কারাগারে প্রবেশে উপচেপড়া ভিড়


প্রকাশিত: ১০:৩৫ এএম, ০২ নভেম্বর ২০১৬

পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড। জেল রোড নামেও পরিচিত এটি। আজ এর নাম বদলেছে। আনন্দ রোড বললেই যুৎসই হয় বটে।

যে রোড শত বছরের দুঃখ-বেদনা, কান্না আর আবেগের সাক্ষী, তাতে যেন আজ ছড়াচ্ছে আনন্দ। পুরো রাস্তায় আজ উৎসবের আমেজে। কয়েদি ভরা পুলিশের প্রিজন ভ্যান নেই, নেই বাড়তি নিরাপত্তাও। তবুও যানজটে আটকা পড়েছে শত শত রিকশা। কারাগারে প্রবেশে সৃষ্ট যানজট এটি।

একই চিত্র প্রধান ফটকের সামনেও। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য দীর্ঘ লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মানুষের দাঁড়িয়ে থাকার লাইন।

যে কারাগারের নাম শুনলে পিলে চমকে ওঠে, কান্না আর আহাজারির ছবি ভেসে উঠে- সেই কারাগারে প্রবেশে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তাও আবার ১০০ টাকার টিকিট কেটে।

jail

অবাক নয়, সত্যি। পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১০০ টাকায় টিকিট কেটে যে কেউ ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

জেল ও জার্নি শিরোনামে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথমবারের মতো আলোকচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার সংগ্রামী জীবনের দুর্লভ ছবি নিয়ে চার দিনব্যাপী আলোকচিত্রের আয়োজন করে জার্নি নামের একটি সংগঠন। সহযোগিতা করছে জেল কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার মোট ১৪৫টি ছবি ৭৫ ফ্রেমে প্রদর্শিত হচ্ছে।   

বুধবার বিকেলে সংগ্রাম ও জীবনগাথা শিরোনামের এ আলোকচিত্রের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক, জার্নির উপদেষ্টা ড. একেএম আব্দুল মোমেন, চেয়ারম্যান বজলুল হক, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

কারাগার দেখতে এসেছেন পুরান ঢাকার নারী নওজিলা। বলেন, ‘জেলের দক্ষিণ পাশে আমাদের বাড়ি। আমার জন্মও এখানে। কারাগার আমাদের কাছে ইতিহাস। কারাগারের ভিতর কেমন, কোথায় থাকতো কয়েদিরা, তা জানতে মন চাইত। এভাবে ভেতরে যেতে পারব কোনোদিন ভাবতে পারিনি।’ 

কথা হয় মুনসুর আলী নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গতকালই শুনেছি ১০০ টাকা দিয়ে ভিতরে যাওয়া যাবে। আজ আর কাজে যাইনি। বন্ধুকে নিয়ে সকালে এসেই লাইনে দাঁড়িয়েছি। ঘুরে দেখলাম। অনেক কিছু জানাও গেল।’

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশে কারাগার পরিদর্শনের বিধান আছে। বিশেষ করে পরিত্যক্ত কারাগারগুলোকে চিত্তবিনোদনের কেন্দ্র করা হয়। এ কারাগার নিয়েও সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এবং জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে। পুরো কারাগারটি বিনোদন কেন্দ্রসহ নানা প্রকেল্পের আওতায় আনা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় চার দিনব্যাপী এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

এএসএস/এএস/এএইচ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।