জ্যামে নাকাল হয়েও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমর্মিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৩৬ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৮

‘ভয়াবহ জ্যামে আছি। কমবেশি জ্যামে তো প্রতিদিনই পড়ি। তবুও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাগ্রতা পোষণ করছি। রাস্তায় এই বেপরোয়া বাস নিয়ন্ত্রণে আসুক। আসা উচিত।’

মিরপুরের কালসি রোডে প্রায় দুই ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকা শ্যামল ঘোষ জাগো নিউজকে এভাবেই বলছিলেন। তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য যাত্রীরাও কষ্টে নাকাল। তবে শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর তেমন বিরক্তি নেই কারোরই।

রোববার সকাল থেকে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বাসচাপায় ওই কলেজের দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে তারা এ অবরোধ করে। তাদের এই অবরোধের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজধানীর অন্যান্য কলজের শিক্ষার্থীরাও। ফলে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের পর অনেক রাস্তায় সীমিত আকারে গাড়ি চললেও তাতে জ্যাম কমেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বৃষ্টি। দুপুরের মুশলধারে বৃষ্টিতে অনেক রাস্তায় জমে গেছে পানি। সব মিলিয়ে পুরো রাজধানী বলতে গেলে নাকাল।

সোমবার অনেকে জ্যামে বসে থেকে সামাজিক যোগাযোগ সাধ্যম ফেজবুকে স্টেটাস দিয়েছেন। জানিয়েছেন দুর্ভোগের কথা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন।

ইকবাল বাহার নামের এতজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, আজকের ঢাকার যানজট নিয়ে আমার কোনো বিরক্তি নেই। বরং মনে হচ্ছে আমিও বাচ্চাগুলুর প্রতিবাদের সঙ্গে আছি...। তিনি আরও লিখেন, আমার ৭ বছরের ছেলেটা স্কুল ছুটির পর এখনো বাসায় ফেরেনি, ৩ ঘণ্টা ধরে জ্যামে বসে আছে - আমার খারাপ লাগছে না। আমার বড় ছেলেটা এখনো স্কুলেই বসে আছে, সন্ধার পর তাকে আনতে যাব - আমার খারাপ লাগছে না। এই নৃশংস হত্যার একটা সমাধান দরকার। হ্যাস ট্যাগ দিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, ‘নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চাই’।

ফারুক আল হাসান লিখেছেন, একটা স্কুল পুরো ঢাকা অচল করে দিলো..প্রায় তিনশ বাস ভাঙচুর হইছে...প্রশাসন থেকে শুরু করে কারও গাড়ি যেতে দেয়নি (অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া)...আন্দোলন এমনই হওয়া উচিত ....

জানা গেছে, রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও বাটা সিগন্যালের আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এ আন্দোলনে জড়ো হন। অন্যদিকে সকাল থেকে বিএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা শাহীন কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। ফলে রাজধানীর বিমানবন্দর, মিরপুর, মহাখালী, নিউমার্কেট, পল্টন, শাহবাগ, রামপুরা, ফার্মগেট ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। যানজট প্রধান সড়ক ছাড়িয়ে এলাকার অলিগলি পর্যন্ত ছেয়ে গেছে।

এদিকে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি আদায়ে সাতদিনের আলটিমেটাম দিয়েছে। দুপুর পৌনে ১টায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী শাহীন সিফাত সংবাদ সম্মেলন করে এ আলটিমেটাম দেন।

৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, বোপোরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং সংবিধানে সংযোজন করতে হবে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাতে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের নিতে হবে, শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করতে দেয়া যাবে না, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।

অপরদিকে বিমানবন্দর সড়কের প্রতক্ষদর্শীরা জানান, বাস চাপায় দুই সহপাঠী নিহতের প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই রাস্তায় নামে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক উম্মে কুলসুম শিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে বাড়ি ফেড়ার কথা বলেন। তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন যে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়া হবে। কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছাড়েনি।

একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরাতে শুরু করে। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশও শিক্ষার্থীদের পাল্টা ধাওয়া করে। এতে শিক্ষার্থীরা রাস্তা থেকে সরে গেছে। যান চলাচলও শুরু হয়েছে।

এমএ/জেডএ/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।