শেরপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সি বীরপ্রতীক (বার) আর নেই

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ০৫:২১ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য বিরল উপাধি পাওয়া বীরপুত্র, কমান্ডার মো. জহুরুল হক মুন্সী বীরপ্রতীক (বার)। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে গুরুতর অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৯ বছর। তিনি তিন ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী, বীর প্রতীক (বার) শেরপুরের শ্রীবরদী পৌরসভার খামাড়িয়াপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ছিলেন।

সরকার কোনো যোদ্ধাকে যুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতির জন্য একই পদক দুইবার প্রদান করলে তার নামের শেষে ‘বীরত্ব’ উপাধি লেখার পর প্রথম ব্রাকেটে ‘বার’ লেখার নিয়ম স্বীকৃত। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শেরপুরেরর ‘জহুরুল হক মুন্সী’ই একমাত্র এই বিরল উপাধি পাওয়া বীরপুত্র ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী মিত্রশক্তি ভারতের প্রথম মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রি (১ম এমএলআই) রেজিমেন্টের সঙ্গে জহুরুল হক মুন্সীর যুদ্ধ রসায়ন অবিশ্বাস্য কিংবদন্তী হয়ে আছে। প্রথম এমএলআই’র ডাকনাম তখন ‘জঙ্গী পল্টন’। এই জঙ্গী পল্টনের সার্বক্ষণিক সহচর ছিলেন জহুরুল হক মুন্সী। ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জহুরুল হক মুন্সী জঙ্গী পল্টনের হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে সংগঠিত সব যুদ্ধে অংশ নেন।

সম্মুখ যুদ্ধের ময়দানে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে জহুরুল হক মুন্সী হয়ে উঠেছিলেন প্রথম এমএলআই’র সার্বিক যুদ্ধ নির্ভরতার প্রতীক। বাঙালি কমান্ডার মুন্সীর পরামর্শ ও ভ্যানগার্ডতুল্য নেতৃত্ব পুরো জঙ্গী পল্টনের যুদ্ধাভিযানকে ক্রমাগত নির্ভুল, লক্ষ্যভেদী ও নিরঙ্কুশ সফল্য এনে দেয়।

ডিসেম্বরে মিত্রবাহিনীর গন্ধর্ভ সিং নাগরা খুব কম সৈন্যের বহর নিয়ে সবার আগে ঢাকায় পৌঁছে পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীকে সে কারণেই বলতে পেরেছিলেন ‘খেলা শেষ। আমি এখন মিরপুর ব্রিজের গোড়ায়। আপনার প্রতিনিধি পাঠান’।

প্রথম মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কে এস ব্রার জহুরুল হক মুন্সীকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে লিখেছেন-‘আমাদের নিকট তিনি সবসময় ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এবং তার শৃংখলাবোধ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি ব্যাটালিয়নের সর্বস্তরের সৈনিকদের কাছে ছিলেন জনপ্রিয়। আমাদের আস্থা আছে যে তিনি অপারেশনসমূহে যে ধরনের উচ্চমানের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন, বাংলাদেশের পুনর্গঠনের প্রয়োজনেও তা প্রদর্শন করবেন। ’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৪)।

jagonews24

সোমবার (৬ ফেব্রয়ারি) বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সীর গ্রামের বাড়ি বকশীগঞ্জ চন্দ্রাবাজ সরকার বাড়িতে বেলা ১১টায় ও দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শ্রীবরদী সরকারি কলেজ মাঠে জানাজা নামাজের পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।

বীরপ্রতীক (বার) খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সীর মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি, শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁন, শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার, পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, শ্রীবরদী উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুস, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরোসহ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশের পাশাপাশি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

ইমরান হাসান রাব্বী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।