বাকৃবি

হলে নেই গেস্টরুম-র‍্যাগিং, বদলে গেছে সিট বরাদ্দের চিত্র

আসিফ ইকবাল
আসিফ ইকবাল আসিফ ইকবাল , বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)
প্রকাশিত: ০৬:৫১ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আবাসন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন শিক্ষার্থীদের হলে আসন বরাদ্দ পেতে কোনো আগের মতো ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। হল প্রশাসনের উদ্যোগে সুষ্ঠুভাবে সিট বণ্টন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে আসন বরাদ্দ পাচ্ছেন। আসন বরাদ্দ পেতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক লবিং, সিট বাণিজ্যের মুখে পড়তে হচ্ছে না। ভর্তি হওয়ার পর হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সহজেই মিলছে সিট। আগে যেখানে, হলে সিট পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হতো কিংবা প্রভাবশালী সিনিয়র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারস্থ হতে হতো, এখন এর কোনো কিছুরই প্রয়োজন হচ্ছে না। এমনকি কয়েকটি হলে প্রভোস্টরা নিজেরাই রুমে রুমে গিয়ে খুঁজে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রথম বর্ষের আবাসিক ছাত্র নিলয় বসাক বলেন, প্রথমে আমি ভেবেছিলাম অপরিচিতদের সঙ্গে থাকতে গেলে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করতে হবে, তবে তা ঘটেনি। প্রথম দিনেই প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে আমাদের রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র ভাইয়েরা রুমে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। এরই মধ্যে আমার রুমমেটদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কও গড়ে ওঠেছে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে আসন বরাদ্দ নিয়ে যে নেতিবাচক মন্তব্য শুনতাম তা দেখিনি।

আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, হল প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে সবি শিক্ষার্থী হলে আসন পেতে পারে ও কোনো আসন সংকট যাতে না দেখা দেয়। আগে যে কমন রুম ছিল আশরাফুল হক হলে তা এখন নেই। এবার ২০২৪-২৫ বর্ষের ৫২ জন শিক্ষার্থীকে হলের নিচতলায় হল প্রশাসন সিট বরাদ্দ দিয়েছে। আগের মতো রাজনৈতিক লবিং করে সিট নেওয়া অথবা সিটের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই এখন।

তিনি আরও বলেন, আমি ও হাউজ টিউটর যারা আছি সবসময় শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিচ্ছি। আগের মতো বর্তমানে হলে কোনো গেস্টরুম কালচার ও র‍্যাগিং নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হল প্রশাসনের তদারকিতে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। হলে কিছু সিট সংকট রয়েছে, তবে ছেলেদের নতুন হলটির সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হবে।

অন্যদিকে ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে বেগম খালেদা জিয়া হলের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ১২০০ আসন বিশিষ্ট তিনটি ব্লক সমন্বয়ে দশতলা এই হলটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে মেয়েদের আবাসন সংকট কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্মাণাধীন বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাদের বলেন, হলের তিনটি ব্লকের মধ্যে একটি ব্লকের ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রথম বর্ষের তিন শতাধিক ছাত্রীকে আসন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আগামী বছরের শুরুতে তিনটি ব্লকের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে আরও ৯০০ শিক্ষার্থীকে এই হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে। এতে অন্যান্য ছাত্রী হলগুলোরও আসন সংকট দূর হবে।

এদিকে ছেলেদের জন্য শহীদ জামাল হোসেন হলের সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে বাকৃবির অন্যতম বড় হল। আমরা আশাবাদী যে, ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে হলের কাজ শেষ হবে। পূর্বে হলে মাত্র ২৫০ আসন ছিল যা নতুনভাবে নির্মাণের পর ১০ তলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবনে রূপান্তরিত হয়ে ১২০০ আসনের বিশাল সক্ষমতা অর্জন করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, নির্মাণাধীন বেগম খালেদা জিয়া হলে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য হলগুলোতেও সবাইকে সিট দেওয়া হয়েছে। এখানে রাজনীতির আশ্রয় নিয়ে সিট বরাদ্দ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে বেশি চাপ হচ্ছে ছাত্রীদের নিয়ে। প্রতিবছরই ছাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। বেগম খালেদা জিয়া হলের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে এসব সমস্যা আর থাকবে না। এছাড়া ছেলেদের সিট সংকট তেমন নেই বললেই চলে। শহীদ জামাল হোসেন হলের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সিট সংকট পুরোপুরি দূর হবে বলে আশা করি।

এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।