শেখ মেহেদীর বোলিং বৈচিত্র্য নিয়ে ফাহিম
বাইরে থেকে বোঝা যায় না, ব্যাটাররা ঠিকই টের পান
মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো ‘ইয়া বড়’ টার্ন তার নেই। সাকলাইন মুশতাকের মতো বৈচিত্র্যও খুঁজে পাবেন না। হরভজন সিং, সাইদ আজমলের সঙ্গেও তার তুলনা চলে না। এমনকি স্বদেশি মেহেদী হাসান মিরাজের চেয়েও তার বল কম ঘোরে।
এতকিছুর পরও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের এক নম্বর অফ-স্পিনার শেখ মেহেদী। শুধু তাই নয়, ২০ ওভারের ফরম্যাটে শেখ মেহেদীর কার্যকরিতাও বেশ।
ম্যাচ পিছু শেখ মেহেদীল উইকেট অনেক বড় বড় বোলারের চেয়ে বেশি। মাঝে অল্প কিছু সময় কিছুটা নিষ্প্রভ থাকলেও গতকাল বুধবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে শেখ মেহেদী দেখিয়ে দিলেন, নিজের দিনে তাকে সামলানো কতটা কঠিন। জানিয়ে দিলেন, বল লাটিমের মতো না ঘুরলেও তাকে খেলা সহজ না।
সেজন্যই বুধবার রাতে এই অফব্রেক বোলারের ঘূর্ণিতে নাকাল হয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা। ৪ ওভারে এক মেইডেনসহ মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট দখল করে শেখ মেহেদীই লঙ্কানদের ১৩০ রানের ঘরে বেঁধে ফেলতে রেখেছেন অগ্রণী ভুমিকা।
বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ৪৭ বলে ৭৩ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়েছেন। অধিনায়ক লিটন দাস খেলেছেন ২৫ বলে ৩২ রানের মাঝারি ও সহায়ক ইনিংস। তাওহিদ হৃদয়ও ২৫ বলে ২৭ রানে নটআউট থেকে তানজিদ তামিমের সঙ্গে দল জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে ফিরেছেন সাজঘরে।
কিন্তু তারা কেউ ম্যাচসেরা নন। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটি উঠেছে শেখ মেহেদীর হাতেই। কারণ তিনিই যে বাংলাদেশের জয়ের রূপকার, সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টাইগারদের সাফল্যের স্থপতি। তার ওই স্পিন জাদুতেই কুশল পেরেরা, পাথুম নিশাঙ্কা, লঙ্কান ক্যাপ্টেন চারিথ আসালঙ্কা ও দিনেশ চান্দিমালের মতো চার লঙ্কান ব্যাটিংস্তম্ভ সাজঘরে ফিরেছেন দ্রুত।
শেখ মেহেদীর বোলিং তোড় সামলাতে না পেরেই লঙ্কানরা ১৩২ রানে থেমে গিয়েছে। তাতেই বাংলাদেশের সিরিজ জেতা সহজ হয়েছে। তাই সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন, শেখ মেহেদীর বোলিং ম্যাচ তথা সিরিজের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে।
অনেকের মত, শেখ মেহেদী সব সময়ই বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে নতুন বলে ভালো বল করতে পারেন। পাওয়ার প্লেতে তার বোলিং কার্যকরিতা ও সাফল্য দুটিই বেশি। আর লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইনআপে যেহেতু কুশল পেরেরা ও চারিথ আসালঙ্কার মতো দুজন বাঁহাতি ব্যাটার ছিলেন, তাই শেখ মেহেদীকে খেলানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশনের প্রধান নাজমুল আবেদিন ফাহিম বুধবার অঘোষিত ‘ফাইনালে’ শেখ মেহেদীকে খেলানোয় টিম ম্যানেজমেন্টের প্রশংসা করেছেন।
ফাহিমের কথা, ‘টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ। তারা একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই কন্ডিশনে শেখ মেহেদী কার্যকর হতে পারে, এই চিন্তা করে তাকে খেলানোর জন্য আমি টিম ম্যানেজমেন্টের দুরদর্শিতার প্রশংসা করছি। আমার চোখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক, রূপকার শেখ মেহেদী।’
শেখ মেহেদী শুধু বাঁহাতিদের বিপক্ষেই ভালো করেন এবং লাইন বোলিং করেই সফল, তা মানতে নারাজ দেশের ক্রিকেটের এই বিশেষজ্ঞ।
ফাহিমের মূল্যায়ন, ‘শুধু বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষেই সাফল্য বেশি শেখ মেহেদীর, এমনটা চিন্তা করলে ভুল হবে। মেহেদী এমন একজন বোলার, যাকে মূল্যায়ন করতে গেলে বলতে হবে, শুধুই বাঁহাতি নয়, শেখ মেহেদী ডানহাতিদের বিপক্ষেও অনেক কার্যকর।’
পরিসংখ্যানও তাই বলবে। বুধবারের ম্যাচে দুই বাঁহাতি লঙ্কান কুশল পেরেরা ও চারিথ আসালঙ্কার পাশাপাশি দুই ডানহাতি পাথুম নিশাঙ্কা ও দিনেশ চান্দিমালও শেখ মেহেদীর বলেই আউট হয়েছেন।
ফাহিম মনে করেন, এ মুহূর্তে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের যত বোলার আছে, তার মধ্যে পাওয়ার প্লেতে শেখ মেহেদীর কার্যকরিতা অনেকের চেয়ে বেশি। সেটার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
বিসিবি পরিচালকের সোজা কথা, ‘একজন স্পিনারের জন্য পাওয়ার প্লেতে বোলিং করা সহজ নয়। কারণ তখন প্রায় ৯০ ভাগ ফিল্ডার থাকেন ৩০ গজের ভেতরে। তাদের মাথার ওপর দিয়ে তুলে মারতে পারলেই রান করা যায়। সে কারণে পাওয়ার প্লের বোলিংটা হওয়া চাই মাপা ও নিখুঁত। সঙ্গে বৈচিত্র্যও থাকা দরকার।’
কোচ ও অ্যানালিস্ট ফাহিম মনে করেন, শেখ মেহেদীর সেই বৈচিত্র্যটা আছে।
ফাহিম বলেন, ‘পাওয়ার প্লেতে বোলিং করার জন্য যে সূক্ষ্ম বৈচিত্র্য দরকার, সেটা শেখ মেহেদীর মধ্যে আছে। বাইরে থেকে হয়তো টের পাই না, কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ঠিকই টের পায়। মেহেদীর বলের গতি-প্রকৃতিতে আছে বৈচিত্র্য। তাকে বুঝতে পারা সহজ নয়। গতি, লাইন-লেন্থেও আছে বৈচিত্র্য।’
‘পাওয়ার প্লেতে বোলিংয়ের জন্য শেখ মেহেদীর যে বোঝাপড়া, সেটা তার অনেক বড় অস্ত্র। সেটাই মেহেদীর বোলিংয়ের বিশেষত্ব। আমার মনে হয় পাওয়ার প্লেতে আমাদের যারা বোলার আছে, তাদের মধ্যে সে একজন অন্যতম। আমার ধারণা, প্রায় সব উইকেটেই সে কার্যকর। আজকেও মেহেদী প্রমান করে দিল, পাওয়ার প্লেতে তার বোলিং কতটা কার্যকর’- যোগ করেন ফাহিম।
এআরবি/এমএইচ/এএসএম