গাইবান্ধার নদী পথে আতঙ্কের নাম মিষ্টার ও বাদশা


প্রকাশিত: ১০:২৭ এএম, ৩০ মার্চ ২০১৫

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদ জুড়ে এখন আতঙ্কের নাম মিষ্টার। পুলিশের নামে নৌকা থেকে বিট তোলার মধ্য দিয়ে উত্থান হলেও এখন নদী পথে প্রত্যেকটি অপকর্মের সাথে মিষ্টারের নাম জড়িত। মিষ্টারের বিভিন্ন অপকর্মের কথা স্বীকার করলেও পুলিশ তার দায় নিতে নারাজ।

ফুলছড়ি থানা পুলিশের দাবি মিষ্টারের সব অপকর্ম চলে সদর থানার সীমানায়। আর সদর থানা বলছে মিষ্টার বা বাদশা নামের কাউকে তারা চেনে না।

মিষ্টারের বাড়ি গাইবান্ধার কুন্দেরপাড়া চরে। সেখান থেকেই সে মাদক বেচাকেনা, চুরি, ডাকাতিসহ সব ধরণের অপকর্ম পরিচালনা করে। মিষ্টার ব্রহ্মপুত্র নদে মোল্লারচর থেকে শুরু করে ফুলছড়ি পর্যন্ত ওই পথে চলাচলকারী নৌকা থেকে পুলিশের নাম করে ‘বিট’ তোলে।

মিষ্টারের ভয়ঙ্কর রূপ চোখে পড়ে রাতের বেলা। মিষ্টার একা নয়, তার একটি বাহিনী রয়েছে। মিষ্টার ও তার বাহিনীর সদস্যরা নদীপথে চলাচলকারী নৌকার নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলে সারা রাত নদীতে অবস্থান করে। রাতের বেলা খুব বেশী সংখ্যক নৌকা চলাচল করে না। পুলিশের নজরদারীর অভাবে রাতের বেলা মূলত মাদক ব্যবসায়ীদের দখলে থাকে পুরো নদী পথ। নদী পথে মাদক পরিবহনের সময় মিষ্টার বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। বিভিন্ন চরে গরু চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা রকমের অন্যায় অত্যাচার চালায় তারা।

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর থেকে শুরু করে কামারজানি-বালাসীঘাট-কেতকি- হয়ে সোনাতলার গৌড়িঘাট পর্যন্ত মাদক সরবরাহ করে মিষ্টার সিন্ডিকেট। মিষ্টারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে কুখ্যাত রেজাউল ডাকাত। সশস্ত্র রেজাউল ডাকাত দিনের বেলা অবস্থান করে কুন্দেরপাড়া হ আশপাশের কয়েকটি চরে। মোল্লার চর থেকে ফুলছড়ি পর্যন্ত মিষ্টার আর ফুলছড়ি থেকে সারিয়াকান্দি পর্যন্ত পুলিশের নামে ‘বিট’ তোলার দায়িত্ব বাদশা’র। তবে বাদশা কোথায় অবস্থান করে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ফজলুপুর ইউনিয়নের তালতলা, খোলাবাড়ি এবং দেলুয়াবাড়ি বাজারে ডাকাতরা দিনের বেলা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। মিষ্টারসহ একাধিক বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। চরাঞ্চলের ওই জায়গাগুলো দুর্গম হওয়ার সুযোগে ওইসব এলাকা এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু পুলিশ নয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হলে চরাঞ্চল থেকে অপরাধীদের নির্মূল এবং অসংখ্য অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, মিষ্টার ও বাদশা এক সময় ডাকাতদের গতিবিধির খবর পুলিশকে দিতো। কিন্তু পরবর্তীতে তারাই অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ডাকাতির বখরা আদায় করা তাদের মূল কাজ। একটি বিশেষ মহলকে খুশি করেই তারা এসব কাজ করে।

গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, কুড়িগ্রামের রাজিবপুর, রৌমারী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর এমনকি টাঙ্গাইল পর্যন্ত নৌ-ডাকাতদের সিন্ডিকেট রয়েছে। মিষ্টার ও বাদশা ওইসব অঞ্চলের ডাকাতদের সাথে সমন্বয় করে সব ধরণের অপকর্ম পরিচালনা করে।

এ ব্যাপারে ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের বুকে সব ধরণের অপকর্মের হোতা মিষ্টার ও বাদশা। তিনি বলেন, মিষ্টার মূলত সদর থানা এলাকায় অবস্থান করে। বিস্তীর্ণ নদীপথে তারা একেক সময় একেক জায়গায় অপকর্ম চালায়। তবে পুলিশ তাদের ব্যাপারে সজাগ আছে।

গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ রাজিউর রহমান বলেন, মিষ্টার ও বাদশাকে তিনি চেনেন না। তার কাছে তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তবে রেজাউল ডাকাতের এক সহযোগীকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। রেজাউলও পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

এমজেড/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।