পত্রিকায় এমন ধস গত ২৬ বছরে দেখেননি হকার আসাদ মিয়া
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভীতির কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে সংবাদপত্রে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের যেকোনো একটিতে চোখ না বুলালে যাদের দিনের শুরুটাই হতো না-এমন পাঠকরাও পত্রিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় হকারদের ডেকে আপাতত পত্রিকা সরবরাহ না করার জন্য অনেকেই মানা করে দিচ্ছেন। করোনাভাইরাস ভীতি নাকি অর্থনৈতিক সমস্যা-ঠিক কী কারণে পত্রিকা রাখতে চাইছেন না, তা স্পষ্ট করে বলছেন না তারা।
হঠাৎ করে পাঠকরা পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দেয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন হকাররা। এভাবে চলতে থাকলে পত্রিকা বিলি করে পেট চালানো দায় হয়ে পড়বে বলে একাধিক পত্রিকার হকার জানিয়েছেন।
আসাদ মিয়া। গত ২৬-২৭ বছর ধরে রাজধানীর আজিমপুরের নতুন পল্টন এলাকার বাসায় বাসায় জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বিলি করে আসছেন। বৃহস্পতিবার সকালে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, গত ২৬ বছরে পত্রিকায় এমন ধস দেখি নাই।
আসাদ মিয়া বলেন, সাধারণ ঈদের ছুটির সময় অনেকে কিছুদিনের জন্য পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সেটি মাত্র কয়েকদিনের জন্য। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন অনেক গ্রাহক পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দিচ্ছেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন ফ্ল্যাট/বাসা বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা তাদের ডেকে আপাতত পত্রিকা সরবরাহ না করতে বলে দিচ্ছেন। তবে ঠিক কী কারণে বন্ধ করছেন, তা তারা বলছেন না।
তিনি বলেন, একসময পত্রিকা নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগত। সকাল বেলা পত্রিকা বিলি করতে আসার সময় বলতে গেলে জোর করে বেশি টাকা দিয়ে মানুষ পত্রিকা কিনে পড়ত। কিন্তু এখন পত্রিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে পত্রিকা বেঁচে জীবনযাপন দায় হয়ে পড়বে।
কারণ জানতে চাইলে আসাদ মিয়া বলেন, পত্রিকার মূল হকার তিনি নন। মালিককে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা মাসোহারা দিয়ে তিনি ব্যবসা করেন।
গ্রাহক পত্রিকা নেয়া বন্ধ করে দেয়ায় আয় রোজগার কমে যাবে। তখন মালিককে টাকা দিয়ে আর লাভ বলে কিছু থাকবে না বলে জানালেন তিনি।
এদিকে পত্রিকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে-এমন কথা হাওয়ায় ভাসছে। এ কারণেই গ্রাহকরা পত্রিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) নেতারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বৃত্তি দিয়ে বলেছেন, পত্রিকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। তবে তাদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না গ্রাহকরা।
এমইউ/এসআর/জেআইএম