বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ
শয্যা বাড়ায় বেড়েছে রোগীর ভোগান্তি

চিকিৎসক সংকটের মধ্যেই চলছে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম)। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫৫ বছরেও চিকিৎসক সংকট ঘোচাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ৫০০ শয্যার এ হাসপাতাল এক হাজারে উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক বাড়েনি একজনও। ফলে শয্যা বাড়ায় সেবা বাড়েনি বরং বেড়েছে রোগীর ভোগান্তি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ২৫০ শয্যা নিয়ে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু। পরে ৫০০ শয্যা এবং সবশেষ ২০১৩ সালে এক হাজার শয্যায় উন্নীত হয়। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল থাকার সময় পরিচালক, উপ-পরিচালক, আবাসিক চিকিৎসক, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ হাসপাতালটিতে ২২৪ চিকিৎসকের পদ ছিল। এসব পদের বিপরীতে চিকিৎসক মাত্র ১৮২ জন। ৪২ চিকিৎসকের পদ এখনো শূন্য। তবে হাজার শয্যায় উন্নীত হলেও বাড়েনি কোনো চিকিৎসকের সংখ্যা। ফলে রোগীর সেবায় অনেকটা ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভর হয়ে পড়েছে দক্ষিণের সবচেয়ে বড় এ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, হাজার শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। গত ২২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৫৬। এর আগের দিন ২১ জানুয়ারি ছিল ২ হাজার ১২৩ রোগী। তবে শীত থাকায় রোগী কিছুটা কম বলে জানা গেছে। এতসংখ্যক রোগীর বিপরীতে মাত্র ১৮২ চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরও পড়ুন: রোগীর চাপে বাড়ছে নতুন শিশু ওয়ার্ড
সবশেষ (২৩ জানুয়ারি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হাসপাতালে ৪২ পদ শূন্য। এসব পদের মধ্যে উপ-পরিচালক একটি, ডেন্টালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট একটি, আবাসিক সার্জন একটি, রেজিস্ট্রার ১২টি, সহকারী রেজিস্ট্রার ২১ ও ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) একটি। এছাড়া আরও পাঁচটি পদ শূন্য। এ সবই ৫০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ ছিল।
চিকিৎসকের সংকটের ফলে ভোগান্তির চিত্র চোখে পড়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই রোগী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসক আসেনি।
হাসপাতালের নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন বরগুনার জেসমিন আক্তার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভালো চিকিৎসা নিতে বরগুনা থেকে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হইছি। কিন্তু চারদিনে বড় ডাক্তারের দেখা পাইছি মাত্র একদিন। সব সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আইসা দেখে।’
আরও পড়ুন: নামাজি আর পূজারি একই দরবারের অনুসারী
একই অভিযোগ পাথরঘাটা থেকে গাইনি সমস্যায় চিকিৎসা নিতে আসা লাইলী বেগমের। তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার আসেন। এছাড়া বড় কোনো ডাক্তার আসতে দেখেনি।’
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া গ্রাম থেকে আসা ৭৫ বছর বয়সী শ্বাসকষ্টের রোগী মিনতি রানী দাসের মেয়ে লতিকা রানী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে মাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত কোনো ডাক্তার দেখেননি। সন্ধ্যায় ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার এসে ওষুধ লিখে দিয়েছেন। নার্সদের কাছে বড় ডাক্তারের কথা জানতে চাইলে তারা বলেন, কাল সকালে রাউন্ডে এসে দেখবেন।
জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে যে সংখ্যক চিকিৎসক রয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল এক হাজারে উন্নীত করা হলেও বাড়ানো হয়নি চিকিৎসক সংখ্যা। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে ৫০০ রোগীর। সেখানেও ৪২ পদ শূন্য।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে নতুন সম্ভাবনা: বরিশালে ইকোনমিক জোন চান ডিসিরা
তিনি আরও বলেন, এক হাজার শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় আড়াই হাজার রোগী। হিসাব অনুযায়ী হাসপাতালে প্রায় ৩০০ চিকিৎসকের পদ শূন্য। দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট চলছে। ফলে অনেক সময় চাপ সামলাতে না পেরে রোগী ঢাকায় রেফার করা হয়।
ইন্টার্ন চিকিৎসক দিয়ে সেবা প্রসঙ্গে হাসপাতালের এ পরিচালক বলেন, প্রফেসররা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে রোগী দেখছেন। পাশাপাশি ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসক সংকট নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সচিবের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তিনি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এসআর/এএইচ/জিকেএস