ইজারার বালুর নামে কাটা হচ্ছে নদী তীরের মাটি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বিনপাড়া চকের ঘাট এলাকায় ইজারা দেওয়া বালু তুলে নেওয়ার নামে কাটা হচ্ছে নদী তীরের ফসলি জমির মাটি। এতে হুমকিতে পড়েছে নদী তীর রক্ষা বাঁধ। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গেছে, দুই বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৃতপ্রায় পাগলা নদী খনন করে। এসময় খননের বালু নদীর দুইপাড়ে ফসলি জমির ওপরেই রাখা হয়। পরে গতবছর এসব অতিরিক্ত বালু ইজারা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন। এরপর ইজারাদাররা ফসলি জমির ওপরে থাকা খননের বালু তুলতে শুরু করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, পাগলা নদীর দুই পাড়ের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ইজারা দেওয়া হয়। আমরা দেখেছি, সব জায়গাতেই শুধু খনন করা অতিরিক্ত বালু তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিবগঞ্জ উপজেলার বিনপাড়া চকের ঘাটে বালু কাটার পর নদী তীরের বন্দোবস্ত করা ফসলি জমির মাটিও কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ও তার পরিবারের লোকজনরা খননের বালু ইজারা নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে এসব মাটি বিক্রি করছেন।
বিনপাড়া গ্রামের আলতাস আলী বলেন, গতবছরই ইজারার পর খননের অতিরিক্ত বালু কেটে নেওয়া হয়েছে। অথচ ইজারার নাম করে নদীপাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে। গত এক-দেড় মাস ধরে ১০-১২ ফিট গর্ত করে মাটি কাটা হচ্ছে। অথচ নদী খননের বালু সর্বোচ্চ দুই-তিন ফিট ছিল।
উজিরপুর ইউনিয়নের বিনপাড়া গ্রামের তাসলিমা বেগম বলেন, এত গর্ত করে মাটি কাটছে যে, বর্ষায় বসতবাড়িতে পানি চলে আসবে। আমরা নদী খননের বালু তুলতে দেখেছি। নদীর পাশে যে ফসলি জমি ছিল, খননের বালুগুলো তার ওপরে ফেলা হয়। জমির ওপরে রাখা খননের বালুর উচ্চতা দুই-তিন হাত হতে পারে। অথচ কাটা হচ্ছে দুই মানুষ সমান ফসলি জমির মাটি।
একই গ্রামের মোবারক আলী বলেন, নদীর পাড় এভাবে কাটার কারণে বর্ষার সময়ে আসা অতিরিক্ত পানিতে শতশত বসতবাড়ি তলিয়ে যাবে। কারণ নদীপাড়ের মাটি কাটার কারণে পাশের বসতবাড়ি ও নদীর মধ্যেকার উচ্চতার পার্থক্য থাকলো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নদী খননের বালু ইজারা নেওয়া শামীম আলী গভীর করে মাটি কাটার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, পাড়ে থাকা নদী খননের বালু তোলা হয়ে গেছে। সেই জমির মালিক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও তার আত্মীয়-স্বজনরা এসব মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছেন। তাই আমরা কেটে নিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে, সরেজমিনে গিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহা. গোলাম কিবরিয়াকে সেখানে পাওয়া যায়। তবে নদীপাড়ের মাটি কাটার সঙ্গে তোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার বোনের জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এর পাশের জমি আমার, তাই দেখতে এসেছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন বলেন, কেবল নদী খননের বালু ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে এক ইঞ্চি মাটিও কাটা যাবে না। যদি কেউ নদীপাড়ের মাটি কাটে সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোহান মাহমুদ/এমআরআর/জিকেএস