স্বাধীনতা দিবসেও মুক্তি নেই


প্রকাশিত: ০৭:৫৩ এএম, ২৬ মার্চ ২০১৭

শাহবাগ থানার বিপরীত দিক থেকে ধীরগতিতে আবর্জনার ট্রলি ঠেলে রাস্তা পার হচ্ছিলেন আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। জীর্ণশীর্ণ দেহ তার। পাকা চুলে মেহেদি কলপ করা। হালকা সাদা দাঁড়ি ও গোফের এই বৃদ্ধের পরনে নেভি ব্লু রংয়ের ফুল প্যান্ট ও পায়ে এক ফিতা ওয়ালা পুরোনো চামড়ার জুতো।

বৃদ্ধ যখনই ট্রলির হাতল ধাক্কা দিচ্ছিল তখনই তার কাঁধের হাড় ও গলার রগগুলো স্পষ্ট ভেসে উঠছিল। শাহবাগ থানার অদূরে ডাস্টবিনে এসেই বৃদ্ধ হাঁপাতে শুরু করলেন। পরিধেয় যে ইউনিফর্মটি ট্রলির হাতলে রেখেছিলেন সেটি হাতে নিয়ে মুখ মুছতে শুরু করলেন। মিনিট দুয়েক বিশ্রাম নিয়ে এবার ট্রলি থেকে সংগৃহীত ঝরাপাতাগুলো ডাস্টবিনে ফেলতে লাগলেন।

oldকৌতূহলবশত সামনে গিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করতেই অস্পষ্ট ভাষায় ও এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে একই শব্দ বারবার উচ্চারণ করতে লাগলেন। কথোপকথন শুনে এগিয়ে এলেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অপর এক ক্লিনার। তিনি জানালেন, বৃদ্ধ বোবা। এ সময় বৃদ্ধ ঘাড় বাকিয়ে হু-হা করতে লাগলেন এবং জাতীয় জাদুঘরের দিকে অাঙ্গুলের ইশারায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা চালালেন।

সিটি কর্পোরেশনের ওই কর্মচারী জানালেন, বৃদ্ধ জাতীয় জাদুঘরের ক্লিনার। প্রায়ই আবর্জনা ফেলতে এখানে আসেন। নেভি ব্লু রংয়ের ইউনিফর্ম থাকলেও গরমের কারণে শার্ট খুলে এসেছেন। ইশারায় জানালেন, গত দশ বছর যাবত জাদুঘরের বাইরে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন। মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন পান।

আজ স্বাধীনতা দিবসে ছুটি কি না জানতে চাইলে বৃদ্ধ উত্তেজিত হয়ে হাত নাড়িয়ে জানান, আজ সরকারি ছুটি হলেও তার ছুটি নেই। আজ জাদুঘর খোলা। কর্মকর্তাদের নির্দেশে খুব ভোরে উঠে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার শুরু করেন। ময়লা-আবর্জনার বেশিরভাগ ঝরে পড়া ফুল ও ফল গাছের। খুব ভোরে কাজ শুরু করলেও দুপুর ২টায় ছুটি বলে তিনি জানান।

এ বয়সে কাজ করতে কষ্ট লাগে না জিজ্ঞেস করতেই বৃদ্ধের চোখে-মুখে বিষাদের ছাপ। ইশারায় জানালেন, তার কোনো ছেলে সন্তান নেই। একটি মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী ও মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।

এ সময় পাশে দাঁড়ানো সিটি কর্পোরেশনের অপর পরিচ্ছন্ন কর্মীটি বলে উঠলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসেও বৃদ্ধের ডিউটি থেকে মুক্তি নেই।’

এমইউ/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।