সেমিনারের তথ্য
১৬ বছরে ছাত্রশিবিরের গুম হয়েছে ২৫৫ জন, এখনো ফেরেনি ৭ জন
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২৫৫ জন নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটির মানবাধিকার বিভাগ। এরমধ্যে সাত নেতাকর্মী এখনো ফেরেনি বলে জানিয়েছে ছাত্রশিবির।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ছাত্রশিবির জানিয়েছে, গত ১৫ বছরে তাদের ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩১২ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছিলো। মামলার সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৫টি। যার মধ্যে গ্রেফতার হয়েছিলো ৬৬ হাজার ২৪০ জন। এরমধ্যে রিমান্ডে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯ হাজার ৭২২ জন। মোট রিমান্ড ছিলো ২৯ হাজার ৯৭১ দিন।
শিবির জানায়, ১৫ বছরে তাদের আহত হয়েছিলো ৩১ হাজার ৭১৫ নেতাকর্মী, পঙ্গু হয়েছেন ৩২৪ জন, আর নিহত হয়েছেন ১০৩ জন। এছাড়াও গুমের শিকার ২৫৫ নেতাকর্মী, যাদের ৭ জন এখনো ফেরেনি। সেই সাতজন হলেন মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, মুহাম্মদ মুকাদ্দাস আলী, হাফেজ জাকির হোসাইন, জয়নুল আবেদীন, মো. কামারুজ্জামান, মো. রেজওয়ান ও শফিকুল ইসলাম।
ছাত্রশিবিরের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ছাত্রশিবির বলছে, ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিরবচ্ছিন্ন পথচলার সূচনা। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এ কাফেলার যাত্রা ছিলো বাধা-বিপত্তিতে পরিপূর্ণ। বিগত ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত বিপ্লব পর্যন্ত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ছাত্রশিবিরের সব স্তরের কর্মীদের ওপর চালানো হয়েছে অত্যাচারের চরম স্টিমরোলার। এমন কোনো হীন পদ্ধতির নির্যাতন নেই যা ছাত্রশিবিরের ওপর প্রয়োগ করা হয়নি। প্রকাশ্যে হত্যা কিংবা অপ্রকাশ্যে গুম, রাজপথে হামলা কিংবা রিমান্ডে নির্যাতন, মিছিল থেকে গ্রেফতার অথবা বাসা থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া কিছুই বাদ পড়েনি।
সংগঠনটি বলছে, আমাদের অফিস, মেস, সম্পদ সবকিছু থেকেই আমাদের উৎখাত করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এবং শফিকুল ইসলাম মাসুদকে গ্রেফতার করে দিনের পর দিন রিমান্ড নিয়ে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়। সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলামকে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগ চরমভাবে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
তারা জানিয়েছে, ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী বুয়েটের শহীদ আবরার ফাহাদকে সারারাত নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও একটি করুণ উদাহরণ। এ রকম হাজারো আবরার ফাহাদের মতো ছাত্রদের শুধুমাত্র ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হতো। ঝিনাইদহের শহীদ সোহানকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ নির্মমভাবে হত্যা করে। শুধু হত্যাই নয় তার দু-চোখ পর্যন্ত উপড়ে ফেলা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের পূর্ব পর্যন্ত বিগত ১৬ বছরে ছাত্রশিবিরের মোট ১০৩ জনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে শহীদ করা হয়। সাবেক ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি ইবনুল পারভেজ, সাবেক সাতক্ষীরা শহর সেক্রেটারি আমিনুর রহমানসহ সারাদেশে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী প্রায় ৮৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ বাহিনী।
ছাত্রশিবির জানায়, অনেক ক্ষেত্রে গ্রেফতার করতে এসে ব্যক্তিকে না পেলে পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আওয়ামী সরকারের সময় পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার করে বুলডোজার দিয়ে অনেক নেতাকর্মীর বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
আরএএস/এমএমকে/জেআইএম