নিজ এলাকার হিন্দু-মুসলমানদের হয়রানি করছেন প্রিয়া

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পিরোজপুর
প্রকাশিত: ০৬:০২ পিএম, ২০ জুলাই ২০১৯

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগের পেছনে প্রিয়া সাহার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার নিজ বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের চরবানিয়ারী গ্রামের স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।

তাদের অভিযোগ, এলাকার মুসলমান-হিন্দুদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে নষ্ট করার জন্যই তিনি ট্রাম্পের কাছে এ অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, প্রিয়া বালা বিশ্বাস তার ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয় কয়েকজন হিন্দু ও মুসলমানকে হয়রানি করে আসছেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ভাইয়ের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে যে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল সেটি নিয়েও রহস্য রয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় কয়েকজন নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককেও আসামি করে তিনি হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ তাদের। তারা মনে করেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পরিকল্পিতভাবে রাতের বেলায় পরিত্যক্ত ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম নাজিরপুরের নিজ বাড়িতে বসে সাংবাদিকদের বলেন, প্রিয়া সাহা আমার নির্বাচনী এলাকার মেয়ে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে নিজ দেশ, নিজের এলাকা সম্পর্কে চরম মিথ্যাচার করেছেন। এটা চরম অন্যায় ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে কেউ ধর্মীয় বিবেচনায় নির্যাতনের শিকার হন না। আর পিরোজপুরের নাজিরপুরসহ এ জেলার মুসলমান, হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করছেন। যা একটি অনন্য দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে।

শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, নাজিরপুর বা পিরোজপুর জেলার কোনো হিন্দু বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোক গুম বা নিখোঁজ হয়নি। প্রিয়া সাহার বক্তব্য অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নষ্টের উসকানিমূলক অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এদিকে নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অমূল্য রঞ্জন হালদার জাগো নিউজকে বলেন, প্রিয়া বালা বিশ্বাস তার ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয় কয়েকজন হিন্দু ও মুসলমানকে হয়রানি করে আসছেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ভাইয়ের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে যে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল সেটি নিয়েও রহস্য রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয়া বালা বিশ্বাস তার নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিদেশে গিয়ে এমন উসকানিমূলক কথা বলেছেন। এতে নাজিরপুরের ভামমূর্তিও নষ্ট হয়েছে। নাজিরপুরে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই। এখানে হিন্দু-মুসলমান সহাবস্থানে বসবাস করছে।

পিরোজপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিমল মন্ডল জানান, প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এ ধরণের একটি উদ্ভট মিথ্যাচার করবেন ভাবতেও পারিনি। তিনি কেন এবং কি উদ্দেশ্যে এভাবে মিথ্যাচার করেছেন তাও আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। পিরোজপুরে হিন্দু-মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মের লোকজন ভালো রয়েছে। এখানে কোনো হিন্দু বা সংখ্যালঘু গুমের ঘটনাও নেই।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি সুনীল চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, প্রিয়া সাহা তার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে মিথ্যা কথা বলে পিরোজপুরসহ দেশের সকল ধর্মের লোকজনকে অপমান করেছেন। আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

পিরোজপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন বলেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগের বিষয়ে কোনো ঘটনা পিরোজপুর জেলার কোথাও ঘটেনি। পিরোজপুরের পুলিশ প্রশাসন সাম্প্রদায়িক যেকোনো বিষয়ে সবসময়ই গুরুত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, নাজিরপুর উপজেলায় বা পিরোজপুর জেলার কোথাও কোনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে কেউ চেষ্টা করলে পুলিশ প্রশাসন কঠোর হস্তে তা দমন করবে। দেশের বাহিরে গিয়ে যেকোনো নাগরিকের উচিত দেশের বিষয়ে ভেবে-চিন্তে কথা বলা।

উল্লেখ্য, প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয় বালা বিশ্বাস ‘শারি’ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) নির্বাহী পরিচালক। সংস্থাটি বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করে বলে জানা গেছে। এ সংস্থা পরিচালিত ‘দলিত কণ্ঠ’ নামক একটি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক প্রিয়া সাহা। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয় বালা বিশ্বাস পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের চরবানিয়ারী গ্রামের মৃত নগেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের মেয়ে। তার শ্বশুরবাড়ি যশোর জেলায়। তার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের সদর দফতরে সহকারী উপ-পরিচালক পদে কমর্রত রয়েছেন। তারা ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকেন। তাদের দুই মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষ্মী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করছে।

আরএআর/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।