গাজায় ইসরায়েলি ‘গণহত্যা’ বন্ধের আহ্বান ঢাবি শিক্ষক সমিতির
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর ‘গণহত্যা’ বন্ধে বিশ্ব মোড়লদের কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক মানববন্ধনে এ আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা ফিলিস্তিনিকে যেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় তার দাবি জানান। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানান।
এসময় ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পরেও যুদ্ধবিরতিতে না গিয়ে নিষ্ঠুরভাবে মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। সেই হত্যার প্রতিবাদে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। গতকাল (শনিবার) জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির জন্য ভোট হয়েছে। ১৫টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টি রাষ্ট্রই যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে। যুক্তরাজ্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। এতে বোঝা যায়, যুদ্ধের সব রসদ জোগান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত গাজায় যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী। যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে লেখালেখি করছে, কবিতা লিখে ফিলিস্তিনের জনগণকে উজ্জীবিত করছে তাদেরও হত্যা করা হচ্ছে। একজন কবিকে হত্যা করা হয়েছে, যিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে কবিতা লিখেন। পুরো পরিবারসহ তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের অতীত তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, যখন অস্ত্র চুক্তি হচ্ছিলো তার আগে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন- ‘পাখির যেমন নীড় আছে, গরুর আস্তাবল আছে, কিন্তু আমাদের কোনো দেশ নেই।’ চুক্তিতে তখন দুটি রাষ্ট্রকেই স্বীকার করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করা হলেও ফিলিস্তিনি জনগণের যে আশা পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র তা এখনো স্বীকার করা হয়নি। এই চুক্তির মাধ্যমে ধারণা করা হয়েছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, কিন্তু তা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী দুটি রাষ্ট্রকেই স্বীকার করে নেওয়া হোক। অন্যথায় সেখানে কোনোভাবেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমরা এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাই।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আজকে সেখানে (গাজায়) যারা মানবতার পক্ষে লিখছে, কথা বলছে তাদেরও হত্যা করা হচ্ছে। গাজা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি উপাচার্য ছিলেন; সেখানে প্রেসিডেন্ট বলা হয়- তাকেও সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের আগে যেভাবে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল ঠিক একই কায়দায় এখন গাজায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে।
শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আমজাদ আলী বলেন, আজকে যখন বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন করার কথা তখন আমরা পালন করছি মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলন। গাজায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে ইসরায়েল। অথচ তাদের দোষ হচ্ছে অধিকার চাওয়া। কিন্তু বিশ্ব এখন কী করছে? যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সাপোর্ট করলো। এই হচ্ছে আমেরিকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকার।
ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, যারা একসময় মুসলিম উম্মাহর কথা বলতেন তারা আজকে গাজাবাসীদের পাশে দাঁড়ালেন না। যারা আজ গাজায় গণহত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস করছে তারাই সেই বহিঃরাষ্ট্রের একটি বড় শক্তি। আমরা চাই এই গণহত্যা বন্ধ হোক। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিক।
শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান বলেন, আরব রাষ্ট্র থেকে সম্পদ চুরি করে আমেরিকা সেই সম্পদ দিয়ে অস্ত্র তৈরি এবং সেগুলো বিক্রি করে যে ত্রাস পুরো পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছে আমরা এর ধিক্কার জানাই। আজকে আমেরিকা গোটা বিশ্বের মানবাধিকার হুমকির মুখে ফেলেছে। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ২১টি স্বাধীন রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রহিম বলেন, ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর যখন জাতিসংঘে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র ঘোষিত হয়েছিল তখন এর মূলে ছিল আমেরিকা। কিন্তু আমরা এখন দেখি তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। জাতিসংঘ যখন যুদ্ধ বন্ধের দাবি তুলছে তখন আমেরিকা ভেটো দিচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে এ ধরনের গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার, শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক চন্দনাথ পোদ্দার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার মোর্শেদ ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ প্রমুখ।
আল সাদী ভূঁইয়া/এমকেআর/জিকেএস