বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ
ডুমুরিয়ার ভয়াবহ ভাঙন কবলিত এলাকা চাঁদগড়ের রক্ষা বাঁধটি ভদ্রা নদীগর্ভে বিলীন প্রায়। যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা মাটি দিতে রাজি হলেও ঠিকাদারের গাফিলতিতে এখনো বিকল্প বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।
সরেজমিনে এলাকাবাসী এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চল এলাকা চাদগড়-জালিয়াখালীতে দীর্ঘদিনের ভাঙন অব্যাহত আছে। ইতোপূর্বে বাঁধ মেরামতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও স্থায়ীভাবে কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ক্রমান্বয়ে ভদ্রা নদীতে বিলীন হচ্ছে এলাকাটি। সম্প্রতি নদীগর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে হরবেদ সরদার ও হায়দার সরদারের বসতঘর।
এমনিভাবে দীর্ঘদিনের এই ভাঙনে চাঁদগড় ও জালিয়াখালী নামক ২টি গ্রাম নদীর তলদেশে হারিয়েছে। শরাফপুর ইউনিয়নের ২৯ নং বোল্ডারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই ওয়াপদা রাস্তাটি এ পর্যন্ত ১৪ বার বিলীন হয়। বর্তমানে হাজার হাজার বিঘা সম্পত্তি নদী গর্ভে। ভুক্তভোগী মানুষেরা এখন ভূমিহীন হয়ে বিভিন্ন এলাকায় কর্মস্থান করেছেন।
স্থানীয় সরোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শুনেছি দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। সেই ভাঙন আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ২০০৫ সালের দিকে জালিয়াখালী গ্রামের আজিজ শেখের বাড়ির সামনে থেকে বড় ধরনের ভাঙন শুরু হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই হাজার হাজার বিঘা জমি নদীতে চলে যায়। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সাড়ে ৯ লাখ টাকা বরাদ্দে কিছুটা কাজ হয়। বর্তমান চাদগড়ের ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জোয়ারের পানির চাপে বড় বড় ধস নামছে। চলতি পূর্ণিমায় প্রবল পানির চাপে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গত ২ মাস আগে ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও মাটির অভাব দেখা দেয়ার ফলে কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নদীর পাশাপাশি জমির মালিকরা একটা আপোষে আসলে নতুন রূপে ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় বলে পাউবো সূত্রে জানা যায়। কিন্তু এ কাজে ঠিকাদারের গাফিলতি লক্ষ্য করা যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও কৃষ্ণপদ দাশ জানান, বর্তমান চাঁদগড় এলাকাটি খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অধিগ্রহণ নেই। অনেক দেরিতে জমির মালিকরা জায়গা দিয়েছে। এখানে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি নেই বলে আমি মনে করি। আগামী বুধবার বিকেল থেকে ৭৬০ মিটার (২৫ চেইন) বিকল্প ওই রক্ষাবাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে স্কেভেটার মেশিনও পৌঁছে গেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শুধুমাত্র স্কেভেটার মেশিন আনা হয়েছে। তবে কোনো প্রকার কাজ শুরু হয়নি। দ্রুত বিকল্প বাঁধ না দিলে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এছাড়া এ বাঁধে কোনো স্থায়ী সমাধান আসবে না। এ পর্যন্ত বহু বাঁধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সকল বাঁধই নদীতে। এতে শুধু জমি মালিকদের জমি নদীতে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না। অচিরেই ভাঙনরোধের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে ক্রমান্বয়ে এ এলাকাটি ভদ্রা নদীর তলদেশে চলে যাবে।
আলমগীর হান্নান/এমজেড/এমএস/এসআরজে