সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ভ্যান বিক্রি, পাশে দাঁড়ালেন ডিসি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৫:২৩ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে জীবিকা অর্জনের একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারিচালিত নিজের ভ্যানটি বিক্রি করে দেন পঞ্চগড়ের হামিদুল ইসলাম। এরপর থেকে শোচনীয় দিনযাপন করছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। গণশুনানিতে বিষয়টি জানতে পেরে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম। তিনি হামিদুলের জন্য নতুন একটি ভ্যান কিনে দিয়েছেন।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) হামিদুল ইসলামের হাতে নতুন ভ্যানটি তুলে দেওয়া হয়। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব দীপঙ্কর রায়সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও হামিদুলের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হামিদুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ছেলের নতুন বই কেনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি বিক্রি করে দেন হামিদুল। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করেন। জেলা প্রশাসন থেকে তাকে ১০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। পরে আবারও জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হন হামিদুল ইসলাম। তার কথা শুনে এবার জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম তাকে একটি ভ্যান কিনে দিয়েছেন।

হামিদুল ইসলামের বাড়ি উপজেলা সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায়। মাত্র দুই শতাংশের ভিটামাটিতে স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলেসহ চার জনের সংসার। ভিটামাটি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। মেয়েটি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন হামিদুলের ছেলে মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে টাকার অভাবে ভর্তির জন্য দিশেহারা ছিলাম। এরপর স্থানীয় এক বন্ধুর পরামর্শে জেলা প্রশাসনের গণশুনানিতে আর্থিক সাহায্যের আবেদন নিয়ে গেলে তিনি আমাকে ভর্তির জন্য তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ডিসি স্যারের এমন কাজের জন্য তার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।’

ভ্যানচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুই ছেলেমেয়েই ছোটবেলা থেকে লেখাপড়াই ভালো। স্কুলের শিক্ষকরাও তাদের প্রশংসা করেন। এজন্য তাদের খরচ জোগাতে আমি ভ্যান বিক্রি করে দেই। পরে একটি ভাড়ায়চালিত ভ্যান দিয়ে মালিককে ভাড়া পরিশোধ করে দৈনিক এক থেকে দেড়শ টাকা আয় হতো। এ দিয়ে দুই বেলা খাবারও হতো না। গণশুনানিতে আমার সব কথা শুনে ডিসি আর আমাকে আবারও একটি ভ্যান কিনে দেন। এরআগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রতি বুধবার গণশুনানির দিনটি সাধারণ মানুষের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। এদিন ভ্যানচালক হামিদুলের মতো অনেকেই আসেন নানান সমস্যা নিয়ে। মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা এবং দুস্থদের কর্মসংস্থানের জন্য আমার চেষ্টা থাকে। এটা আসলে সেই অর্থে জনসেবা না বলে জেলা প্রশাসনের রুটিন ওয়ার্ক বলতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

সফিকুল আলম/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।