আল-আমিন, অন্তরা, প্রিয়াদের সঙ্গে তৈরি হচ্ছে একঝাঁক তারকা

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২১

সাউথ এশিয়ান গেমসে কারাতে ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ প্রথম স্বর্ণের মুখ দেখে ২০১০ সালে। তারপর থেকেই এই ডিসিপ্লিন নিয়ে বাড়তে থাকে স্বপ্নের ডালপালা। কিন্তু পরের আসরে কারাতেই ছিল না। ২০১৬ সালে শিলং ও গুয়াহাটি গেমসে কারাতে ইভেন্ট না থাকার কারণে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি বাংলাদেশের কারাতেকারা। পরেরবারই কারাতে’তে আবার স্বর্ণ; নেপালে অনুষ্ঠিত গেমসে এ ডিসিপ্লিনে স্বর্ণ জেতেন আল-আমিন, হুমায়রা আক্তার অন্তরা ও মারজান আক্তার প্রিয়া।

২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে কারাতে ডিসিপ্লিন থেকে যে চারটি স্বর্ণপদক এসেছিল তার দুটি ব্যক্তিগত, দুটি দলগত ইভেন্টে। সর্বোচ্চ দুটি স্বর্ণ জিতেছিলেন নারী কারাতেকা জ উ প্রু। একটি ব্যক্তিগত ও একটি দলগত ইভেন্টে।

ব্যক্তিগত হিসেবে অন্য স্বর্ণটি জিতেছিলেন মরিয়ম খাতুন বিপাশা। দলগত ইভেন্টের দুটি স্বর্ণের একটি পেয়েছিলেন হাসান খান সান, হোসেন খান মুন ও সৈয়দ নুরুজ্জামান সিনথিয়া এবং অন্যটি জ উ প্রু, মুন্নী খানম ও উসাইনু।

দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের বাইরেও কারাতের আছে কিছু সাফল্য। ২০১৪ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে দলগত ইভেন্টে রৌপ্য এনে দিয়েছিলেন হাসান খান সান, হোসেন খান মুন ও সৈয়দ নুরুজ্জামান সিনথিয়া। এশিয়া প্যাসিফিক চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি করে ব্রোঞ্জ আছে সান ও মুনের।

Karate

২০১০ এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ীদের তিনজন সর্বশেষ নেপাল এসএ গেমসে অংশ নিয়েছিলেন। ব্রোঞ্জের ওপরে উঠতে পারেননি সান, মুন ও বিপাশা। এই গেমসে আলো ছড়িয়েছেন আল-আমিন, অন্তরা ও প্রিয়া।

পরের এসএ গেমসে কবে হবে তা ঠিক নেই। ২০২২ সালের মার্চে পাকিস্তানের লাহোরে হওয়ার কথা থাকলেও এক বছর পিছিয়ে নেয়া হয়েছে ২০২৩ সালের মার্চে। এ সময়েও হবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।

আপাতত পাকিস্তান ওই সময় ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরের গেমসে কারাতে ডিসিপ্লিনে কি বাংলাদেশের স্বর্ণ থাকবে? এ অঞ্চলের কারাতে সবচেয়ে ভালো দল পাকিস্তানের। সেখানেই হবে পরবর্তী গেমস। তাই স্বর্ণ ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের প্রস্তুতিটা হতে হবে দীর্ঘমেয়াদী।

পাইপলাইনেও চাই খেলোয়াড়। তা কী আছে? সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ও সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের পর ফেডারেশন কর্মকর্তারা নতুন কয়েকজনের পারফম্যান্সে আশাবাদী হতেই পারেন। আল-আমিন, অন্তরা ও প্রিয়ারা যদি নিজনিজ সাফল্য ধরে রাখতে পারেন এবং তাদের সঙ্গে নতুনরা কোমর বেধে নামতে পারেন তাহলে এই ডিপ্লিনের নাম স্বর্ণের তালিকায় থাকবে বলেই বিশ্বাস কারাতে বিশেষজ্ঞদের।

Karate

কারাতে জাতীয় দলের পাইপলাইনটা কেমন বাংলাদেশ গেমসে নতুনদের পারফরম্যান্সই সেটা আভাস দিচ্ছে। মেয়েদের মধ্যে নুমে মার্মা, জান্নাতুল ফেরদৌস সুমী, ছেলেদের মধ্যে জর্জিস আনোয়ার নাঈম, সিয়াম হোসেন বেশ ভালো করেছেন বাংলাদেশ গেমসে। ভালো করে তৈরি করতে পারলে পুরনোদের সঙ্গে এই নতুনরা মিলে জাতীয় দলকে আরো শক্তিশালী করতে পারবেন আগামীতে।

নুমে মার্মা বাংলাদেশ গেমসে চারটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে একক কাতায় স্বর্ণ অন্য তিনটিতে পেয়েছেন ব্রোঞ্জ। এর আগে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তিন ইভেন্টে অংশ নিয়ে পেয়েছিলেন একটি করে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ। বান্দরবানের এ কারাতেকা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ যুব গেমসেও একটি স্বর্ণ ও দুটি ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন।

জর্জিস আনোয়ার নাঈম বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) থেকে বের হয়ে এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ১২ টি স্বর্ণ জেতা ১৯ বছরের এ যুবককে ঘিরে আগামীতে আরো ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছেন কারাতের কর্মকর্তারা।

নাঈমের আত্মবিশ্বাসও অনেক, ‘আমি আবেগের জায়গা থেকে কারাতে করি, প্রয়োজনের জায়গা থেকে নয়। সাফল্য অনেক সময়ই ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। আমার যেটা করতে হবে তাহলো পরিশ্রম। আমি সেটা করতে চাই। পরিশ্রম করবো, ভাগ্যে থাকলে সাফল্য পবো’- বলছিলেন বাংলাদেশ গেমসে -৬৭ কেজি কুমিতে স্বর্ণজয়ী বাংলাদেশ আনসারের কারাতেকা জর্জিস আনোয়ার নাঈম।

Karate

বিকেএসপি থেকে বের হলেও ওই প্রতিষ্ঠানের কারাতে কোচ সোলায়মান খন্দকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি নাঈম, ‘বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে পাশ করে বের হওয়া পর্যন্ত আমি বাবার স্নেহ পেয়েছি সোলায়মান স্যারের কাছ থেকে। আমি এখন কারাতে খেলতে পারি, কারাতে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখি-এই সবের পেছনেই বড় অবদান সোলায়মান স্যারে।’

বিকেএসপির আরেক শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন দেশ বাংলাদেশ গেমসে আনসারের হয়ে রৌপ্য জিতেছেন -৮৪ কেজিতে। স্বর্ণ না জিতলেও বাংলাদেশ আনসারের হয়ে খেলা এই কারাতেকা প্রথম পর্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বর্ণজয়ীকে প্রথম পর্বে হারিয়েছিলেন ফাইনালে ওঠার পথে।

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও এখনো স্বর্ণের দেখা পাননি সিয়াম, সর্বশেষ আসরে পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ। তবে তার পারফম্যান্সের উন্নতি কর্মকর্তাদের আশান্বিত করে তুলছে। হোসেন খান মুনের কাছে কোচিং করছেন সিয়াম। দেশের গন্ডি পেড়িয়ে এখন সিয়ামের চোখ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘আমি আগামীতে সাউথ এশিয়ান ও এশিয়ান গেমস থেকে পদক জিততে চাই।’

তবে আন্তর্জাতিক পদক ইতিমধ্যেই গলায় ঝুলিয়েছেন সিয়াম। ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান প্যাসিফিক সিতোরো কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে ও ২০১৯ সালে সাউথ এশিয়ান কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেনস সিয়াম। সপ্তম হয়েছিলেন ২০১৯ সাল মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে।

Krate

অন্তরা, প্রিয়া ও নুমে মার্মাদের কাতারে আসি আসি করছেন আরেকজন জান্নাতুল ফেরদৌস সুমী। ইনজুরি থাকায় বাংলাদেশ গেমসে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখার সুযোগ পাননি। তার আগে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তিনটি স্বর্ণ জিতেছিলেন সুমী। যার আরেকটি পরিচয় এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী অন্তরার বোন।

অন্তরা ও সুমীর ছোট বোন সানজিদা জাহান শোভা ও খেলছেন কারাতে। সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তিন বোন মিলে একটি দল ছিলেন কাতায়। তারা জিতেছিলেন স্বর্ণ। শোভার জাতীয় দলে ঢুকতে আরো অপেক্ষা করতে হবে। তবে সুমীর মধ্যে অনেক সম্ভাবনা দেখছেন কারাতে কোচরা।

অভিজ্ঞ ও নতুনদের সমন্বয়ে কারাতের জাতীয় দল আরো শক্তিশালী হয়ে সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণজয়ের ধারাবাহিকতা থাকতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ান গেমস থেকে ৭ স্বর্ণ এনে দেয়া কারাতে ডিসিপ্লিনের ওপর প্রত্যাশার চাপও যে বাড়ছে।

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।