রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আটক হতে পারেন মামলার বাদী
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮শ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটক হতে পারেন ওই মামলারই বাদী জোবায়ের বিন হুদা; যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিলিং শাখার প্রধান যুগ্ম-পরিচালক (জেডি)।
অর্থ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২-১ দিনের মধ্যেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হবে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে তদন্ত কর্মকর্তা।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি যাওয়ার ৪০ দিন পর গতকালই মামলাটি করেছিলেন জোবায়ের বিন হুদা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের পদ থেকে ইতোমধ্যে সরে দাঁড়িয়েছেন ড. আতিউর রহমান। অপসারণ করা হয়েছে দুই ডেপুটি গভর্নরকেও।
বাংলাদেশ ব্যাংকেরে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র জাগো নিউজকে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাক অব দ্য ডিলিং রুম শাখায় এ ঘটনার সূত্রপাত। তাই ডিলিং রুমের প্রধানসহ আরো বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি আইটি ও প্রযুক্তি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কয়েকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখার কথাও ইতোমধ্যে শোনা গেছে।
ব্যাংকের অসমর্থিত একটি সূত্র দাবি করেছে, মঙ্গলবার মতিঝিল এলাকা থেকে ডিলিং রুম ও আইটি বিভাগের ৪ কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে সিআইডির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা জাগো নিউজকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার এজাহারে ব্যাংক চুরিরি ঘটনাটি সিআইডি তদন্ত করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করেনি।’
মঙ্গলবারের পর বুধবারও বাংলাদেশ ব্যাংকে যায় সিআইডির একটি দল। দলে ছিলেন- সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক শাহ আলম, এসএস ক্রাইম রায়হান হোসেনসহ ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এ ঘটনায় সদ্য পদত্যাগ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং অপসারিত দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিআইডি।
তদন্ত সূত্র জানায়, এত বড় একটি ঘটনা জানাজানিতে কেন বিলম্ব করা হয়েছে বিষয়টি জানতে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সিআইডির পাশাপাশি ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা থেকে ৮শ কোটি টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি ধামা চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও ফিলিপাইনের একটি সংবাদ মাধ্যমে তা ফাঁস করে দেয়। মূলত ফিলিপাইনের কয়েকটি ক্যাসিনোর মাধ্যমে এ টাকা পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, চুরি যাওয়া অর্থের কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ফিলিপাইনের অর্থ পাচারবিরোধী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে বাকি অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এআর/এনএফ/এমএস