নূর আনোয়ার হোসেন। পলাতক সাবেক তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের সঙ্গে সখ্য কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্ব নেন তিনি। দায়িত্ব পালনকালীন তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন বিটিভির আরেক মহাব্যবস্থাপকসহ অনুষ্ঠান শাখার ১৪ কর্মকর্তা। কিন্তু দেড় বছরেও নূর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নানান অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। এ নিয়ে ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট ‘বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র/আওয়ামী সরকারের উন্নয়ন প্রচারের নামে লুটপাট’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাগো নিউজ।

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই চট্টগ্রাম থেকে নূর আনোয়ারকে বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের কন্ট্রোলার/প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে বদলি করা হয়। পরে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা কেন্দ্র থেকে ঝিনাইদহ উপকেন্দ্রে সংযুক্ত করা হয়।

বিটিভি সূত্রে জানা যায়, বিটিভির জেনারেল ম্যানেজার মোছা. মাহফুজা আক্তারসহ অনুষ্ঠান শাখার ১৪ কর্মকর্তা ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ বিটিভির অডিয়েন্স রিচার্স অফিসার/স্ক্রিপ্ট অ্যান্ড মনিটরিং এডিটর (গ্রেড-২) নূর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিটিভির মহাপরিচালকের মাধ্যমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লিখিত অভিযোগ দেন।

আরও পড়ুন
যে কারণে তুমুল জনপ্রিয় ছিলো বিটিভি
বিতর্কিত অনুষ্ঠান প্রচার/বিটিভির ২ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, ২ জনকে শোকজ
কেন জনপ্রিয়তা হারালো বিটিভি?
বিটিভিকে আরও বড় আকারে ঢেলে সাজাতে চায় সরকার

অভিযোগ দেওয়া অন্য ১৩ জন হলেন- কন্ট্রোলার/প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ মোল্লা আবু তৌহিদ, মোহাম্মদ মনিরুল হাসান, প্রযোজক (গ্রেড-১) মো. শাহজামান মিয়া, প্রযোজক (গ্রেড-২) ইয়াসির আরাফাত, এল রুমা আক্তার, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. এরশাদ হোসেন, সহযোগী প্রযোজক মো. নাজমুল হোসেন, সৈয়দা ফারহানা হাসান, তানভীর আহমেদ খান, মো. মাহেদুর রহমান, হাফিজ মো. আবদুল বাতেন সরকার এবং মো. জামাল উদ্দিন।

সাবেক জিএমের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে আটকা ৬ মাস

১৪ কর্মকর্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিভির ওই সময়ের মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম নূর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি দেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নূর আনোয়ার হোসেন ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি বিটিভিতে অডিয়েন্স রিসার্চ অফিসার/স্ক্রিপ্ট অ্যান্ড মনিটরিং এডিটর (গ্রেড-২) হিসেবে যোগ দেন। ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল ওই পদে তাকে স্থায়ীকরণ করা হয়। ৯ জুন নূর আনোয়ার হোসেনকে প্রযোজক (গ্রেড-২) পদায়ন করে বিটিভি। ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রযোজক (গ্রেড-১) পদে পদোন্নতি এবং ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে নির্বাহী প্রযোজক এবং ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কন্ট্রোলার/প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি দেয় বিটিভি। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি নূর আনোয়ার হোসেনকে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব) পদে নিয়োগ দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

আমরা অভিযোগ করেছি ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। এখন দেড় বছর হয়ে গেছে। তদন্তের ফলাফল সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি। সাবেক জিএম নূর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।- অভিযোগকারী বিটিভির সহযোগী প্রযোজক মো. মাহেদুর রহমান

মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে সাময়িকভাবে পদায়ন করা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার (নূর আনোয়ার হোসেন) নিজস্ব ফিডার লাইনে (অডিয়েন্স রিসার্চ অফিসার/স্ক্রিপ্ট অ্যান্ড মনিটরিং এডিটর (গ্রেড-১) পদে পদোন্নতি না দিয়ে অন্য স্থায়ী ফিডারে প্রযোজক (গ্রেড-২) পদে পদায়ন ও পদোন্নতি প্রদান বিধিসম্মত নয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব) নূর আনোয়ার হোসেনের চাকরিকালীন এক পদ থেকে অন্য স্থায়ী পদে পদায়ন ও পদোন্নতির বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৪ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের লিখিত সুপারিশে পরের ৯ জুন নূর আনোয়ার হোসেনকে বিধিবহির্ভূতভাবে স্থায়ী পদ প্রযোজক (গ্রেড-২) পদায়ন করে বিটিভি। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি নূর আনোয়ার হোসেনকে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে পদায়ন করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। মূলত ওই সময়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সখ্য কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্ব নেন তিনি।

সাবেক জিএমের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে আটকা ৬ মাস

বিটিভি মহাপরিচালকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র অধিশাখার যুগ্ম-সচিব মাহফুজা আখতার আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। তদন্ত কমিটি অভিযোগকারী প্রত্যেক কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেন। ২০২৫ সালের শুরুতে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। কিন্তু গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে তদন্ত প্রতিবেদনটি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (টিভি-১) মো. ইব্রাহিম ভূঞার কাছে আটকা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এ বিষয়ে কথা হলে তদন্ত কমিটির প্রধান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র অধিশাখার যুগ্ম-সচিব মাহফুজা আখতার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক মহাব্যবস্থাপক নূর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনটি বেশ কয়েকমাস আগে জমা দিয়েছি।’ প্রতিবেদনের পরবর্তী অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উপসচিব (টিভি-১) মো. ইব্রাহিম ভূঞার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

অভিযোগকারী বিটিভির সহযোগী প্রযোজক মো. মাহেদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ করেছি ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। এখন দেড় বছর হয়ে গেছে। তদন্তের ফলাফল সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি। সাবেক জিএম নূর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (টিভি-১) মো. ইব্রাহিম ভূঞা তদন্ত কমিটির প্রধান যুগ্ম-সচিব মাহফুজা আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এসময় তদন্ত কমিটির প্রধানই তার (ইব্রাহিম ভূঞা) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলার বিষয়ে জানানো হলে তিনি ‘আমি এখনো রিপোর্টটি দেখিনি’ উল্লেখ করে ফোনের লাইন কেটে দেন।

এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।