আবর্জনায় নষ্ট হচ্ছে শকুনি লেকের পানি, কর্তৃপক্ষ উদাসীন

মাদারীপুরের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শকুনি লেকটির পানি দিন দিন নষ্ট হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে করে সচেতনমহলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সৌন্দর্যের জন্য লেকটির চারপাশ বাঁধানো, দুপাশে সিঁড়ি দিয়ে ঘাট বানানো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ নানা কাজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বানানো হয়েছে তিনটি দোকান। যেখানে বর্তমানে রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে।
মাদারীপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে ২০১৭ সালে সাড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে লেকটি সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়। এরপর থেকেই লেকের সৌন্দর্য দেখার জন্য বহু মানুষ ভিড় করেন। অথচ এই লেকটির পানি দিন দিন নষ্ট হলেও নেওয়া হয়নি তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ। এরই মধ্যে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। সবুজ শ্যাওলা পড়েছে। মাঝেমধ্যেই লেক থেকে পচা গন্ধও আসে। তাই এখনই এ লেকের পানি রক্ষার জন্য পদক্ষেপ না নিলে একটা সময় তা নষ্ট হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, মাদারীপুর শহরের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মাটির প্রয়োজনে ১৯৪২-৪৩ সালে এ লেক খনন করা হয়। সে সময় এ এলাকাটি ছিল জনমানবহীন এবং বনজঙ্গলে ভরা একটি নিন্মভূমি। নদী ভাঙন কবলিত তৎকালীন মহকুমা শহরের কোর্ট-কাচারী, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, থানা, জেলখানাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বাংলো স্থানান্তরের জন্য এই এলাকাটি বেছে নেওয়া হয়। কারণ সমতলে এ সব স্থাপনা তৈরি জন্য প্রচুর মাটির প্রয়োজন হওয়ায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের মাদারীপুর মহকুমা প্রশাসন এই লেকটি খনন করে মাটির চাহিদা পূরণ করেন। অথচ ঐতিহ্যময় এই লেকটির পানি দিন দিন নষ্ট হতে চলছেও জেলা প্রশাসন ও পৌরকর্তৃপক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তবে মাঝেমধ্যে লেকের পানি নামমাত্র পরিষ্কার করা হয়, যা যথেষ্ট নয়।
এদিকে সচেতনমহলের দাবি, লেকের পানি নষ্ট হবার মুল কারণ হচ্ছে লেকের পাশে গড়ে উঠা তিনটি রেস্টুরেন্ট। তারা রাতের আধারে বা সবার অগোচরে তাদের ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন খাদ্য, মাংস, প্লেট ধোয়ার পানি লেকের মধ্যে ফেলে। এতে করে রেস্টুরেন্টগুলো ময়লা, তেল ও মশলাযুক্ত আবর্জনার জন্যই দ্রুত পানি নষ্ট হচ্ছে। প্রায়ই পানির মধ্যে তেল ভাসতে দেখা যায়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নকশি কাঁথার সদস্য কেএম জুবায়ের জাহিদ বলেন, মাদারীপুরের শকুনি লেকটির সৌন্দর্য্য দেখার জন্য দুর থেকেও লোকজন আসেন। আমি ও আমার বন্ধুরা সন্ধ্যার পর এসে এখানে আড্ডা না দিলে যেন ঘুমই আসে না। এই লেকটি শহরবাসীর প্রাণ। অথচ দিন দিন লেকের পানির যে অবস্থা হচ্ছে, তাতে এর সৌন্দর্য্য কতদিন ধরে রাখতে পারবে, তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে দ্রুত পানি রক্ষার জন্য প্রশাসনসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই লেক রক্ষা হবে।
ঘুরতে আসা মাদারীপুর সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী নওরিন ইসলাম সাথী বলেন, আমি চাই না আমাদের লেকটি বুড়িগঙ্গা নদী বা ধানমণ্ডি লেকের মতো অবস্থা হোক। তাই দ্রুত লেকটির পানির ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মাদারীপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অভ নেচারের প্রতিষ্ঠাতা রাজন মাহমুদ বলেন, লেকের মুল অংশ হচ্ছে পানি। আর এই পানিই যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে লেকের আর কি সৌন্দর্য্য থাকে। লেকের পাড়কে যেমন সুন্দর করা হয়েছে, তেমনি এই লেকের পানিও সুন্দর রাখতে হবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে লেকের পানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। লেকের পানিতে কোনো প্রকার ময়লা আবর্জনা ফেলতে দেওয়া যাবে না। তবেই আমাদের এই ঐতিহ্য রক্ষা পাবে। প্রশাসনের পাশাপাশি মাদারীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও এগিয়ে আসতে হবে।
মাদারীপুরে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, লেকের পানির জন্য আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। তবুও আমরা এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করবো।
জেএস/জেআইএম