‘আমরা সবাই এতিম হয়ে গেছি’, শোক ও শপথে বিএনপির নারীনেত্রীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

মৃত্যুর খবরটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না কারও। দীর্ঘ ৩৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মঙ্গলবার থেমে গেলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জীবন। মুহূর্তে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। দল-মত নির্বিশেষে শোকবার্তার স্রোত বইতে থাকে। কিন্তু গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বোঝা যাচ্ছিল—এই শোক শুধু রাজনৈতিক নয়, গভীরভাবে ব্যক্তিগতও।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর গড়াতেই গুলশানের কার্যালয়ের সামনে বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের ভিড়। কার্যালয়ের ভেতরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে চলছিল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক। আর ঠিক বিপরীত দিকের সড়কের একাংশে—চুপচাপ বসে পড়েন বিএনপির নারীনেত্রীরা। কারও হাতে তসবিহ, কারও চোখে অশ্রু। সেখানেই শুরু হয় দোয়া ও মোনাজাত।

ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা দলের সভাপতি রুনা লায়লার নেতৃত্বে বিভিন্ন ইউনিটের নারীনেত্রীদের এই জমায়েত। তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনায় কালেমা খতম ও দোয়া মাহফিল চলছে।

কথা বলতে গিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন গুলশান মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মায়া খান। থেমে থেমে বলেন, আমি এতিম হয়ে গেছি। আমরা সবাই এতিম। শুধু বিএনপি নয়—পুরো জাতিই আজ এতিম।

তিনি বলেন, এই দেশে একজন নারী নেতৃত্বের কারণে আমার মতো লাখো নারী সাহস পেয়েছে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী—একজন নারী—আর তিনি আমাদের নেত্রী। এটা আমাদের বুকের ভেতর আলাদা শক্তি জোগাতো। আজ সেই মানুষটা নেই।

মায়া খানের কণ্ঠে শোকের সঙ্গে মিশে থাকে দীর্ঘ লড়াইয়ের গল্প। তার ভাষায়, গণতন্ত্র ফেরাতে গিয়ে তিনি বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জেল, গৃহবন্দিত্ব—কিছুই বাদ যায়নি। আজ যখন মনে হচ্ছিল, সংগ্রামের ফল ঘরে তোলার সময় এসেছে, ঠিক তখনই তিনি চলে গেলেন।

রূপনগর থানা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী আক্তারের চোখে তখন আর অশ্রু আটকে রাখা যায় না। তিনি বলেন, কথা বলতেই পারছি না। শুধু এটুকু বলতে চাই—তিনি কখনো আপস করেননি। আমাদেরও শিখিয়েছেন, অন্যায়ের সঙ্গে আপস করা যাবে না।

শিল্পী আক্তারের কথায় উঠে আসে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরের দিকটি। তিনি বলেন, এই শিক্ষা শুধু রাজনীতিতে নয়, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও কাজে লেগেছে। আমরা সাবলম্বী হতে শিখেছি, নিজের অধিকার বুঝেছি। আজ তার চলে যাওয়ার দিনে একটাই প্রতিজ্ঞা—যতদিন বাঁচবো, কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবো না।

একই সুরে কথা বলেন কেন্দ্রীয় মহিলা দল দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুন নাহার জয়া। দৃঢ় কণ্ঠে তার ঘোষণা,আপস করা যাবে না—কোনোভাবেই না। যতদিন আমরা অন্যায়ের সঙ্গে আপসে যাব না, ততদিন তিনি আমাদের মাঝেই বেঁচে থাকবেন।

গুলশানের সেই সড়কের একাংশে তখন শোক আর শপথ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। চোখের জল মুছেও নারীরা যেন নিজেদের ভেতর নতুন করে দৃঢ় হচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু তাদের কাছে শুধু এক নেত্রীর বিদায় নয়—এক আপসহীন রাজনীতির উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে চলার কঠিন।

কেএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।