রাকসু

নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলাই হবে আমার প্রথম অঙ্গীকার: নিশা

মনির হোসেন মাহিন মনির হোসেন মাহিন , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৫

 

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে রাকসুকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে উৎফুল্লের আমেজ। এরইমধ্যে মনোনয়ন বিতরণও শুরু হয়েছে। পুরুষ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাকসু নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই নারী শিক্ষার্থীদের মাঝেও।

রাকসু নির্বাচনে নারী বিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র থেকে প্রথম মনোনয়ন তুলেছেন বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. নিশা আক্তার। রাকসুর খুঁটিনাটি নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন নিশা আক্তার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মনির হোসেন মাহিন

জাগো নিউজ: রাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রধান কারণ কী?

নিশা আক্তার: রাকসু হলো শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের একমাত্র প্ল্যাটফর্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানামুখী সমস্যার মধ্যে জর্জরিত। এছাড়াও সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা, যারা হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এখানে পড়াশোনা করতে আসেন। তাদের এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যই নারীদের কণ্ঠস্বর হয়ে আমার রাকসুতে অংশ নেওয়া।

জাগো নিউজ: রাকসু নির্বাচনে জয়লাভ করলে আপনার প্রথম কাজ কী হবে?

নিশা আক্তার: আমি রাকসুতে নারী বিষয়ক সম্পাদক পদে অংশ নিয়েছি। সেখানে যদি শিক্ষার্থীরা আমাকে নির্বাচিত করেন আমি শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধার জন্য কাজ করবো। আবাসিক হলগুলোর নানামুখী সংকট রয়েছে। নারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হলের বাইরে অবস্থান করছে, যেগুলো নিরসনে আমি কাজ করতে চাই। সেখানে ক্যান্টিন সমস্যা, নারী নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো, নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো যৌক্তিক দাবি আদায়ে-আমার কণ্ঠস্বর হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আওয়াজ।

আমি নারী প্রার্থী হিসেবে শুধুমাত্র নারীদের একজন প্রতিনিধি না। আমি পুরুষ ভাইদেরও সহযোগী। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাকসুর যে আসল প্রত্যাশা সেগুলো পূরণে বদ্ধপরিকর থাকবো, ইনশাআল্লাহ।

জাগো নিউজ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীরা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয় বলে আপনি মনে করেন?

নিশা আক্তার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যা ফেস করে থাকেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম নিরাপত্তার অভাব। বহিরাগতদের দ্বারা ইভটিজিংয়ের শিকার, নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে মেস মালিক কর্তৃক হয়রানির শিকার হন।

প্রসূতি শিক্ষার্থীরা শারীরিক অসুস্থতার কারণে পর্যাপ্ত ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারে না এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে তারা ইয়ারড্রপ দিতে বাধ্য হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ হাজার নারী শিক্ষার্থী থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টারে কোনো বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তার নেই। এতে নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপদ খাবার ও নিরাপদ পানির সমস্যার কারণে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের শিকার হন। মেয়েদের হলগুলোর পাশে কোনো ফার্মেসি নেই। হল এবং অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য ভেন্ডিং মিশিন নেই। আমি রাকসুতে নির্বাচিত হলে সর্বপ্রথম এসব নিয়ে আওয়াজ তুলবো।

আরও পড়ুন-

জাগো নিউজ: রাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক নারী শিক্ষার্থীকে অনাগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এর পেছনে কারণ কী?

নিশা আক্তার: নারীরা যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে আসলেই সামনে ঢাল হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। নারীরা যখন আন্দোলনে নেমে আসে, সেই আন্দোলন অবশ্যই ফলপ্রসূ হয়। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার ছিলেন নারীরা। নারীদের স্লোগানে মুখরিত হতো রাজপথ, তেমনি ভাইদের পাশে থেকে সাহসও জুগিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু আজ কেন রাকসুতে অংশগ্রহণ নিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাগ্রহ কাজ করছে, এর পেছনে অবশ্যই কিছু যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমি মনে করি।

নারী শিক্ষার্থীরা রাকসুকে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম মনে করে। বিগত সময়ে রাজনৈতিক তিক্ততা থেকে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক অনীহা এই বিমুখতা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হলো প্রচারণার অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু সাইবার বুলিংয়ের মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের প্রচারণায় অনেক আজে বাজে কমেন্টের ভয়ে ও তাদের ছবি নেগেটিভভাবে ব্যবহার করতে পারে এমন ভয়ে নারী শিক্ষার্থীরা রাকসু নির্বাচনে অনাগ্রহণ প্রকাশ করছেন বলে আমি মনে করি।

এছাড়াও মেয়েদের জন্য প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি। সাইবার বুলিং নিয়ে একটি সেল গঠন করার কথা থাকলেও এখনো তা গঠন হয়নি। ফলে অনেকের মাঝে অনীহা তৈরি হচ্ছে। রাকসুতে মেয়েদের অংশগ্রহণকে অনেকে বিদ্রূপের চোখে দেখেন যা পরিবার পর্যন্ত নেগেটিভভাবে পৌঁছাতে পারে। এসব ভয়ে নারীদের নেতৃত্বের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। এগুলোর জন্য নারীরা রাকসুতে প্রার্থী হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন।

জাগো নিউজ: রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বে বিকাশ হবে বলে কি আপনি মনে করেন?

নিশা আক্তার: রাকসু হলো নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম হাতিয়ার। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একমাত্র সংগঠন রাকসু। শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী রাকসুতে নির্বাচিত হন। নারীরা রাকসুতে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে দেশ গঠনের গুণাবলি নিয়ে বেড়ে উঠবেন। এছাড়াও রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নারী শিক্ষার্থী রাজনীতি ও দেশ নিয়ে ভাবতে শেখেন। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কথা বলতে গিয়ে দেশের অধিকারের কথা চিন্তা করতে শেখেন। রাকসুতে আসার ফলে একজন নারী দেশ নিয়ে ভাবেন এবং নেতৃত্বের বিকাশ ঘটান। পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতি ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখেন।

নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলাই হবে আমার প্রথম অঙ্গীকার: নিশা

রাকসুতে যারা নেতৃত্বে-দিবেন তারাই পরবর্তী রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাণ্ডারি হবেন। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবেন। নারী নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হবে রাকসু।

জাগো নিউজ: সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার নির্বাচনী ইশতেহার কী?

নিশা আক্তার: শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করাই হবে আমার আমার প্রথম ইশতেহার। এছাড়াও আমার কয়েকটি ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে-

১) আবাসিক হলের নানামুখী সংকট, রিডিং-রুমের সমস্যা, ভ্যান্ডিং মেশিন, ওয়াশিং মেশিন সমস্যার সমাধান। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত রিডিং রুমের সংকট নিরসন, মেডিকেল সেন্টার সংস্কার নিয়ে কথা বলবো, ইনশাআল্লাহ।

২) কলা অনুষদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অনুষদে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম সংকট রয়েছে বিশেষ করে শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের বিভাগগুলোতে পর্যাপ্ত ক্লাস রুমের সংকট নিরসনে আমার তীব্র ইচ্ছা আছে।

৩) নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ কাজ করবো।

৪) নারীদের অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা থাকবে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।

৫) বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাক্টিভ নারী নিপীড়ন সেল গঠন করবো। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলাই হবে আমার ইশতেহারের প্রথম কাজ।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।