চলে যাওয়ার সময় হচ্ছে, ৭৬-এ পা দিয়ে ফখরুল

৭৬ বছরে পা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার ছিল তার জন্মদিন। এই রাজনীতিবিদের জন্মদিনে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা মির্জা ফখরুলকে শুভেচ্ছা জানান। এসময় তিনি অনেকটাই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। বলেন, বয়স হয়েছে, আমার চলে যাওয়ার সময় হচ্ছে তা আপনারা মনে করিয়ে দিলেন।
এদিকে দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা ফখরুলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে যান। কিন্তু তিনি ফুল গ্রহণ করেননি।
আরও পড়ুন: পৈতৃক সম্পত্তি বেচে রাজনীতি করি: ফখরুল
বিএনপির মিডিয়া সেলের তথ্যানুযায়ী, ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ২০১১ সালের মার্চে তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
স্ত্রী রাহাত আরা বেগমের সঙ্গে মির্জা ফখরুল
এরপর ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে মির্জা ফখরুল দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে নির্বাচিত হন। এর আগে এ পদটিতে তারেক রহমান ছিলেন। তারেক রহমান এ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ লাভ করেন। একই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং মির্জা ফখরুল বিরোধীদলীয় মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমে পরিচিতি পান।
আরও পড়ুন: মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে : ফখরুল
১৯৭২ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে ঢাকা কলেজে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন মির্জা ফখরুল। পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। অন্যান্য সরকারি দায়িত্বের মধ্যে মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ সরকারের পরিদর্শন ও আয়-ব্যয় পরীক্ষণ অধিদপ্তরে একজন নিরীক্ষক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী এস এ বারীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বারী পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। বারী পদত্যাগ করার পর মির্জা ফখরুল তার শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যান। এ সময় তিনি ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) একজন সদস্য ছিলেন এবং সংগঠনটির এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মির্জা ফখরুল তার শিক্ষকতা পেশা থেকে অব্যাহতি নেন এবং সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
আরও পড়ুন: দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে: মির্জা ফখরুল
১৯৮৮ সালের ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরশাদের সামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যখন দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে, তখন মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে মির্জা ফখরুল বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে এ সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
১৯৯১ সালে পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করে পরাজিত হন মির্জা ফখরুল। এরপর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
একই বছর নভেম্বরে বিএনপি সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় প্রথমে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন: সব অন্যায়ের জবাব দিতে হবে, পুলিশের উদ্দেশে ফখরুল
মির্জা ফখরুল ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই সঙ্গে ঠাকুরগাঁও-১ ও বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন। এরপর তিনি বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচিত হন। পরে শপথ গ্রহণ না করায় নির্বাচন কমিশন তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে এবং সেখানে উপ-নির্বাচন হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে মির্জা ফখরুল বিবাহিত এবং দুই মেয়ের বাবা। বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে সেখানেই শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত। ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। বর্তমানে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কেএইচ/জেডএইচ/জিকেএস