আমি এ দেশের লোক, বাইরে থেকে আসিনি: নৌ উপদেষ্টা
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের মন্তব্যের জবাবে এবার নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আমি এ দেশের লোক, বাইরে থেকে আসিনি।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বোর্ড ক্লাবে আয়োজিত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিসেম্বরের শুরুতে এক সভায় উপদেষ্টা বলেছিলেন- বন্দরে বছরে ৯শ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। তার এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গত ১০ ডিসেম্বর আরেক সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চাঁদাবাজি তো দূরের কথা, বন্দর নিয়ে আমি কখনো কাউকে ফোন বা তদবির করিনি। অতীতে কারা চাঁদা নিতো, সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলে চট্টগ্রামে ওনাকে (নৌ উপদেষ্টা) আসতে দেবো না।
চসিক মেয়রের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উপদেষ্টা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, অতীতে এ বন্দরে চাঁদাবাজি হয়েছে, আমি অতীত কথাটি বলেছি। দুঃখজনক হলো আমাদের কয়েকজন সাংবাদিক ভাইয়েরা ‘অতীত’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ কথাটি প্রকাশ করেছে। আমি বর্তমান মেয়র সম্পর্কে কোনো কথা বলিনি। আপনারা (সাংবাদিক) ভালো করে জানেন, অতীতে বন্দরে কোন ধরনের মাফিয়ারা ছিল, আমাকে (উপদেষ্টা) বলতে হবে না। আজকে বন্দরের অনেক উন্নতি হয়েছে, অতীতে হতে পারেনি। এই বন্দরকে তো নতুন করে কিছু করা হয়নি। যখন কোনো কথা বলা হয়, তখন স্বার্থের মধ্যে আঘাত লাগে। আমি অতীত স্বার্থের কথা বলেছি, আমি এ দেশের লোক, বাইরে থেকে আসিনি।
তিনি আরও বলেন, নতুন করে আমাকে কিছু বলতে হবে না। আপনারা ভালো করে জানেন বন্দরে কারা চাঁদাবাজি করেন। আমি মাসিক কথা বলিনি, বলেছি অলমোস্ট। সবাই জানে- প্রতিদিন কত টাকা চাঁদাবাজি হয়। সেটা কে নেয়, কে না নেয়, সেটি বলতে পারবো না।
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র সম্পর্কে তিনি বলেন, মেয়র মহোদয় একজন পলিটিশিয়ান। উনি আমার ক্লোজ মানুষ। উনি পলিটিক্স করেন। অনেক সময় পলিটিশিয়ানরা পুরো কথা না শুনেই বক্তব্য দেন। ওনার সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কালকে রাতেও উনি (মেয়র) আমাকে ফোন করেছনে। উনি (মেয়র) নিজেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমি ওনার কনস্টিটিউশনের লোকও না। ডা. শাহাদাত একজন ভালো মানুষ।
এর আগে, তিনি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরী, শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বক্তব্য রাখেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিএসসির মোট আয় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরিচালন, প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যয় হয়েছে ৪১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থবছরে কর সমন্বয়ের পর সংস্থার নিট মুনাফা হয়েছে ৩০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যা বিএসসির ৫৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেশি।
সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিট লাভ থেকে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ট) ঘোষণা করা হয়। পরে উপস্থিতি শেয়ারহোল্ডারদের ভোটে তা পাশ হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী বিএসসির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং মোট বহিঃদেনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। শিপিং করপোরেশনের শোর এস্টাব্লিশমেন্টে (অফিসে) অনুমোদিত জনবল ১৫২১ জন। এর মধ্যে কর্মকর্তা ২১৭ জন ও কর্মচারী ১৩০৪ জন।
৩০ জুন ২০২৫ তারিখে করপোরেশনের শোর এটাব্লিশমেন্টে (অফিসে) কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২২৫ জন। এর মধ্যে কর্মকর্তা ৬৮ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা ১৫৭ জন। এছাড়া এফ্লোট এস্টাব্লিশমেন্টে (জাহাজে) কর্মরত অফিসারের সংখ্যা ছিল ৭৩ জন ও নাবিক ৭৪ জন।
এমডিআইএইচ/এএমএ/এএসএম