পুরো শহরই যেন ট্রাক টার্মিনাল

পঞ্চগড় ট্রাক টার্মিনালে জায়গার অভাবে মহাসড়কের দুই পাশে এলোমেলো ভাবে পার্কিং করা হচ্ছে শতশত পণ্যবাহী ট্রাক। এছাড়া পৌর শহরের যেখানে সেখানে ট্রাক পার্কিংয়ের ফলে গোটা শহর এলাকাই ট্রাক টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র পার্কিং এবং বেপরোয়া চলাচলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্টদের।
১৯৮৫ সালের ১৫ জুন প্রতিষ্ঠা হয় পঞ্চগড় পৌরসভা। এরপর ১৯৯৬ সালে জেলা শহরের ধাক্কামারা এলাকায় মাত্র ৫০ শতক জমির উপর নির্মাণ করা হয় পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল। সেই সময় মাত্র দুই থেকে আড়াইশ ট্রাক পঞ্চগড় থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতো। কিন্তু এখন দেশের বিভিন্ন এলাকার দেড় থেকে দুই হাজার ট্রাক নিয়মিত যাতায়াত করে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বোত্তরের শুরুর জেলা পঞ্চগড়েও বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। তবে জেলা শহরের একমাত্র ট্রাক টার্মিনালটি সেই অবহেলাতেই পড়ে আছে। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবসহ দীর্ঘদিনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ট্রাকচালক, পথচারীসহ স্থানীয় পৌরবাসীদের মাঝে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় মাটি খুঁড়লেই পাওয়া যায় ভূগর্ভস্থ পাথর। পঞ্চগড়ের বালিও যেকোনো নির্মাণ কাজের জন্য বেশ উপযোগী। এই পাথর এবং বালি পরিবহনের জন্য প্রতিদিন শতশত ট্রাক ঢুকছে পঞ্চগড়ে। এছাড়া জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে চতুর্দেশীয় শুল্কস্টেশন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল এবং ভুটান থেকে নিয়মিত পাথর আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। বাংলাবান্ধা থেকে এসব পাথর সরাসরি ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করা হয় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর বাইরে রয়েছে ওই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানিকৃত অন্যান্য পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়েজিত শত শত ট্রাক। সব মিলিয়ে পঞ্চগড়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার পাথরবাহী ট্রাক যাতায়াত করে।
বর্তমানে পৌরসভার একমাত্র টার্মিনালটির আশপাশে প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে দুই থেকে এক হাজারের বেশি পাথরবাহী ট্রাক পার্কিং করা থাকে। ট্রাক টার্মিনালের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র ট্রাক পার্কিংয়ের ফলে ট্রাক টার্মিনাল এলাকাসহ শহরে প্রতিনিয়ত কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীসহ সাধারণ নাগরিক। একমাত্র ট্রাক টারমিনালটি পঞ্চগড়-ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক সংলগ স্থানে অবস্থিত। টার্মিনালটিতে ট্রাক রাখার জায়গা না পেয়ে অধিকাংশ সময় এসব ট্রাক রাস্তায় পার্কিং করা হয়। এতে প্রায় সময় জেলা শহরে প্রবেশের একমাত্র সড়কটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এছাড়া দীর্ঘদিন ট্রাক টার্মিনালটি সংস্কারের অভাবে টার্মিনালের ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ভবনের ছাদ এবং ঘরের দেয়াল ভেঙে গেছে। সেখানে ট্রাক চালকদের কোনো বিশ্রামের ব্যবস্থাও নেই। যেকোনো সময় সেখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তারা অবিলম্বে পাশের জমি অধিগ্রহণপূর্বক ট্রারমিনালের জায়গা সম্প্রসারণ এবং নতুন ভবন নির্মাণসহ টারমিনালের সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পঞ্চগড় মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পঞ্চগড়ে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ট্রাক যাতায়াত করে। কিন্তু জেলার একমাত্র ট্রাক টার্মিনালের ধারণক্ষমতা ৫০ থেকে ৬০টি। বিষয়টি বারবার পৌরসভাসহ জেলা প্রশাসনের নজরে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
পঞ্চগড় পৌর মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জরুরিভাবে টার্মিনালটির জায়গা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এডিবি অর্থায়নে পঞ্চগড় পৌরসভায় একটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। এই প্রকল্পের অর্থায়নে ট্রাক টার্মিনাল নিয়েও একটি প্রকল্প দেয়া আছে। এই প্রকল্প অনুমোদন হলে আশা করি সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে।
এফএ/এমএস