করোনায় যেভাবে সময় কাটছে যবিপ্রবির শিক্ষকদের

ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
ক্যাম্পাস প্রতিবেদক ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৭ পিএম, ০৭ মে ২০২০

করোনা আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব। চারিদিকে শুধু শূন্যতা। করোনার ভয়াবহতা বদলে দিয়েছে পুরো পৃথিবীর দৃশ্যপট। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলা মানুষগুলো এখন গৃহবন্দী। করোনার আগে গবেষণা আর পাঠদানে সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটাতেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষকরা। এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে কীভাবে তারা গৃহবন্দী সময় পার করছেন, তা জানাচ্ছেন সজীবুর রহমান

যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগে আমি প্রচণ্ড খুশিতে ভাসছিলাম, কারণ আমার নেতৃত্বে তখন পোলট্রি মুরগির অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প প্রোবায়োটিকের গবেষণা সফলতা লাভ করেছে। এই আবিষ্কারের ফলে মুরগির ওজন প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। ঠিক এরই মধ্যে চীনে করোনা শনাক্তের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। ভাইরাসটি সম্পর্কে ইন্টারনেটে তথ্য না পেয়ে একজন অণুজীববিজ্ঞানী হিসেবে ভাইরাসটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলাম।

তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বের মতো অতি দ্রুতই বাংলাদেশ করোনা আক্রমনের শিকার হলো। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হলো, বুঝলাম এত সহজ হবে না বিষয়টা মোকাবিলা করা। বসে থাকতে পারলাম না, কয়েকটি স্থানে করোনা নিয়ে সেমিনার করলাম। জনসচেতনতার জন্য যশোরের বিভিন্ন জায়গাতে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড লাগানোর ব্যবস্থা করলাম।

ড. ইকবাল কবির বলেন, এদিকে দেশে খুবই দ্রুত গতিতে বাড়ছিল করোনার প্রাদুর্ভাব। পরিকল্পনা করলাম কীভাবে যবিপ্রবির অত্যাধুনিক জিনোম সেন্টারে করোনা নমুনা পরীক্ষা করা যায়। মাহেন্দ্রক্ষণ এসে গেল, শুরু হল যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে করোনার নমুনা পরীক্ষার কাজ। নিজে ও অন্য সহকর্মীদের নিয়ে মৃত্যু-ভয় উপেক্ষা করে শুরু করলাম করোনা সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মতো আমিও এখন করোনা যুদ্ধে লেগে আছি, জানি না এর শেষ কোথায়! করোনা নমুনা নিয়ে ল্যাবে কাজ করায় এখন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে আছি। আজ প্রায় একটি মাস পরিবার থেকে আলাদা হয়ে আছি। জানিনা এই করোনা যুদ্ধে হারব নাকি জিতব। কিন্তু বিজয়ের স্বাদ পাওয়ার জন্য নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিব। এই সংকল্প নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি।

যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, এখন পরিবারের সঙ্গেই বেশিরভাগ সময় দেয়া হচ্ছে। এমনিতে কর্ম ব্যস্ততার কারণে তাদেরকে সময় দিতে পারি না। তাই কোয়ারেন্টাইনের সময়টা তাদের সঙ্গেই অতিবাহিত করছি। বাসায় বসে থেমে নেই গবেষণার কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি রিসার্চ পেপার নিয়ে কাজ শেষ করে সাবমিট করেছি।

এই শিক্ষক নেতা বলেন, প্রতিদিন বেলা ১২-১টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। এই সময়ে আমার গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করি। তাছাড়াও নিজের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে পরিচিতজনের সহায়তায় অসহায়দের জন্য একটি ফান্ড গঠন করেছি। এই টাকা দিয়ে ইতোমধ্যে এলাকার গবির অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এভাবে অতিবাহিত হচ্ছে আমার গৃহবন্দী সময়। সবাই সাবধানে থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।

যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আমজাদ হোসেন বলেন, কোয়ারেন্টাইনের সময়টা ঘরেই কেটে যাচ্ছে কিন্তু থেমে নেই দায়িত্ববোধ। করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহয়তায় জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে যবিপ্রবির সব শিক্ষকেদের পক্ষ থেকে একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।পাশাপাশি যবিপ্রবির সব শিক্ষকের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ জোগাড় করে আনুমানিক ৩০০ শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেয়া হয়েছে।মেস বা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের ভাড়া সম্পূর্ণ অথবা আংশিক মওকুফের জন্য মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি।ব্যক্তিগতভাবে যতদিন করোনা পরিস্থিতির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ততদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আমার প্রাপ্ত মূল বেতন না নিয়ে এই অর্থে যবিপ্রবির গরিব শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প করেছি।আপনাদের সবার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, এই মহামারির সময় আপনারা সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন এবং সাধ্যমতো অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন।সবাই সচেতন হোন, নিরাপদে থাকুন।

এমএফ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।