শীতে কৃষকের কষ্ট
‘পানির কাজ করলে মনে হয় বরফ ধরছি’

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে গত কদিন ধরে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। ফলে শীতে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও শৈত্যপ্রবাগে হাড় কাঁপুনি ঠান্ডা পড়ছে বিকালের পর থেকে সকাল পর্যন্ত। এতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। বিশেষ করে, যারা মাঠে কৃষি ও দিনমজুরের কাজ করেন তারা পড়েছেন বেশি বিপাকে। অন্যদিকে শীতের কারণে শ্রমিকরা ঠিকমতো কারখানায় যেতে না পারায় উৎপাদন কমেছে। এছাড়া শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে।
এদিকে পঞ্চগড়ের পার্শ্ববর্তী এ জেলায় কোনো আবহাওয়া অফিস নেই। তাই পঞ্চগড়ের আবহাওয়া অফিসই ভরসা ঠাকুরগাঁওবাসীর। এই আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার ১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ আরও কদিন থাকবে।
কৃষিশ্রমিক আলতাফুর রহমান বলেন, সকাল সকাল মাঠে এসে কাজ করতে হয়। পানির কাজ করলে মনে হয় বরফ ধরছি। এমন অবস্থায় কাজ করতে প্রচুর কষ্ট হয় আমাদের।
নির্মাণ শ্রমিক দুলাল হোসেন বলেন, শীতের দিনে এ কাজে শ্রমিকরা আসতে চান না। আসবেই বা কি করে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে হাত ঠান্ডায় অবস হয়ে থাকে। ইট ও যন্ত্রপাতি ঠিকমতো হাত দিয়ে ধরা যায় না।
এদিকে সাবান তৈরির কারখানা মালিক মোখলেসুর রহমান বলেন, কদিন ধরে খুব শীত অনুভব হচ্ছে। শ্রমিকদের সংখ্যা কমেছে, ফলে উৎপাদনও কমেছে।
শহরের হাজীর মোড় এলাকা থেকে গৃহবধূ লিপি আক্তার ঠাকুরগাঁও বড় মাঠের সড়কে এসেছেন শীতের কাপড় কিনতে। তিনি জানান, কম দামে ছেলে-মেয়েদের জন্য কাপড় নিতে এসেছি। তবে গতবছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম বেশি।
শীতের পোশাক বিক্রেতা লুৎফর ও মানিক জানান, গত বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের বেলপ্রতি ৩-৪ হাজার টাকা বেড়েছে। তারা আশা করছেন পুরো মৌসুমে ভালো বেচাকেনা হবে।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠ সংলগ্ন গড়ে ওঠা অস্থায়ী শীতবস্ত্রের দোকানদার মো. আব্দুল আজিজ বলেন, গতবারের তুলনায় এবার শীতের কাপড় ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে গতবছর যে কাপড়ের লট বা বেল কিনেছিলাম ১০-১২ হাজার টাকায় এবার তা কিনতে হচ্ছে ১৫-১৬ হাজার টাকায়। তাই এবার একটু দাম বেশি। এখানে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০-৬০০ টাকা দামের কাপড় বিক্রি করছি। গতবার তো কাপড়ই পাওয়া যাচ্ছিল না। এবার শীতের সব ধরনের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে শীতজনিত রোগের বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের আরএমও জানান, হাসপাতালে এখন বেশিরভাগ মানুষ শীতজনিত অসুখের চিকিৎসা নিতে আসছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ৩০০ এর বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন যাদের মধ্যে বেশি শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণে গবাদিপশুর নানা সমস্যা হতে পারে। রোদ না হলে ঘরের ভেতর পশুপালন উত্তম।
এদিকে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য শীতবস্ত্রের চাহিদা রয়েছে গোটা জেলা জুড়ে। সদর উপজেলাতে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে সাত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তবে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান জানান, পাঁচটি উপজেলাতে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। শীতবস্ত্রের চাহিদা অনেক। তবে আমরা গরীব ও ছিন্নমূল মানুষদের অগ্রাধিকার দিয়ে এসব বস্ত্র বিতরণ করছি।
তানভীর হাসান তানু/জেডএইচ/এমএস