২০১১ বিশ্বকাপ নির্বিঘ্ন করতে আইসিসিকে চিঠি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:২৫ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকলেও ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি বিজয়ী ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া

‘আপোষহীন জননেত্রী’, ‘দেশনেত্রী’— এই অভিধাগুলো তার নামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ।

গণতন্ত্র রক্ষা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে স্বৈরাচারের সঙ্গে আপোষে না গিয়ে তিনি জনমনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনের মানুষ, বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা তাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করছেন। তবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে স্মরণ করছেন ভিন্ন এক দৃষ্টিতে— তার ক্রীড়া অনুরাগ, বড় ক্রীড়া আসর আয়োজনে ভূমিকা এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেওয়া পৃষ্ঠপোষকতার জন্য।

বলার অপেক্ষা রাখে না, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম বড় ক্রীড়া আয়োজন ছিল ১৯৯৩ সালের সাফ গেমস (পরবর্তীতে এসএ গেমস)। সেই গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দক্ষিণ এশীয় গেমসের ইতিহাসে অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচিত। পুরো আয়োজনই ছিল অত্যন্ত সফল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া এই গেমস সফল করতে কার্যকর ভূমিকা রাখেন এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেন।

এরপর তার শাসনামলে ২০০৪ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। সফল আয়োজক হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমেই রাজধানীর অদূরে ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। ওই আসরে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার প্লেট ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফতুল্লায়। এই স্টেডিয়াম নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উল্লেখযোগ্য সহায়তা ছিল।

এগুলো ছিল প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার ভূমিকার কথা। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবেও যে তিনি দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসর নির্বিঘ্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন— সে তথ্য অনেকেরই অজানা।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরতাল ও অবরোধ একটি পরিচিত চিত্র। সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিরোধী দল সাধারণত এসব কর্মসূচি দিয়ে থাকে। বিশেষ করে কোনো সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে এমন কর্মসূচির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ৯০ পূর্ববর্তী সময় এবং এরপর গণতান্ত্রিক সরকারের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ করার বছর আগে থেকেই বেশির ভাগ হরতাল, অবরোধ পালিত হয়েছে। অতীতে বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধে দেশ অচল হয়ে পড়ার নজিরও রয়েছে।

ঠিক এমন এক রাজনৈতিক বাস্তবতায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায়। সে সময় বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এর প্রধানকে একটি চিঠি দিয়ে আশ্বস্ত করেন যে, ‘বিশ্বকাপ চলাকালে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি— হরতাল বা অবরোধ—দেবে না, যাবে বিশ্বকাপের খেলা ভন্ডুল হতে পারে। একই সঙ্গে টুর্নামেন্ট আয়োজন নির্বিঘ্ন রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করবো।’

বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে আইসিসি কর্তৃপক্ষ অবগত ছিল। বেগম খালেদা জিয়ার এই চিঠি তাদের আস্থা আরও দৃঢ় করে এবং তারা নিশ্চিত হয় যে বিশ্বকাপ আয়োজন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ব্যাহত হবে না।

২০১১ সালে বিসিবির উচ্চপদে দায়িত্বে থাকা প্রবীণ ক্রিকেট সংগঠক মাহবুব আনাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিরোধী দলীয় নেত্রী হয়েও বেগম খালেদা জিয়া আইসিসিকে লিখিতভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে, বিশ্বকাপ চলাকালে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে না। তার দল বিএনপি বিরোধী দলে থাকলেও বিশ্বকাপ আয়োজনকে সাফল্য মন্ডিত করতে সম্ভাব্য সব রকম সহযোগিতা করবে।’

বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকা মাহবুব আনাম আরও জানান, সেই ঐতিহাসিক চিঠিটি তিনি এখনো যত্নসহকারে সংরক্ষণ করে রেখেছেন।

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।