স্বামীর আগুনে পুড়ে গেল রুমীর ভালোবাসা


প্রকাশিত: ০৮:২১ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভালোবেসে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেও সুখী হতে পারলেন না রুমী। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তার স্বামী। শুধু আগুন দিয়েই শেষ নয়, দগ্ধ শরীরে লবন ছিটিয়ে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে চেয়েছিল পাষণ্ড স্বামী রায়হান আলী (২৫)। অগ্নিদগ্ধ শরীর নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুযন্ত্রণায় এখন ছটপট করছেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের দিনমজুর রেজাউল করিমের মেয়ে গৃহবধূ রুমী আক্তার (১৬)।

ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একই ইউনিয়নের চাঁদ করিম গ্রামে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রুমীকে ওই দিনই রাতে প্রথমে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
 
রুমীর ফুপু বিউটি বেগমসহ স্বজনরা জানান, প্রায় তিন বছর আগে জেএসসি পরীক্ষার পর ভালোবেসে বাড়ি থেকে পালিয়ে পাশ্ববর্তী চাঁদ করিম গ্রামের তারা মন্ডলের একমাত্র ছেলে রায়হান আলীকে বিয়ে করে রুমী। বিয়ের পর থেকেই রুমীকে যৌতুকের টাকার জন্য জন্য চাপ দিতে থাকেন রায়হান। মেয়ের সুখের আশায় দিনমজুর বাবা রেজাউল করিম পঞ্চাশ হাজার টাকাও দেন রায়হানকে। এর কিছুদিন পর আরো পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য রায়হান ও তার মা-বাবা রুমীকে চাপ দিতে থাকেন। রুমী এতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।

তার বলেন, দিনমজুর বাবার অক্ষমতার কথা ভেবে শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে চলে যান রুমী। ইতোমধ্যে রুমীর গর্ভে জন্ম নেয় মেয়ে নুসরাত জাহান। নুসরাতের বর্তমান বয়স ৮ মাস।  স্ত্রী, পাঁচ ছেলে-মেয়ে এবং নাতনী নুসরাতের কথা ভেবে আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে রাজি হন দিনমজুর রেজাউল করিম। একসাথে সব টাকা দিতে না পারলেও ধীরে ধীরে পঞ্চাশ হাজার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েকে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়িতে।

কথামত গত শনিবার ৫ হাজার টাকা রায়হানের কাছে পাঠিয়ে দেন রেজাউল করিম। বাকি টাকার জন্য কিছুদিন সময় চাইলে এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রায়হান ও রুমীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পাষণ্ড স্বামী রায়হান ঘরের দরজা বন্ধ করে রুমীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, আগুন ধরিয়ে দিয়ে রুমীর মৃত্যু নিশ্চিত করতে লবন ছিটিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় রায়হান ও তার মা-বাবা।

এদিকে, রুমীর আত্মচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রুমীকে।

এ ঘটনায় রেজাউল করিম বাদি হয়ে রায়হান এবং তার বাবা তারা মন্ডল ও মা রিনা আক্তারকে আসামি করে  বৃহস্পতিবার রাতেই সাদুল্যাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
 
অগ্নিদগ্ধ রুমী জাগো নিউজকে বলেন, ভালোবেসে বিয়ে করলেও স্বামীর আগুনে পুড়ে গেল তার ভালোবাসা। পাষণ্ড স্বামীর ঘর করতে চান না তিনি। তবে একমাত্র মেয়ে নুসরাতকে কাছে পেতে চান রুমী।

রুমীর বাবা রেজাউল করিম বলেন, পঞ্চাশ হাজার টাকা দিছি। আরো পঞ্চাশ হাজার চাইছে। টাকা দিতে না পারায় রুমীকে পুড়িয়ে হত্যা করতে চাইছিল রায়হান। তিনি এ ঘটনায় রায়হানসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রুমীর কোমর থেকে গলা পর্যন্ত এবং দু’হাত পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুস্থ্য হতে সময় লাগবে।  

এসকেডি



পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।