মর্গের দরজা ছোট, পড়ে আছে মরদেহ সংরক্ষণের ফ্রিজার

তানভীর হাসান তানু তানভীর হাসান তানু ঠাকুরগাঁওয়
প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

অজ্ঞাত মরদেহ সংরক্ষণ, আত্মহত্যাসহ মামলা সংক্রান্ত সকল মৃতদেহ রক্ষণাবেক্ষণে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল মর্গে একটি আধুনিক ফ্রিজার সরবরাহ করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার ঢাকা। কিন্তু মর্গের পুরাতন ভবনের কক্ষ জটিলতায় ফ্রিজারটি গত চার মাসেও স্থাপন করা যায়নি সেখানে। ফলে ২৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা মূল্যের ফ্রিজারটি কোনো কাজেই আসছে না। বন্ধ অবস্থায় এটির ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের মেঝেতে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নানা সমস্যার সৃষ্টি হতো। হাসপাতালটির ৪৪ বছরের সেই সমস্যা লাঘবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মরদেহ সংরক্ষণের চার ড্রয়ারবিশিষ্ট একটি আধুনিক ফ্রিজার সরবরাহ করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার।

ফ্রিজারটি বুঝে পেলেও এটি মর্গে স্থাপন করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মর্গটির সংস্কার না হওয়ায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এর ভবন ও কক্ষগুলো।

আরও পড়ুনমর্গ থেকে লাশের চোখ উধাও, চিকিৎসক বললেন ইঁদুরে খেয়েছে

হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রাকিবুল আলম বলেন, মর্গটি অনেক পুরাতন ও কক্ষের দরজাটি সঙ্কুচিত হওয়ায় ৭ ফিট চওড়া ফ্রিজটি স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। মর্গের ভবন পুরাতন ও জরাজীর্ণ থাকায় নতুন বিল্ডিং নির্মাণের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণের পর এটি স্থাপন করা সম্ভব হবে।

তবে দীর্ঘদিন ফ্রিজারটি এভাবে পড়ে থাকলে এর যান্ত্রিক ত্রুটি বা বিকল হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিতে পারে বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে শহরের আর্টগ্যালারি এলাকায় মর্গটিতে গিয়ে দেখা যায়, ময়নাতদেন্তর জন্য ভবনের সামনে ভ্যানে রাখা হয়েছে একটি মরদেহ। একদিন আগে মৃত্যুবরণ করেন ওই ব্যক্তি।

মৃত ব্যক্তির ছেলে কলিন চন্দ্র রায় জানান, একদিন আগে বিকেলে তার বাবা বিষপানে আত্মহত্যা করেন। মরদেহটি ময়নাতন্তের জন্য পুলিশ মর্গে পাঠালেও এখানে মরদেহ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে দুদিন ধরে ভ্যানেই ফেলে রাখা হয়েছে তার বাবার মরদেহ।

শ্রী সুদেব চন্দ্র রায় নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, জেলার ৫টি উপজেলার একটি মাত্র মর্গের বেহাল দশা, জায়গাও সংকুলান। এখানে মরদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে মৃতদেহে পচন ধরার আশঙ্কা থাকে না। পরে সময়মতো ধর্মীয়ভাবে মরদেহ কবর বা সৎকার করা যেত।

আরও পড়ুন:মরদেহ ধর্ষণ: বন্ধ হচ্ছে চমেক হাসপাতালের সেই মর্গ

মর্গে কর্মরত ডোম সুকুমার মহন্ত বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় কামার থেকে বানিয়ে হাতুড়ি, বাটাল ও করাত দিয়ে মরদেহগুলোর কাটাছেঁড়া করা হয়। জরাজীর্ণ ছোট কক্ষে ময়নাতদন্তের কাজগুলো করছি ৩৭ বছর ধরে। লাশকাটা ঘরের পেছনের দিকে রয়েছে নদী, সেখান থেকেই পানি এনে ময়লা ও রক্ত পরিষ্কার করতে হয়। সব সরঞ্জামের সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন।

অন্যদিকে নিরাপত্তাপ্রহরীর পদেও কেউ নেই। বেশ কয়েকবার রাতে দুর্বৃত্তরা নতুন যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী নারী ডোম থাকার কথা থাকলেও এখানে তা নেই বলে জানান তিনি।

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, মর্গটি আধুনিকায়নের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি দিয়েছি। মর্গের নিরাপত্তা ও লোকবলের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নতুন ভবন পেলে ফ্রিজারটি স্থাপন করা হবে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।