দেশের সব সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি


প্রকাশিত: ০২:৩৮ এএম, ১০ মার্চ ২০১৫

দেশের সব সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়েছে । ২ মার্চ এ সংক্রান্ত সিটি কর্পোরেশন আদর্শ কর তফসিল-২০১৫ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
নতুন আদর্শ কর তফসিলে সম্পত্তি হস্তান্তর, ময়লা নিষ্কাশন ও সড়কবাতি করসহ কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এগুলো বাস্তবায়নের আগে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে যেসব কর বিদ্যমান রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এখন থেকে নতুন হার কার্যকর করা হবে। যদিও বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স, সড়কবাতি ও ময়লা নিষ্কাশন কর পাঁচ বছরের জন্য একসঙ্গে দেয়া যাবে। এ সময়ের মধ্যে করহার পরিবর্তন হলে পরে তা সমন্বয়ও করা যাবে। সব সিটি কর্পোরেশনের জন্য এ কর তফসিল প্রযোজ্য হবে। এ তফসিল জারির ফলে ২০০২ সালের ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর তফসিল ও ২০০৪ সালের রাজশাহী ও ২০০৬ সালের চট্টগ্রাম কর তফসিলও রহিত হবে। নতুন এ ঘোষণায় ভূমি ও ইমারত এবং ট্রেড লাইসেন্সের কর হার বাড়ানো হয়েছে।

ইমারত ও ভূমি কর : সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মালিকানাধীন ও দখলস্বত্বের সব হোল্ডিংয়ে অবস্থিত ইমারত ও ভূমির বার্ষিক মূল্যের ওপর ৭ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়েছে। এতদিন এ হার ছিল ৩ থেকে ৬ শতাংশ। তবে কোনো ইমারত বা ভূমি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার হলে তা থেকে হোল্ডিং কর আদায় করা যাবে না। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কোনো অংশ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হলে তার ওপর করারোপ করা হবে। ভূমি ও ইমারতের বার্ষিক মূল্যও বাড়ানো হয়েছে। নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহৃত জমির মূল্য নির্ধারণে এর প্রকৃত ব্যবহার বিবেচনা করা হবে। আর ভাড়া দেয়া জমি ও ইমারতের ক্ষেত্রে ভাড়া প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ের রসিদ বিবেচনায় নেয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদের কর : রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা বসবাস করছেন এমন ইমারত বা ভূমির ওপর কর দিতে হবে না। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ মালিকানাধীন জমি ও ইমারতের এক হাজার বর্গফুট পর্যন্ত হোল্ডিং করমুক্ত থাকবে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের মালিকানাধীন ভূমি বা ইমারতের কোনো অংশ বাণিজ্যিক বা লাভজনক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হলে তার ওপর হোল্ডিং কর প্রযোজ্য হবে।
স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর : স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিলে উল্লিখিত মূল্যের সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে করারোপ করা যাবে। তবে ওয়াকফ-ই-আল আওয়াদ ছাড়া নিবন্ধনকৃত ধর্মীয়, দাতব্য, ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যেকোনো দান বা উইল-সংক্রান্ত হস্তান্তর দলিলে ওই কর আরোপ করা যাবে না। এ ছাড়া বৈধ ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর দলিলের ক্ষেত্রে করারোপ করা যাবে না।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর : সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কর দিতে হবে। সাধারণ দোকান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আয়তন অনুযায়ী কর দিতে হবে, যা ট্রেড লাইসেন্স কর হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া প্রতিবছর নির্দিষ্ট হারে করও দিতে হবে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে (মূলধন অনুযায়ী) বার্ষিক কর ১ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আরোপ করা হয়েছে। তবে ব্যাংকের ক্ষেত্রে কর হার ১৫ হাজার ৫০০ টাকা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর : নতুন কর তফসিলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১০ হাজার, বেসরকারি কলেজ ৫ হাজার, কিন্ডারগার্টেন ২ হাজার ও কোচিং সেন্টারের ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা কর দিতে হবে।

ময়লা নিষ্কাশন ও সড়কবাতি কর : সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ময়লা নিষ্কাশন কর আরোপ করা যাবে। এ হার হবে সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি হোল্ডিংয়ের ইমারতের বার্ষিক করের সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। একইভাবে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সড়কবাতির সুবিধা দেয়ার জন্যও অধিবাসীদের ওপর করারোপ করা যাবে। এ হার হবে ইমারতের বার্ষিক করের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য কর : সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের কাছ থেকে ইমারত বা জমির বার্ষিক করের সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ হারে স্বাস্থ্য কর আরোপ করা যাবে। নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করলে তার ব্যয় নির্বাহে এ কর আরোপ করা হবে। বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিং হোম ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে আকার ভেদে ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বার্ষিক কর নির্ধারণ করা হয়েছে।

পানি সরবরাহ কর : কোনো এলাকায় ওয়াসা কর্তৃক পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকলে সিটি কর্পোরেশন এ দায়িত্ব পালন করবে। এ জন্য জমি বা ইমারতের কর মূল্যায়নের ওপর সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ হারে কর আরোপ হবে। তবে ওয়াসা কর্তৃক পানি সরবরাহ ও বিল আদায় করা হলে সিটি কর্পোরেশন পৃথক কর আরোপ করতে পারবে না।

হোটেলের ওপর নগর কর : সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তিন, চার ও পাঁচ তারকা হোটেল স্থাপন করা হলে হোল্ডিং ট্যাক্সের পাশাপাশি পৃথক নগর কর আরোপ করা হবে। এ ক্ষেত্রে হোটেলের কক্ষ সংখ্যার ওপর যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৩, ৪ ও ৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা যাবে। এ ছাড়া ঠিকাদারি ও আবাসন ব্যবসার ক্ষেত্রে ধরন ভেদে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর দিতে হবে। আর ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর নির্ধারণ করা হয়েছে। বিপণন ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। অন্যান্য ব্যবসার ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এর বাইরেও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, পোষা প্রাণী পালন, সিনেমা ও অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনী, মেলা প্রদর্শনীর ওপর কর এবং ব্যক্তিগত ভবনের ওপর সাইনবোর্ড, সেলফোন কোম্পানির টাওয়ার স্থাপনে কর ও সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। সুত্র : যুগান্তর

এসএইচএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।