প্রশাসন ভুলে গেলেও ভোলেনি শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ১৯৭৩ সালে নির্মিত কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধটি এবার প্রশাসনের অবহেলার শিকার। উপজেলা প্রশাসন নতুন একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে সেখানেই বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে। এতে ঐতিহাসিক পুরোনো স্মৃতিসৌধটি পড়েছিল অনাদরে। ধুলোবালি, কাদা আর আবর্জনায় ঢেকে থাকা সেই স্মৃতিস্তম্ভটি অবশেষে ১৫ ডিসেম্বর রাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে স্থানীয় একদল শিক্ষার্থী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধটি ১৯৭৩ সালে স্থাপন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও তৎকালীন সংসদ সদস্য করিম উদ্দিন। ২০১০ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সহযোগিতায় এটি পুনর্নির্মাণ করেন তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন। এখানে উপজেলার ১২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামফলক রয়েছে। দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে এখানেই মহান বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো।

তবে এ বছর হঠাৎ করেই তুষভান্ডার মাঠে নতুন একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। ফলে পুরোনো স্মৃতিসৌধটি প্রশাসনের নজরের বাইরে চলে যায় এবং কার্যত ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়।

প্রশাসন ভুলে গেলেও ভোলেনি শিক্ষার্থীরা

বিজয় দিবসের আগের রাত ১০টার দিকে করিম উদ্দিন পাবলিক স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে পুরোনো স্মৃতিসৌধটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়।

করিম উদ্দিন পাবলিক স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিলা আক্তার সেতু বলেন, আমরা এখানে ময়লা-আবর্জনা দেখে বন্ধুরা মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করি। এটা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য।

শিক্ষার্থী রনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে বলতে চাই, এটা কি আপনাদের এলাকার মধ্যে পড়ে না? এখানে শহীদদের নামফলকের স্থানটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল। আপনারা নতুন হাজারটা স্মৃতিস্তম্ভ বানান, আপত্তি নেই; কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটিকে এভাবে অবজ্ঞা করতে পারেন না। জন্মের পর থেকেই এখানে মানুষকে ফুল দিতে দেখেছি। তাই প্রশাসনের অপেক্ষায় না থেকে আমরা বন্ধুরা মিলে নিজ খরচে পরিষ্কার করেছি।

প্রশাসন ভুলে গেলেও ভোলেনি শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগে শামিল হন স্থানীয়রাও। স্থানীয় বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের কাজ করতে দেখে আমরাও হাত লাগিয়েছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উপজেলা প্রশাসন ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নিল না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান বলেন, ‘কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ কোনটা? ওটা যদি প্রশাসন করে থাকে, নতুনটাও প্রশাসন করেছে। বিজয় দিবস উদযাপন বিষয়ে মতামত নেওয়ার সময় কেউ কিছু জানায়নি।’

নতুন ও পুরাতন স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে নিজের ‘ধারণা নেই’ উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘দোয়া করবেন এমন চাকরি যেন আর করতে না হয়।’

মহসীন ইসলাম শাওন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।