সাবধান, রাতের বগুড়া অরক্ষিত


প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৫
প্রতীকী ছবি

ঈদে বাড়ি ফিরছেন। কিংবা কেনাকাটা করে ফিরছেন। তবে সাবধান! রাত বেশি হলেই বগুড়া শহর এখন অরক্ষিত। চোর-ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি এলাকা। বিষয়টি পুলিশেরও জানা। তবে ছিনতাইকারী ধরে ঝুঁকি নিতে চায় না পুলিশ। এ কারণে অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তা টহলের পরিবর্তে শুয়ে-বসে সময় কাটায় তারা। ঈদ মৌসুমে একাধিকবার পুলিশি টহল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে এসব দৃশ্য।

গত তিন দিন একটানা ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যা রাতেই শহরে চলাচল করা কঠিন। একটু রাত হলেই পুরো শহর চলে যায় ছিনতাইকারীদের দখলে। প্রতিদিনই শহরের বিভন্ন পয়েন্টে ছিনতাই হচ্ছেই। আগে ছিনতাইয়ের পয়েন্ট ছিল ২০ থেকে ২৫টি। এখন কোথায় কে কখন ছিনতাইয়ের কবলে পড়বেন তা কেউ বলতে পারেন না। পুলিশের টহল দল থাকলেও তারা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

নৈশ কোচের যাত্রী হয়ে বগুড়া শহরে এসে নেমে বাড়ির পথে রওনা দিলে হঠাৎ কানে শব্দ বাজে `থামুন`। প্রথমে ভড়কেই যেতে হয়। তারপর রাস্তার এক ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ এসে সামনে যেতে নিষেধ করে। কারণ হিসেবে বলা হয় সামনে ছিনতাইকারী আছে। ছিনতাই হলে তার দায় পুলিশ নেবে না। কি যুক্তি! তাহলে যাত্রী বাড়ি যাবে কেমন করে, তার সমাধানও দিতে পারে না পুলিশ।

অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ ছিনতাইকারী দমন করার বদলে পথচারীদের পথ চলতে নিষেধ করে! কারণ ছিনতাইকারী ধরতে গিয়ে তারা ঝুঁকি নিতে চায় না।

ছিনতাইকারীর কবলে পড়া কয়েক ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, বগুড়া সদর থানায় অভিযোগ করতে গেলে কোনো সহযোগিতা পাননি তারা। থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলেও কোনো কাজ হয়নি। উল্টো রাতে চলাচল না করার উপদেশ দেয়া হয়।

আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি গত সোমবার রাতে শহরের কারমাইকেল রোডে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, পুলিশের কাছে গেলে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে তারা দেন উপদেশ। ছিনতাইয়ের বেশিরভাগ ঘটনা থানা পর্যন্ত পৌঁছে না। পুলিশের কাছে গেলে সহযোগিতা পাওয়া যায় না, এমন মন্তব্যই পাওয়া যায় সাধারণের কাছ থেকে।

এদিকে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি দিনে দিনে চাঁদাবাজির ঘটনাও বেড়ে যাচ্ছে। সোমবার দুপুরে সদরের ফুলতলা এলাকায় একজন ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে চাঁদাবাজরা বড় অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করেন। ব্যবসায়ী তা দিতে অস্বীকার করায় চাঁদাবাজরা তার জীবননাশের হুমকি দেন।

একই ধরনের ঘটনা ঘটছে শহরের খান্দার, সেউজগাড়ি, বাদুরতলা ও নিউমার্কেট এলাকায়। শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরও পুলিশের কোনো পদক্ষেপ নেই। পুলিশ কোনো ছিনতাইকারীকে ধরতে পারেন না। পুরো শহরই ছিনতাইকারীদের অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

শহরের এমন কোনো পয়েন্ট নেই, যেখানে ছিনতাই হচ্ছে না। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের বেশি ঘটনা ঘটছে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের পেছনের সড়কে, খান্দার এলাকা ও মিশন হাসপাতালের কাছে, কারমাইকেল রোডের পাশ দিয়ে সবুজবাগ কৃষি ফার্মের কাছে, নামাজগড় গোস্থানের কাছ থেকে নিশিন্দারা টিটিসি পর্যন্ত, ঠনঠনিয়ায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের পেছনের সড়ক দিয়ে মালগ্রাম হয়ে গোদারপাড়া পর্যন্ত, সুলতানগঞ্জপাড়া থেকে হাকির মোড়, মালতিনগর বটতলা স্টাফ কোয়ার্টার, সুবিল ব্রিজের পশ্চিম দিকে, দত্তবাড়ি ব্রিজের পূর্ব ধারের এলাকায়, বড়গোলা রওশন শাহ (রঃ) মাজারের পশ্চিমের রাস্তায়, চেলোপাড়া ও নারুলি এলাকা, কাটনারপাড়ার ভেতরের এলাকা, দত্তবাড়ি ব্রিজের পূর্ব ধারে, সূত্রাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের দক্ষিণ ধারের রাস্তা দিয়ে কারমাইকেল রোড পর্যন্ত, মালতিনগর এলাকাসহ কয়েকটি পয়েন্টে। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় শহরের লোক রাতে ঈদের কেনাকাটা করতেও সাহস পাচ্ছেন না। এ ধরনের নানা ঘটনায় বগুড়ার লোকের কাছে পুলিশ সম্পর্কে বিশেষ করে সদর থানার পুলিশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বগুড়ায় বড় ধরনের চুরির ঘটনা না ঘটলেও ছিঁচকে চুরি বেড়ে গেছে। চোরের হাত থেকে অফিস, বাড়ি, দোকান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রক্ষা পাচ্ছেন না। মূলত এসব প্রতিষ্ঠান বা বাড়ি থেকে বেশি চুরি হচ্ছে এয়ার কুলার (এসি) এর কেবল, বৈদ্যুতিক তার, মিটার ও শাড়ি কাপড় ও ছোটোখাটো আসবাবপত্র। গত দু`মাসে শহরে এ ধরনের অন্তত একশটি চুরির ঘটনা ঘটেছে।

চোররা বাড়ির জানালা খোলা থাকলে মোবাইল ফোন ও কাপড় লাঠির সাহায্যে চুরি করে। চুরি বেড়েছে রহমান নগর, মালতিনগর, নাটাইপাড়া, চকলোকমান, কলোনী, সেউজগাড়ী সবুজবাগ, মালগ্রাম, সুত্রাপুর, খান্দার, নামাজগড়, উপশহর, চকসুত্রাপুর, বাদুড়তলা, চেলোপাড়া, নারুলী, নামাজগড় জহুরুল নগরসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। দিন দিন চুরি বাড়লেও চুরির ঘটনায় থানায় মামলা হয় খুব কমই। অনেকে অহেতুক ঝামেলা মনে করে থানায় মামলা করেন না।

দেখা গেছে, ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট রাতে ঘরে ফেরা মানুষ। বিশেষ করে ঢাকা থেকে যেসব যাত্রী সাতমাথায় নেমে গভীর রাতে বাড়ি যেতে থাকেন তারাই বেশি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। রাস্তার পাশে ঘাপটি মেরে থাকা ছিনতাইকারীরা চাকু ছোরার মুখে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেন। তবে একটু প্রতিবাদ করলেই বিপদ আরো নেমে আসে। বাঁধা পেলেই তারা চাকু মারেন।

ঈদের আগে বগুড়া শহরে ছিনতাইকারীদের কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয়। তাদের অধিকাংশই মুখোশ পরে ছিনতাই করে থাকেন। এ ব্যপারে বগুড়ার নবাগত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন রাতে পুলিশী পাহারা আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। তারপরও কোনো দুর্বলতা থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। চুরি-ছিনতাই রোধে পুলিশ আরো সক্রিয় থাকবে।

লিমন বাসার/এমজেড/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।