সেশনজট মুক্ত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, স্বস্তিতে শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বেরোবি
প্রকাশিত: ১০:০১ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২৩

অবশেষে সেশনজট মুক্ত হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদের দূরদর্শিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টির তিন থেকে চার বছরের সেশনজট নিরসন হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে এসেছে স্বস্তি।

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সালের শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছিল। ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে নামিয়ে আনা হয়। এভাবে শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমিয়ে শূন্যের কোটায় আনার পরিকল্পনা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ভয়াল সেশনজটের কবলে পড়ে উত্তরের বাতিঘর নামে পরিচিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ বিভাগেই দেড় বছর থেকে সাড়ে তিন বছরের সেশনজট ছিল। যার ফলে ছয় থেকে সাত বছরেও শেষ হচ্ছিল না স্নাতক (অনার্স)। সময় মতো পড়াশোনা শেষ করতে না পারায় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: নতুন রূপে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বেড়েছে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে তিন বছরের সেশনজট ছিল। এছাড়া জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোক প্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দুই বছরের সেশনজট ছিল।

ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলছেন, আগের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির শিক্ষকের ভিসির লেজুরবৃত্তির রাজনীতির কারণেই সেশনজট প্রকট ছিল। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ ২০২১ সালের ১৪ জুন যোগদানের পর প্রশাসনিক ও একাডেমিক নানা পরিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে গতিশীলতা এসেছে। করোনাকালে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট মুক্তের উদ্যোগ নেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য।

এদিকে, সেশনজট নিরসন হওয়ায় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আসন সংখ্যার তুলনায় সর্বোচ্চ ভর্তিতে এগিয়ে ছিল বেরোবি। প্রায় শতভাগ ভর্তির কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান একাডেমিক শৃঙ্খলা ও সেশনজটমুক্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সর্বোচ্চ পছন্দের তালিকায় রেখেছেন নবীন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেরোবি বর্তমানে শক্ত অবস্থানে আছে। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মাথা উঁচু করে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবে অবকাঠামো সমস্যা কিছুটা থাকলেও তা খুব দ্রুতই কাটিয়ে ওঠা যাবে।

আরও পড়ুন:শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে মারধর, উত্তপ্ত ক্যাম্পাস

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি ফিরে পেয়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ক্লাস, পরীক্ষা ও ভর্তিসহ সব কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের ফলে কমেছে সেশনজট। অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে চলছে সব কার্যক্রম। ফলে সময় লাগছে কম, ফিরেছে শৃঙ্খলাও। তবে অবকাঠামো সংকট, শিক্ষক স্বল্পতা ও আর্থিক অপ্রতুলতা এখনো ভোগাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।

এছাড়া বিগত বছরের তুলনায় দিনদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হচ্ছে। গত কয়েক বছরে গবেষণা বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। প্রতিবছরের গবেষণা নিবন্ধের সংখ্যা পর্যালোচনা করে এমন চিত্র দেখা গেছে। গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক ও আর্থিক সহযোগিতা এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম বলেন, একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বরাবরই যে চাওয়া থাকে তা হলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে চাকরির প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। কিন্তু বিগত এক যুগেও কোনো প্রশাসন সেশনজট মুক্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে তাদের শিক্ষার্থীরা মনে রাখেনি। তবে আশার কথা হলো, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার দূরদর্শিতায় প্রাণের ক্যাম্পাস সেশনজট মুক্ত হয়েছে এটা আসলেই গর্বের বিষয়।

ম্যানেজ ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নেই এটা শুনলেই খুশি লাগে। কারণ, একটা সময় ছিল সবাই বলাবলি করতো এখানে তো অনেক জট। বের হতে তো অনেক সময় লাগবে, তখন খুবই আপসেট হতাম। সেশনজট এখন দূর হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বের হয়ে চাকরির প্রতিযোগিতা অংশ নিতে পারবো।

আরও পড়ুন: ২৯২ আসন ফাঁকা রেখেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু

এ বিষয়ে বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট অন্য যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেশি। তবে তা থাকা সত্ত্বেও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সেশনজট নিরসন সম্ভব হয়েছে।

সেশনজট নিরসন সম্পর্কে জানতে চাইলে বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার প্রথম পদক্ষেপই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তার-কর্মচারীদের সহযোগিতায় গত দেড় বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় চার বছরের সেশনজট মুক্ত হয়েছে।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।