‘শুটিং কী জানতামই না’

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ছয় বছর আগে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ শ্যুটিংয়ে নবম হয়েছিলেন বাংলাদেশের আব্দুল্লাহ হেল বাকি। এতদিন সেটিই ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোন শুটারের সর্বোচ্চ সাফল্য।

২০১৭ সালে বাকির করা পারফরম্যান্স ছাপিয়ে এবার জাকার্তা বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়েছেন নারী শুটার কামরুন নাহার কলি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২২ বছর বয়সী এই শুটার ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ষষ্ঠ হয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন জাকার্তায়। ফাইনালে হয়েছেন অষ্টম।

৫২ দেশের শুটাররা অংশ নিয়েছিলেন এই ইভেন্টে। কামরুন নাহার কলি ৬২৮.৪ স্কোর করে জায়গা করে নিয়েছিলেন পদক জয়ের লড়াই মঞ্চে। আটজনের মধ্যে সবার শেষে নাম থাকলেও ফাইনালে উঠেই ইতিহাস গড়েছেন নারায়ণগঞ্জের এই যুবতী।

দেশের প্রথম শুটার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা কলি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে জাগো নিউজকে দিয়েছেন বিশেষ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে তার শুটার হওয়ার গল্প থেকে নিজের পারফরম্যান্স ও ভবিষ্যত লক্ষ্য উঠে এসেছে।

জাগো নিউজ: দেশের প্রথম শুটার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে ইতিহাস গড়েছেন। আপনার এখন লক্ষ্য কী?

কামরুন নাহার কলি: আমি পদকের কাছাকাছি গিয়ে ফিরেছি। এখন পরের আসরে পদক জিতে অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে চাই।

জাগো নিউজ: পরের বিশ্বকাপ কবে কোথায় হবে? সেখানে পদক জিতলেই কি অলিম্পিকে খেলা নিশ্চিত হবে?

কামরুন নাহার কলি: পরের বিশ্বকাপ হবে মার্চে ভারতের ভূপালে। সেখানে যদি পদক জিততে পারি, তাহলে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবো। যদি ফাইনালেও উঠতে পারি, তাহলেও অলিম্পিকে খেলার সুযোগ হতে পারে। তবে আমি ভূপালে পদক জিতেই অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে চাই।

জাগো নিউজ: পদক জিততে না পারলে কীভাবে অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করার সুযোগ থাকবে?
কামরুন নাহার কলি: পদক জেতাদের অলিম্পিকে কোয়ালিফাইয়ের কোটা শেষ হলে বিবেচনা করা হয় র‌্যাকিং। জাকার্তার বিশ্বকাপের আগে আমার র‌্যাকিং ছিল ১৫। যেহেতু ফাইনাল খেলেছি তাই আমার কিছু পয়েন্ট যোগ হবে। র‌্যাকিং আপডেট হলে আশা করি আমার অবস্থান আরও উন্নতি হবে। ভূপালে যারা পদক জিতবেন তারা যদি আগেই অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেন, তখন ফাইনালে ওঠার বাকি পাঁচজনের র‌্যাকিং বিবেচনা করা হবে।

জাগো নিউজ: বেশিদিন তো হয়নি আপনি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। এর আগে আপনার কোনো সাফল্য ছিল?

কামরুন নাহার কলি: জাকার্তা বিশ্বকাপ আমার চতুর্থ আন্তর্জাতিক আসর। গত বছরই আমি প্রথম এবং তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। এর মধ্যে দুটি ছিল দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং একটি মিশরে। দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিতীয়বার আমি মাত্র ০.৩০ এর জন্য পদক জিততে পারিনি। মিশরে ৬২৯.২ স্কোর করেছিলাম, যা বাংলাদেশের কোনো শুটারের সর্বোচ্চ স্কোর।

জাগো নিউজ: জাকার্তায় যারা ফাইনালে উঠেছিলেন, তারা নিশ্চয়ই অভিজ্ঞ শুটার?

কামরুন নাহার কলি: হ্যাঁ। স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ জেতা তিনজনেরই আগে পদক জেতার অভিজ্ঞতা আছে। বাকি পাঁচজনের মধ্যে আমিই প্রথমবার ফাইনালে উঠেছিলাম। বাকিরা আগেও বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছেন।

জাগো নিউজ: আপনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কতদিন ধরে আছেন? এই সাফল্যের পেছনে আপনার প্রতিষ্ঠানের অবদান কতটুকু?
কামরুন নাহার কলি: ২০২১ সাল থেকে আমি চুক্তিভিত্তিক বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে আছি। অল্প সময়ের মধ্যে আমার এই সাফল্যে অনেক অবদান নৌবাহিনীর। এই প্রতিষ্ঠানের কোচ-অফিসিয়ালরা আমাকে ভালো সাপোর্ট দিয়ে আসছেন।

জাগো নিউজ: আপনি তো ঘরোয়া প্রতিযোগিতায়ও বেশিদিন ধরে খেলছেন না। ঘরের প্রতিযোগিতা নিয়ে যদি কিছু বলতেন।

কামরুন নাহার কলি: আমি ২০১৮ সালে যুব বাংলাদেশ গেমসের মধ্য দিয়ে প্রথম ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। এরপর ২৩তম ইন্টার ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতি। এরপর নবম জাতীয় এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে স্বর্ণ জয় করি।

জাগো নিউজ: যখন শুটিং শুরু করলেন, তারপর দুই বছর তো করোনায় সবকিছু থেমে গেলো। করোনার মধ্যেই বাংলাদেশ গেমস হয়েছিল। কেমন পারফরম্যান্স ছিল?

কামরুন নাহার কলি: করোনা এবং ক্লাব পরিবর্তনের ঝামেলার কারণে টানা দুই বছর খেলতে পারিনি। মাত্র দুই সপ্তাহ অনুশীলন করে বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিয়ে পঞ্চম হয়েছিলাম।

জাগো নিউজ: জাতীয় দলে ঢোকার বিষয়ে যদি কিছু বলেন।

কামরুন নাহার কলি: ২০২২ সালে ইরানি কোচ জায়ের রেজাই এসে যে ট্রায়াল নিয়েছিলেন, সেই ট্রায়ালে অংশ নিয়ে আমি টিকে যাই। তারপর থেকেই জাতীয় দলে আমার অভিষেক।

জাগো নিউজ: শুটিং খেলায় কীভাবে আসলেন?

কামরুন নাহার কলি: শুটিং খেলা কি, তা আমি জানতামই না। বুঝতামও না। যখন নারায়ণগঞ্জ কলেজে পড়তাম, তখন নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের পাশ দিয়েই আসা-যাওয়া করতাম। তখন ভাবতাম এখানে কী হয়? রাইফেল দিয়ে কীভাবে খেলে? এসব কৌতূহল আমার মধ্যে কাজ করতো। একদিন ক্লাবের মধ্যে ঢুকে শুটিং খেলা দেখি। যারা খেলেন তাদের সঙ্গে কথা বলি শুটিং সম্পর্কে ধারণা নেই। তারপর আমার খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। এটি ২০১৭ সালের ঘটনা। একদিন নানা আবদুল লতিফকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে যাই। নানা আমাকে ভর্তি করে দেন।

জাগো নিউজ: শুটার হওয়ার পেছনে তাহলে আপনার নানার তো বড় একটা অবদান আছে, তাই না?

কামরুন নাহার কলি: অবশ্যই। আমার পরিবারেরও অনেক অবদান আছে শুটার হওয়ার পেছনে।

জাগো নিউজ: এক মাসের কিছু বেশি সময় আছে পরের বিশ্বকাপ। আপনাকে তো কঠোর অনুশীলন করতে হবে। কতটা আশাবাদী ভূপাল বিশ্বকাপ নিয়ে?

কামরুন নাহার কলি: যেহেতু পরের বিশ্বকাপে অলিম্পিকের কোটা প্লেস থাকবে, তাই আমি চেষ্টা করবো যাতে পদক নিয়ে ফিরতে পারি। পদক জিতলে তো অলিম্পিকে খেলা নিশ্চিত।

জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।

কামরুন নাহার কলি: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/এমএমআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।