‘আইজ কামাই বেশি হইলে কাইল কাজে যাইবো না’

ওই দেখতো কি..., আটকাইলো মনে লয়?
কিছুই না, কচুরি শেওলা টাইপ কিছু হবার পারে
ধুর, একটাও মাছ নাইকা...
আরো কিছুক্ষণ বইসা দেখ, যদি লাইগা যায়...
রাজু আর রনি দুই বন্ধু ক্লাস সিক্সে পড়ে। থাকে আঁটিবাজার। রাজু সেই বিকেল থেকে শুকিয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গার পাড়ে বঁড়শি ফেলে বসে আছে, সাথে রনি।
বুজছোস রনি, বিয়ান বেলা মা কামে যাওনের আগে কইছে, কাইল বলে হগগলের ছুটি, আইজ তো স্কুলেও কইলো কাইল ছুটি। মে দিবস, সরকারি ছুটি। মায়েরও ইচ্ছা ছুটি নেওনের, এর লাগি মাছ ধরবার আইছি, কত্তদিন মাছ খাই না। যদি বড়শীত কিছু আটকাইতো, তাইলে এট্টু মাছের সালুন দিয়ে ভাত খাইতাম, প্রত্যেকদিন আলুভর্তা আর মরিচ পোড়া খাইতে ভালো লাগে না। জানোস মায়ে পাকসাক ভালোই করবার পারে, কিন্তু টেকা নাইকা বাজার সদাই করার। যা কামাই করে ঘর ভাড়া দিতেই যায়গা, হের ওপর আব্বায় পা ভাইঙ্গা বাসায় বসা, ওষুধপাতি লাগে, বড় বোন আর আমারে মা পড়ালেখা করায়, মার খুব স্বপ্ন আমরা পড়ালেখা কইরা চাকরি করমু, আমগো অভাব দূর হইয়া যাইবো। ওই এইবার মনে লয় কিছু ধরা পরছে, দেখ...
কচু, এত কতা কইলে মাছ আইবো! চুপ থাক দেখি, আর কতা কইস না।
রাজুর জন্য রনির মনের মধ্যে কষ্ট হয়, গত বছর জুলাইতে রাজুর বাপের পায়ে পুলিশের গুলি আইসা লাগে, জানে বাইচা গেলেও বাম পা ডা কাইটা ফালায় দেওন লাগছে, এরপর থাইকা রাজুগো সংসারে অভাব আর অভাব, রাজুর মা তিনডা বাড়িত ছুটা কাম করে, এক বইন, সে সিলাইয়ের কাম করে, তাও কুলাইতে পারে না। হসপিটাল থাকার সময় সরকার থাইকা চিকিৎসা করাইছে। এরপর বাড়িত আসার পর আর কারো কোনো পাত্তা নাইকা। রনিদের অবস্থাও তেমন একটা ভালো না। কিন্তু দুইডা ভাত ডাল মাছ তারা অন্তত খাইতে পারে, রনির বাপ মা দুজনেই কাম করে, বাপ সিএনজি চালায়, মা গার্মেন্টসে। কিন্তু রনির ছোট ভাইডারে রাখনের সমস্যা, রনির দেখা লাগে। মাঝে মধ্যে একলাও থাকে, এবার ভাডা ক্লাস থ্রিতে উঠছে। ছোট ভাই রায়হানের জন্যও রনির অনেক মায়া। বুড়িগঙ্গার ওই পাড়ে আঁটি বাজার, সেখানকার এক বস্তিতে ছাপরা ঘরে ওরা ভাড়া থাকে, রনিদের এক গলি পরেই রাজুরা থাকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে রনি মনে মনে বললো, ‘ওহ আল্লাহ, রাজু যেন আইজ একটা হইলেও মাছ পায়, বেচারা কত শখ করছে এট্টু মাছ খাইবো।’ মুখে বললো, ওই রাজু তু্ই থাক, আমি বাড়িত যাইগা, রায়হান একলা আছে রে ঘরে, ঘুমায়, ওরে থুইয়া একলা আইছি জানলে মা বকবো, মায়ের গার্মেন্টস থাইকা আওনের সময় হইয়া আইছে।
পাইছি পাইছি, দেখ রাজু পাইছি, কথা না কইয়া সত্যি মাছ পাইছি... (রাজুর বড়শীর মাথায় সত্যি একটা ১০ ইঞ্চি সাইজ রূপালী মাছ চক চক করছে, ওদের দুজনেরই চোখ খুশীতে ঝলমল করছে) আইচ্ছা তু্ই যা, আমি আর কয়েকবার চেষ্টা কইরা আইতাছি।
রনি ওঠে ছাপড়া ঘরের দিকে এগোলো, আইসা দেখে ছোট ভাই রায়হান কানতাছে। সে তাড়াতাড়ি রায়হানরে জড়ায় ধইরা কইলো কি হইছে ভাই, কান্দোস কেন? তু্ই না ঘুমায় ছিলি?
ঘুম থাইকা উইঠা কাউরে না দেইখা ডর লাগছে, বইলা আবার ফুঁপিয়ে কান্দা।
ও, আমি তো ঘরের সামনেই ছিলাম বেশি দূর যাই নাই। মারে কইস না কইলাম, মারবো। কি খাবি ক? ঘরে মুড়ি, বিস্কুট আছে, দিমু?
রায়হান মাথা নেড়ে না বললো...
টিভি দেখবি? চল চালু করি...
নাজ ঘরে ঢুকলো, দুই ছেলেকে দেখে খুশী মুখে বলে উঠলো, বাপজানেরা আমার, কইলজার টুকরা দুইটা, কি করতাছো? দেখো আমি তুমরার জন্য কি আনছি, বলে হাতের ব্যাগটা মেঝেতে রেখে ভেতর থেকে দুইটা জুসের বোতল বের করলো, রনি আর রায়হান দৌড়িয়ে এলো জুসের বোতল দুইটা নিতে, প্লাস্টিক এর পাইপ দিয়ে জুস খেতে খেতে রনি জিজ্ঞাসা করলো,
মা, তোমার কাইল কাজ আছে?
না রে বাবা, অনেক কষ্টে ছুটি ম্যানেজ করছি, কাইল আমার ছুটি, কামে যামু না।
কি মজা, কি মজা, মার কাইল কাম নাই, আমারো স্কুল নাই, মা আব্বার কাম আছে? না থাকলে আমরা ঘুরতে যামু, রায়হান বললো।
তোর বাপের কথা জানি না, আমি কামে গেছি কোন বিয়ানবেলা, হে তে তো গেছে দুপুর বেলা, তোগরে ইস্কুল দিয়া, গা ধুইয়া দুইডা ভাত মুখে দিয়া হেরপর গ্যারাজ থিকা সিএনজি লইয়া বাইর হইছে।
কেন আব্বার লগে তোমার মোবাইল এ কতা হয় নাইকা?
হইছে, কইছে ফিরতে রাইত হইবো, আইজ কামাই বেশি হইলে কাইল কাজে যাইবো না।
এদিকে রাজু আরো একটা মাছ পাইছে, এইটা অবশ্য আগেরটার চেয়ে ছোট, সে মাছ চেনে না, পুঁটি মাছের চেয়ে এট্টু খানি বড়, তাও সে মহাখুশী। ইসস যদি আর দুইটা পাইতো, পুঁটি হইলেও হয়...আর দুইবার বড়শী ফালাইয়া ঘরে যাইবো ঠিক করলো, কার থাকি জানি শুনছিল সন্ধ্যা বেলায় মাছ উঠে, কিন্তু কিছু উঠলো না। আন্ধার হইয়া যাইতাছে, রাজু মাছ দুইটা কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে নিয়ে রওনা দিলো। বাড়ি ফিরে দেখে তার বোন রত্না সেলাই করছে, সে ক্লাস এইট এ পড়ে।
হাসি মুখে রাজু বললো, রত্নাপা আমি দুইডা মাছ পাইছি, ভাত মাছ ভাজা খামু কত্ত দিন পর, মা’রে মোবাইল কইরা কইবি দুইডা ডাইল কিননা আনতে, ভাত, ডাইল, মাছ ভাজা খামু, ইসস কি মজা...
আহারে পোলাডা আমার, কত্ত দিন ভালো মন্দ খাইবার পারে না, ওই দিন যদি দুইডা ছাত্ররে না বাঁচাইতে না যাইতাম, তাইলে আইজ আমার এই হালত হইতো না বলে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো আজিজ মিঞা।
আব্বা কাইন্দো না তো, বাঁইচা আছো, এইডাই বড়, কত মানুষ মরছে সেই সময়, এই বুড়িগঙ্গা নদীতেই তো কত্ত লাশ ভাইসা উঠছিলো..., চল রাজু, মাছ দুইডা ধুইয়া কুইটা রাখি।
শাবানা তিন নম্বর বাড়ির কাজ শেষ করলো, আজ সময় বেশি লাগছে, বাড়ির খালাম্মার বড় মাইয়া, মাইয়া-জামাই, নাতি, নাতনী আইছে বিদেশ থাইকা...হের জন্য রান্ধন বেশি।
এমনিতে তেমুন কোনো কাম কাজ নাই, দুইডা মানুষের রান্দা, সবডি পোলা পান বিদেশ থাকে।
খালাম্মা, আমি যাইগা? সন্ধ্যা হইয়া গেছে, পোলাপান দুইডা আমার জন্য মুখ চাইয়া বইসা থাকে।
হ্যাঁ যাও, যাওয়ার আগে রান্নাঘর এ তোমার জন্য দুইটা আইসক্রিম এর বক্স রেখেছি, একটায় মুরগীর মাংস, আরেকটায় কাতলা মাছ ভুনা আছে, নিয়ে যেও, আর কাল একটু আগেই এসো...
শাবানার চোখে পানি এসে গেলো, পোলা মাইয়া দুইডা কত্ত দিন পর মুরগীর গোশত খাইবো! বক্স দুইডা একটা ব্যাগ ভরে হাতে নিয়ে বললো, একটা কতা কইবার চাইছিলাম খালাম্মা...
বলো
আম্মু, বুয়া কি এখনো আছে? এই চকলেটগুলো তাকে দিও (নিশা, মিরানা রহমান এর মেয়ে বলতে বলতে এলো)
কাইল না আসি কামে খালাম্মা? মে দিবস, একটা দিন একটু পোলাপানরে নিয়া থাকবার চাইছিলাম।
এইটা কি বল্লা বুয়া, মেয়েটা আমার কত দিন পর দেশে আসলো, কত কাজ, রান্না এখন, এই সময়ে ছুটি চাও! মে দিবস আবার কি? ঈদে না ছুটি কাটাইলা দুই দিন? আজব তো... না, না, কাল আসতে হবে।
ইসস.. আম্মু থামো তো, নিশা চকলেটগুলো শাবানার হাতে দিয়ে বললো, তোমার ছেলে মেয়েকে দিও, আর তোমার জামাই এর চিকিৎসা করাও, খরচ যা লাগে আমি দেব, কালকে আসতে হবে না, পরশু এসো।
এসব কি বলিস নিশা, ও না এলে কাল আমি কীভাবে কী করবো? বাসায় চারটা ভিনদেশি মানুষ, একেকজন কি খায় না খায়, এই বয়সে আমি এত কিছু একা পারি? মিরানা রহমান চিৎকার করে উঠলো।
আম্মু, চুপ করবা প্লিজ, আজকেই তো কত কিছু রান্না হয়েছে, এগুলো রাতে খেয়ে শেষ করা সম্ভব? আমরা কি হাতি? কালও এসব খাওয়া যাবে, আর সকালে তো ব্রেড বা সিরিয়াল খাবে সবাই, ফ্রোজেন পরাটা আছে। রাতে বাইরে থেকে খাওয়া আনবো বা সবাই বাইরে যেয়ে খাবো। আর আমরা ভিনদেশি? এই দেশে ২৪ বছর কাটিয়ে বিদেশ গেছি, এখন আমি ভিনদেশি?
আহা, আমি তো তোদের জন্যই বলছি, নাতি নাতনি, জামাইরা বাসী খাবে?
বাসী, খাবার বাসী হবে কেনো? তোমাদের মন বাসী এজন্য এভাবে বলো, আমরা বিদেশে কীভাবে এত কাজ করি? একবারে বেশি রান্না করে রাখি বলেই তো অন্য কাজগুলো করতে পারি, আর আজকের করা রান্না আমরা কাল খেতে পারবো না? এসব কি বলো তুমি!
মে দিবস বাংলাদেশ এ সরকারি ছুটি, আর তুমি বুয়াকে একদিন ছুটি দিতে পারবা না? ২০২৫ সালেও প্রতিদিন একগাদা রান্না করে সময় নষ্ট করো, খাবার নষ্ট করো, ওই দিকে দেশের কিছু মানুষ ডাস্টবিন থেকে খাবার খায়। আবার তোমরাই দেশের উন্নতি চাও! কীভাবে উন্নতি হবে? সংস্কার, উন্নয়ন, সচেতনতা পরিবার থেকে শুরু করতে হয়, প্রতিটা পরিবার উন্নত, সচেতন হলে দেশ এমনিতেই উন্নত হবে।
এই যে আমি ভোর ৬টায় উঠে কাজ শুরু করি বাসার কাজ, অফিসের কাজ, সংসার, সামাজিকতা, বাচ্চা ইত্যাদি সব কাজ শেষ হতে প্রায় রাত ১০/১১টা বাজে। হিসেব করে দেখো সপ্তাহে ৫ দিন তোমার এই বুয়ার চেয়ে আমি বেশি ঘণ্টা কাজ করি। এজন্য কী আমার দাম কমে গেছে না কি! বরং আমি সুস্থ আছি। আমিও তো রান্না একদিনে ৩/৪ দিনেরটা করে ফেলি, এছাড়া সময় কই?
বুয়া তুমি যাওতো, পরশু দেখা হবে আবার তোমার সাথে।
জি আফা, আমি যাই, খালামা সালাম... শাবানা বেরিয়ে গেলো।
মিরানা মুখ ভার করে তাকিয়ে রইলো শাবানার যাওয়ার দিকে, কিন্তু নিশাকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
তাজুল মিঞা বাসায় ঢুকলো, দেখে রনি-রায়হান টিভি দেখে, নাজ রান্না করে।
ও বউ কি পাক করো? দুইনার খিদা লাগছে, খাওন দাও।
দিতাছি, কাল কামে যাইবা?
হ, কেন?
কইছিলা তো আইজ ভালো কামাই হলে যাইবা না।
কামাই ভালো হয় নাই, কাইল বন্ধ, আইজ দুনিয়ার জাম, সিএনজি আগায় না, আবার কাইল মিছিল হয় কি না কে জানে! গত বছর পহেলা আগস্ট মাসে মিছিল কইরা আইসা কিছু মাঝ বয়সী লোক আতকা সবকিছু ভাঙচুর করছিল। তখন সিএনজি ও ভাঙছে, সরকার নড়ে না, নড়লে পলায় আর আমগো লাগান গরিবের কপাল পোড়ে। সাড়ে সাত হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া লাগছিলো মহাজনরে, কিন্তু ক’ আমার কি দোষ?
হ, সেইটাই, কইয়া তো আইসি কাল আমু না কামে, কে জানে পরশু গেলে শোনা লাগে কি না বেতন কাইট্টা রাখবো। লাত্থি সবতে গরিবের পেটে দেয়, সরকার থাকলেই কি, গেলেই কি, আমগো দরকার টেকা আর শান্তি।
আইচ্ছা, একটা কথা কই এট্টু শুনো, কাইল সিএনজি নিয়া রাস্তায় যাওন লাগতো না, আমারও ছুটি, পোলাপান ঘুরতে যাইতে যায়, চলো এট্টু ঢাকা শহর ঘুইরা দেখি, ঈদে তো দেশ এ গেছিলাম।
রনি আর রায়হান ও দৌড়ে আসলো, রনি বললো, হ, বাজান চলো... কাইল আমরা ঢাকা শহর ঘুরমু।
ঠিকই, ঢাকাত তো আমরা খালি কামলা খাটি, কুনোদিন ঘুরি নাইকা, কাল ঘুরতে যামু, নাজ বললো।
মা তুমি মাছ গোশত পাক করছো? ইস কি সোন্দর গন্ধ। একটা ছোট্ট বাটিতে দুই টুকরা মাংস দিবা? রাজুরে দিমু, ওয় কইতেছিলো কবে গোশত খাইছে, ভুইলা গেছে, ওদের অনেক অভাব।
ইসস নিজে খাইতে পারে না, অন্যরে বিলায়...
না রে বউ, রনিরে বাটিতে তুইলা গোশত দাও, দিয়া আসুক রাজু কে। রিজিকের মালিক আল্লাহ, রাজুর বাপের পা কাটা না পরলে ওরাও দুইটা খাইতে পারতো। আমার সিএনজি না ভাইঙ্গা যদি পা ভাঙতো, একবার চিন্তা করে দেখ, তখন কি হইতো।
ও আল্লাহ মাফ করো, হ’ রাজুর মায়ের খুবই কষ্ট হইছে, বেডি খুবই কষ্ট করে, ওই রনি ধর নে বাটি, রাজুগো ঘরে দিয়া আয় সাবধানে, ফালাইস না।
শাবানা খুশী মনে বস্তির ঘরে ঢুকলো, রাজু আর রত্না দৌড়িয়ে এলো মায়ের কাছে...
মা আমি আইজ বড়শি দিয়া দুইডা মাছ ধরছি, ভাইজা দিবা, কতদিন ভাজা মাছ খাই না.. রত্না আপায় ধুইয়া কাইটা রাখছে, তোমার যেন কাম থাইকা আইসা কষ্ট না হয়...
শাবানা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো, হ’ রে বাবা ভাইজা দিমু, দেখ তগো লাইগা কি আনছি, খালাম্মা মুরগীর তরকারি, কাতলা মাছের ভুনা দিসে, আর উনার মেয়ে বিদেশ থাইকা আইছে, দেখ কত চকলেট দিসে...আমি দুইডা ভাত ফুডাই, বেশিক্ষণ লাগতো না, তোর ধরা মাছও ভাইজা দিতাছি
রাজু আর রত্না চকলেট দেখে খুশিতে আত্মহারা...
শাবানা ভাত বসিয়ে আজিজ মিয়ার পাশে গিয়ে বসলো, তুমি কেমুন আছো, খালাম্মার মাইয়া কইছে তোমার চিকিৎসা করাইতে, হে টেকা দিব। আইজ মাইয়া আয়নের খুশীতে এত্তগুলো খাওন দিসে, ইসস কত্তদিন পর পোলা মাইয়া দুইডা ভালোমন্দ খাইতে পারবো, ঐ রত্না তোর বাপরে দুইডা চকলেট দিয়া যা, আমি যাই ভাত ফোটার গন্ধ আইছে, ভাত নামাইয়া মাছ দুইটা ভাইজা দেই...
আমার পা কি আর ঠিক হইবো! তোর জন্য আমার মায়া লাগে রে, আমি সারাদিন বইসা থাকি, পুরা সংসার তোর ঘাড়ে, পোলা মাইয়ার ভবিষ্যত সব...
রত্না চকলেট নিয়ে আসলো, মা, তুমিও একটা খাও... , তোমার কাইল কাম আছে? আমগো স্কুল বন্ধ।
না, আমারো কাম নাই, ছুটি, মে দিবস।
কি মজা, আমরা তাইলে কাইল সারাদিন ঘরে বইসা গপ সপ করমু আর ঘুমামু।
শাবানা চকলেট নিয়া চোখ মুছতে মুছতে উঠে গেলো... তার কি সংসার কি হইয়া গেছে...
মাছ ভাঁজতে ভাঁজতে দরজায় টোকা, দেখতো রাজু, এত রাইতে কে আইলো?
মা, রনি আইছে গোশত নিয়া, হের বাপ মা পাঠাইছে।
হ খালা, আমি রাজুর জন্য আনছি...
রাজু শাবানার কাছে দৌড়ে এসে কানে কানে বললো, ‘মা,দুই টুকরা মাছ ভাজা রনি রে দেই? হে মাছ ধরার সময় আমার লগে ছিলো
হ বাবা, দাও, এই যে নাও...শাবানা একটা বাটিতে ছোট টুকরার মধ্যে থাইকা দুইডা বড় পিস মাছ ভাজা দিলো।
রাজু হাসি মুখে রনিকে মাছ ভাজার বাটি দিয়ে বললো, ওই যে বড় মাছটা, তু্ই লগে ছিলি, তু্ই চইলা যাওনের পর আর একটা ছোট মাছ পাইছিলাম, আর কিছু পাই নাইকা।
তাও ভালো, পাইছোস তো, কাইল সকালে খেলতে আইবি, বিকেলে আমরা ঘুরতে যামু ঢাকা শহর।
হ, আমু নে ১০টার দিকে, নদীর পাড়ে...
আল্লাহ পাক, পোলা দুইডারে তুমি হেফাজত কইরো, ঈমান দিও,শাবানা আজ অনেক দিন পর হাসলো, কাইল মে দিবস, কাম নাই। শান্তি আর শান্তি, আজিজ মিঞার পা এর জন্য ওরা কোথাও যাইতে পারবো না, তাও শান্তি, কত্তদিন পর মানুষটার সাথে গা ঘেইসা বইসা থাকতে পারবো।
এমআরএম/জেআইএম