করোনা শনাক্তের ৬ ঘণ্টার মাথায় বৃদ্ধার মৃত্যু, কক্সবাজারে প্রথম
করোনা শনাক্তের ছয় ঘণ্টার মাথায় মারা গেলেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা রামুর বৃদ্ধা ছেনুআরা বেগম (৬৫)। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। গত দুইদিন ধরে হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি এবং বৃহস্পতিবার নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসে। এদিন একদিনে কক্সবাজারের ল্যাবে পরীক্ষায় চলতি সময়ে সর্বোচ্চ ১৭ জনের করোনা পজিটিভ আসে। তার মাঝে বৃদ্ধা ছেনুআরাও একজন।
ছেনুআরা বেগম রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল্লাহর স্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে জসিম উদ্দিন ভরসা।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান, শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা নিয়ে গত দুদিন ধরেই ছেনুআরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। করোনার লক্ষণ থাকায় তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার ১২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় তারটাও ছিল। রিপোর্টে পজিটিভ আসে তার। বেলা ২-৩টার দিকে ল্যাবের রিপোর্ট আসার ৫-৬ ঘণ্টার মাথায় ছেনুআরা বেগম মারা যান। এটি কক্সবাজার জেলায় করোনায় প্রথম মৃত্যু।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানিয়েছেন, করোনায় মৃত ছেনুআরা বেগমের দাফন সম্পন্ন করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাফন-দাফন কমিটি কাজ শুরু করেছে।
এদিকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে বৃহস্পতিবার একদিনে ১৭ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ল্যাবের কার্যক্রম শুরুর এক মাসের মাথায় এটিই সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হওয়ার রেকর্ড।
মাসের শেষ দিনে করোনা শনাক্ত ১৭ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় পাঁচজন, পেকুয়ায় দুইজন, চকরিয়ায় চারজন ও উখিয়ায় দুইজন রয়েছেন। এছাড়াও পার্বত্য বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ির তিনজন ও বান্দরবান সদরের রয়েছে একজন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাহজাহান নাজির এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই জেলার বাইরে থেকে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই এসেছেন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে। এদের মধ্যে দুইজন মাছ ব্যবসায়ী ও অন্যজন আম ব্যবসায়ী, দুইজন তাবলিগফেরত, একজন গার্মেন্টকর্মী এবং একজন রিকশাচালকও রয়েছেন। তবে টেকনাফের এক নারী চিকিৎসক উপজেলা হাসপাতালে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। এখন করোনা আক্রান্ত রোগীদের মাধ্যমে সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবটিকে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নির্ধারণ করে গত ১ এপ্রিল থেকে। এতে প্রথম ৬ দিনে ২৪ জন, ৭ এপ্রিল ২৫, ৮ এপ্রিল ২৪ জন, ৯ এপ্রিল ২৭ জন, ১০ এপ্রিল ৩৭ জন, ১১ এপ্রিল ৯ জন, ১২ এপ্রিল ৩২ জন, ১৩ এপ্রিল ২৪ জন, ১৪ এপ্রিল ৩১ জন, ১৫ এপ্রিল ১৭ জন, ১৬ এপ্রিল ৪১ জন, ১৭ এপ্রিল ৩৯ জন, ১৮ এপ্রিল ১৩ জন, ১৯ এপ্রিল ৬৩ জন, ২০ এপ্রিল ৫১ জন, ২১ এপ্রিল ৪০ জন, ২২ এপ্রিল ৬৪ জন, ২৩ এপ্রিল ৫৩ জন, ২৪ জন ১০১ জন, ২৫ এপ্রিল ১৮ জন, ২৬ এপ্রিল ১০০ জন, ২৭ এপ্রিল ১২২ জন, ২৮ এপ্রিল ৭৬, ২৯ এপ্রিল ৯৫ জন ও ৩০ এপ্রিল ১২৩ জন সন্দেহভাজন রোগীর পরীক্ষা করা হয়েছে এই ল্যাবে। সব মিলিয়ে পরীক্ষা হওয়া রোগী সংখ্যা গত এক মাসে এক হাজার ২৪৯ জন। এদের মধ্যে ৪৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্থিত্ব পাওয়া গেছে।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ