গাইবান্ধায় মিষ্টি আলুর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

গাইবান্ধায় মিষ্টি আলুর ক্ষেতে অজানা রোগের দেখা দিয়েছে। এতে আলুর পাতা কুকরে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। চাষিদের ধারণা ওই গাছগুলো বেঁচে থাকলেও তাতে আর আলু ফলবে না। বাধ্য হয়ে উঠতি ক্ষেতের আলুর গাছ উপড়ে ফেলছেন কৃষকরা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাঙালি নদীর তীরবর্তী সুখেরচর এলাকার মানুষের ভাগ্য বদলে যায় মিষ্টি আলু চাষ করে। এ কারণে একসময়ের ‘দুঃখেরচর’ নাম বদলিয়ে ‘সুখেরচর’ নামে নামকরণ করা হয় বিস্তীর্ণ এই এলাকাটিকে। এবার সেই জমিগুলোতে চাষ করা আলুর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় চাষিরা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাঙালী নদী তীরবর্তী রাখালবুরুজ, মহিমাগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আলু রোপণ করার পর থেকেই বারি-৮ জাতের আলুর পাতায় অজানা এক ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দেয়। এতে পাতা কুকরে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য জাতের আলুগাছেও একই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ায় চলতি মৌসুমে মারাত্মক ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন এলাকার আলুচাষিরা।
পরিস্থিতি সামলে নিতে আক্রান্ত জমিতে রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। ওই জমিতে নতুন করে চারা প্রতিস্থাপন করছেন অনেকেই। কিন্তু অধিক সংখ্যক গাছে আক্রান্ত জমির মালিকরা উঠতি ক্ষেতের আলুর গাছ উপড়ে ফেলে বিকল্প রবিশস্য আবাদে বাধ্য হচ্ছেন।
মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চরবালুয়া গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলম বলেন, কন্দল জাতীয় এই মিষ্টি আলু মাত্র তিন মাসেই ফলন দেয়। এই মিষ্টি আলু গত এক যুগ ধরে এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে ব্যপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, তেমন কোনো উৎপাদন খরচ ছাড়াই উৎপাদিত আলু দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হওয়ায় চাষিরা সুখের মুখ দেখেছিলেন। এ কারণে চলতি বছর আরও অধিক পরিমাণ জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছে চাষিরা।
ওই গ্রামের আরেক চাষি হায়দার আলী (৪৮) বলেন, তিন বিঘা জমিতে এবার মিষ্টি আলু চাষ
করেছি। ভাইরাসের কারণে দেড় বিঘা জমির রোগাক্রান্ত আলুর গাছ তুলে ফেলে দিয়ে তাতে নতুন করে সরিষা চাষ করতে বাধ্য হয়েছি।
একই গ্রামের আলুচাষি গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, উপায় না পেয়ে এক বিঘা জমির আলু গাছ তুলে ফেলেছি। এখন কি করবো তা ভাবছি।
চরবালুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে দেড় বিঘা জমিতে চাষ করা মিষ্টি আলুর ক্ষেতের অনেকটাই রোগাক্রান্ত হয়েছে কৃষাণী গোলেনুর বেগমের (৫০)।
কৃষাণী গোলেনুর বেগম জাগো নিউজকে বলেন, দেড় বিঘা জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করেছি। লোক রাখার সামর্থ্য না থাকায় ছেলের বউ শ্যামলী বেগমকে (২০) সঙ্গে নিয়ে জমিতে আসি। রোগাক্রান্ত চারাগুলো তুলে ফেলে নতুন চারা লাগাচ্ছি। তবুও যদি ফলন পাওয়া যায় তাহলে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা হবে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম মুরাদ জাগো নিউজকে বলেন, এই রোগ বীজবাহিত ভাইরাস থেকে হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আক্রান্ত গাছগুলো অপসারণ করে এই সমস্যার সমাধান করতে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগাক্রান্ত আলুর গাছ উপড়ে অথবা পুতে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নাই। এই ভাইরাস জনিত রোগ যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ৬১০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে এপর্যন্ত চাষ হয়েছে ৩১৫ হেক্টর জমিতে। তবে পর্যায়ক্রমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
জেএস/এমএস