নির্বাচন ছাড়া সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অবাস্তব

‘বাঙালি নির্বাচনমুখী। গণতন্ত্র সংকুচিত হলে দীর্ঘমেয়াদে দেশ-জাতির জন্য ক্ষতি হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সব সংকট উত্তরণ ঘটাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন ছাড়া সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অবাস্তব এবং অগণতান্ত্রিক।’
বলছিলেন লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
সম্প্রতি এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান সংসদ ও সরকারের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন। আওয়ামীপন্থি এই শিক্ষকের এমন বক্তব্যে তুমুল আলোচনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে।
জামাল উদ্দীন তার বক্তব্যে ‘যুক্তি’ দিয়েছেন, করোনা দুর্যোগের কারণে দুই বছর জাতীয় সংসদ ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। ওই সময় সরকার, জনগণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কেউই ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি এবং দেশ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি। তাই সংসদ ও সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো প্রয়োজন। তবে কোনো কারণে পাঁচ বছর সম্ভব না হলে সরকার ও সংসদের মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছর বাড়ানো যেতে পারে।
আরও পড়ুন>> সংসদের মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব ঢাবি অধ্যাপকের
এ পরিপ্রেক্ষিতেই জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মতামত নেওয়া হয় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের।
তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক জামাল যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা একান্ত তার নিজের। তবে তিনি একটি সমাবেশে এমন কথা বলেছেন, যেখানে আরও শিক্ষক ও রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। সরকারের অনেকের মধ্যেও এমন চিন্তা কাজ করে হয়তো।’
‘প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে কী বলছে? আমরা তো দেখছি সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যথাসময়ে নির্বাচনের কথা বলছেন। তারা তো নির্বাচনের পক্ষে। নির্বাচন ছাড়া সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর কথা কখনই কেউ বলতে পারেন না। সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এটি তো বুঝতে হবে। অধ্যাপক জামাল যা বলেছেন, তা অবাস্তব। যাদের সামনে বলেছেন, তারাই তো এমন প্রস্তাবে বিশ্বাস রাখেন না। তার এ বক্তব্য নিয়ে আসলে বিশেষ আলোচনা করারও কিছু নেই। তিনি রাজনৈতিক নেতাও নন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এমন বক্তেব্যের বিশেষ অর্থও থাকে। বিশেষ করে সমাজে শিক্ষকদের গুরুত্ব রয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হলেই চিন্তক হবেন এমন নয়। আমি নিজেও সব বিষয়ে কথা বলতে পারবো না। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলেই সমাজের সব বিষয়ে আমার জানা থাকার কথা নয়।’
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানা সমালোচনা আছে। অধ্যাপক জামালের প্রস্তাবের প্রতি সংহতি জানানোর মতামতও তৈরি হলো কি না সমাজে? তিনি এমন প্রশ্ন খারিজ করে দিয়ে বলেন, ‘আমরা সামরিক শাসনামলেও সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবি রেখেছি, এখনো রাখছি। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া শাসনব্যবস্থা টেকসই হতে পারে না। ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু নির্বাচন বন্ধ করে দিলে উত্তরণের সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’
আমি যদি বলি, শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। তাহলে এটি কি সম্ভব! আমার ভালো লাগা থেকে অনেক কথাই বলতে পারি। কিন্তু মানুষ কীভাবে নেবে সেটা তো আগে ভাবতে হবে। অযৌক্তিক কথা বলে আলোচনায় আসা যায়, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।’
এএসএস/এএসএ/জেআইএম