লোকসানে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন রাজশাহীর পোলট্রি খামারিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২২
ডিম বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না খামারিদের

পোল্ট্রির খাবারের দাম বাড়লেও তুলনামূলক বাড়ছে না মুরগি ও ডিমের দাম। বিক্রির টাকায় উঠছে না উৎপাদন খরচও। এতে লোকসানে পড়েছেন রাজশাহীর খামারিরা। ফলে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেক পোলট্রি খামারি।

প্রায় ৩ দশক আগে এক লাখ টাকা খরচে মুরগির খামার গড়ে তোলেন রাজশাহী নগরীর হেঁতেম খাঁ এলাকার শফিকুল ইসলাম। স্বপ্ন ছিল মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হবেন। দু’দশক ভালোভাবে চললেও বিপত্তি বাধে ২০১২ সালের পর থেকে। কিন্তু বড় ধাক্কা খেয়েছেন করোনার প্রথম বছরেই। ১৬ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে গুটিয়ে নিয়েছেন ব্যবসা।

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পরের বছর ৩ হাজার লেয়ার মুরগি পালন করেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই আলোর মুখ দেখতে পারছিলেন না। ফিডের দাম বাড়ার কারণে ও পণ্যের দাম না থাকায় দিন দিন আশাহত হয়েছেন তিনি।

jagonews24

অভিযোগ করে শফিকুল বলেন, খুচরা বাজারে দাম থাকলেও মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে একের পর এক লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ বছর ব্রয়লার মুরগি না থাকলেও ডিম বিক্রি করে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

এ খামারি আরও বলেন, গত তিন বছরে ১৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ব্রয়লার পালন ছেড়েছি। একটা ৯ লাখ টাকার শেড পড়ে আছে। পোল্ট্রি সেক্টর ঝুঁকির সম্মুখীন। বলা যায় খামারিরা পথে বসেছেন। ডিমের উৎপাদন খরচ এখন ১০ টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৫০ টাকা পিস কিনে কেজিতে ৯০ টাকা করে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়। ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।

বাগমারা উপজেলার দামনাশ এলাকার লেয়ার খামারি হাসানুল ইসলাম বলেন, খাদ্যের দাম অনেকটা বেড়েছে। ১৬০০ টাকার ফিডের বস্তা এখন ৩৪০০ টাকা। ডিমের দাম ১২ টাকা পিস পাইকারি হলে লাভ হবে। এছাড়া ব্যবসা ছাড়তে হবে। এ বছর দেখবো, এরপর খামার ব্যবসা ছেড়ে অন্যকিছু করবো।

পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের আলেয়া বেগম বলেন, খামারে যে পরিশ্রম করতে হয় তাতে লাভের কোনো আলোচনা করা যাবে না। ৬০ দিনে সোনালি মুরগি বিক্রির উপযোগী হয়। আমার খামারের মুরগি বিক্রির উপযোগী হয়ে গেছে। পাইকাররা প্রতি কেজি মুরগি ১৯০ টাকা দর করছেন, যেখানে আমার খরচ পড়েছে ২৩০ টাকা। হিসাব করে দেখেছি, এই পর্যায়ে মুরগি বিক্রি করলে মোটা অঙ্কের লোকসান যাবে। কিছু করার উপায় নাই বিক্রি করতে হবে। লোকসান একবার যায় আবার আরেক চালানে কিছু লাভ আসে। সেটা দিয়ে আবার খামার চালু রাখি। এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছি। খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ফলে খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

jagonews24

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাজার পরিস্থিতিতে বর্তমানে মুরগির চাহিদা কম থাকায় বাজারদর পড়ে গেছে। ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, রাজশাহীর ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ। বহুবার বলেছি বিভিন্ন জায়গায়। কোনো কাজ হয় না। পোলট্রি ফিডের বর্তমান দাম খামার চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত নয়। ডিমের দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় কম। প্রতি পিস ডিমে ৩ টাকা লোকসান দিচ্ছেন খামারিরা। খাদ্যের দাম কমানো, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, সঠিক বাজার নির্ধারণ এখন জরুরি প্রয়োজন। তা না হলে পোল্ট্রি খাত টিকবে না।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ডিম ও মুরগির দাম ওঠানামা হয়। লাভের বিষয়টা আসে খামার ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগের পরিমাণসহ নানান বিষয়ের ওপর।

তিনি আরও বলেন, এরআগে ডিমের দাম কমে যাওয়ার কারণে খামারিরা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। আমরা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।