জাল বুনে দারিদ্র্যজয় ফরিদার
জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী ফরিদা খাতুন (৩৫)। সমাজে বোঝা হয়ে না থেকে বিনা পুঁজিতে শুরু করেন জালের ব্যবসা। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই অর্থের অভাবে পড়াশোনা হয়নি। পরিবারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। দিনমজুর বাবার পক্ষে পাঁচ সন্তানের মুখে অন্ন জোগান ছিল চরম কষ্টের।
এমনই এক কঠিন বাস্তবতার মুখে জীবন সংগ্রামে নামেন আত্মপ্রত্যয়ী প্রতিবন্ধী ফরিদা খাতুন। নিজের বিয়ের কথা চিন্তা না করে বাবা-মা ও ভাইবোনদের মুখে হাসি ফোটাতে বিনা পুঁজিতে শুরু করেন জালের ব্যবসা। অন্যের টাকায় সুতা, কাঠি কিনে এনে শুরু করেন জাল তৈরির কাজ। জাল বিক্রির লাভের টাকায় শুরু হয় পুঁজি।
এখন নিজেই স্বাবলম্বী ফরিদা। বর্তমানে নিজের পুঁজি ৫০ হাজার টাকা। তা দিয়ে চলছে জাল কেনাবেচা।
ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদা খাতুন। সংসারে বোঝা তার ঘাড়েই। পরে দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ, নিজ বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন শুরু করেন।
গ্রামে একজন সুপরিচিত মুখ প্রতিবন্ধী ফরিদা। সবার বিপদে ছুটে যান তিনি। গ্রামে কোনো গর্ভবতী অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে তিনিই চিকিৎসা করান।
স্থানীয় তালেব মোড় বাজারে নিয়েছেন একটি দোকান। সেই দোকানে নিজের তৈরি জাল বিক্রি করছেন। প্রতিবন্ধী হয়েও ফরিদার এমন সাফল্য দেখে সবাই হতবাক।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নিজ গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর ছোলেমান আলী ও শাহেরা বেগমের মেয়ে ফরিদা। তিস্তা ও সানিয়াজান নদীবেষ্টিত সরকারি বাঁধে তাদের বসবাস। পাঁচ ভাইবোনের সবাই শারীরিক প্রতিবন্ধী (বামন)।
ফরিদা খাতুন জানান, এক সময় খুব অভাব ছিল। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হতো। পরে মানুষের টাকা দিয়ে জাল তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। লাভের টাকা নিয়ে সংসারের খরচ চালাই। এভাবে চলে আমার জাল তৈরি ও বিক্রির কাজ। এখন অভাব নেই। সবাই মিলে তিনবেলা খেতে পারি। সবার খরচ চালাই। বাবা অসুস্থ, তাই সংসারের সব দায়িত্ব আমার। আমি হাঁটাচলা করতে পারি না। শুধু বসে বসে জাল তৈরি করি।
আক্ষেপ করে ফরিদা বলেন, ‘আল্লাহ আমাগো শর্ট বানাইছে। তাই আমাগো কে বিয়াসাদি (বিয়ে) করবে। তাই বিয়ার আশা বাদ দিয়ে বাবা, মা ও ভাইবোনদের নিয়া সংসার কইরা খাইতেছি। গ্রামে যদি কেউ বিপদে পড়ে তাহলে তাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করতে না পারলেও সাথে থাকি।’
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড সদস্য মোছা. শাহানাজ পারভীন বলেন, ফরিদা একজন প্রতিবন্ধী নারী। তালেব মোড় বাজারে একটি জালের দোকান আছে। জাল তৈরি করে তা বিক্রিয় করে সংসার চালায়। তাদের পরিবারের প্রায় আটজন সদস্য প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী হয়েও সে জাল বিক্রি করে সংসার চালায় এটা সমাজের জন্য বিশাল ব্যাপার।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, ফরিদা খাতুন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার পরিবার সবাই ভাতাভোগী। সে তার নিজ উদ্যাগে একটি জালের দোকান দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। পাশাপাশি পরিবারের ভরণ-পোষণ দিয়ে আসছে। এই উপজেলার প্রতিবন্ধীদের জন্য এটা বিশাল অনুকরণের বিষয়। আমরা আশা করি সে একজন ভালো উদ্যোক্তা হবে।
রবিউল হাসান/এফএ/জেআইএম