২০ দোকানে মাসে লাখ টাকা খোয়াচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভা

হবিগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চন্দ্রনাথ পুকুরপাড় মার্কেটের কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভা। মার্কেটের ২০টি দোকান থেকে মাসে পৌরসভা ভাড়া পায় সর্বমোট মাত্র ১০ হাজার ১২২ টাকা। আর লিজ গ্রহিতা দোকান মালিকরা পাচ্ছেন সর্বমোট দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। আবার এমন দোকানও আছে যার কাছে প্রায় ৯ বছরের ভাড়া বকেয়া রয়েছে পৌরসভার। অধিকাংশ দোকানেরই ২-৩ বছর ধরে বকেয়া রয়েছে। এছাড়া দোকানের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা ছাড়াও অনেকেই পার্শ্ববর্তী চন্দ্রনাথ পুকুর ভরাট করে অধিক জায়গা দখলে নিয়ে তাদের ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন।
১৯৯১ সাল থেকে এভাবেই চলে আসছে মার্কেটটি। ৩২ বছরেও সমন্বয় হয়নি ভাড়া, বুঝে নেওয়া হয়নি প্রকৃত জমিও। মাঝে মাঝে যৎসামান্য কিছু ভাড়া বাড়লেও বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে দিনরাত তফাৎ।
আরও পড়ুন- হবিগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী পলোবাইচে হাজারো মানুষের ঢল
পৌরসভার দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ১৯৯১ সালে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালে পৌর পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাউন মসজিদ রোডে চন্দ্রনাথ পুকুরপাড়ে ১৬টি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ১৬ জন ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত ছিল পুকুর ভরাট করে কখনো মার্কেট নির্মাণ করলে ওই ১৬ জন ভাড়াটিয়াকে ১৬টি দোকান ২০ শতাংশ কমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। বরাদ্দকৃত দোকানগুলোর মধ্যে ৫০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ৫টি, ৭০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ২টি, ১২০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ১টি, ৪০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ২টি, ৬০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ২টি, ৮০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ১টি, ৬৫ টাকা মাসিক ভাড়ায় ১টি, ৫৫ টাকা মাসিক ভাড়ায় ১টি এবং ৯৫ টাকায় ১টি দোকান ভাড়া দেওয়া হয়। যা থেকে পৌরসভার সর্বমোট প্রাপ্য ছিল ১ হাজার ৫ টাকা। ওই ১৬টি দোকান বর্তমানে ২০টি দোকানে রূপ নিয়েছে। আর ৩২ বছর পর ভাড়া বৃদ্ধি পেয়ে ২০টি দোকানে সর্বমোট ১ হাজার ৫ টাকা থেকে হয়েছে ১০ হাজার ১২২ টাকা। যা প্রতি মাসে পৌরসভার কোষাগারে জমা হওয়ার কথা।
আরও পড়ুন- গোবরের জ্বালানিতে ঝুঁকছেন গ্রামের মানুষ
এর মধ্যে ভাড়াটিয়া মো. আব্দুল্লাহর দোকান ভাড়া ৭৭৯.২২ টাকা, আব্দুল মালেকের ভাড়া ৫৫১.২০ টাকা, উজ্জল আহমেদের ৫০৬ টাকা, ইমদাদুল হকের ২৩৭.১২ টাকা, শংকর অধিকারীর ২৫৬ টাকা, শাহ আব্দুল কাদিরের ৩৬০ টাকা, চাঁন মিয়া মসজিদ কমিটির ৪৬২ টাকা, আব্দুর রহিমের ৬২৪ টাকা, ফয়েজ উল্লাহর ৬১৬ টাকা, কামরুল হাসানের ৪৬৮ টাকা, আরজু মিয়ার ৪৮৪ টাকা, মোখলেছুর রহমানের ৪০০ টাকা, ওয়াহিদুল আলমের ৫৩২ টাকা, ইউনুছ মিয়া ও ফজলুল হকের ৫৫৬.৮০ টাকা, রহমত উল্লাহ ও আব্দুল বারিকের ৬১০ টাকা, সফিকুর রহমান চৌধুরীর ৬০৩ টাকা, লুৎফুর রহমানের ৫৩২.২০ টাকা, শাহ জালাল উদ্দিনের ৩২০ টাকা, শাহ সালাউদ্দিনের ৫৬৬.৮০ টাকা এবং আব্দুর রহিমের ৬৫৭.২০ টাকা।
দোকানগুলোর সর্বনিম্ন মাসিক ভাড়া মাত্র ২৩৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ মাত্র ৭৭৯ টাকা হলেও ১টি দোকানের ভাড়া ১০০ মাস (প্রায় ৯ বছর) ধরে বকেয়া। বাকি দোকানগুলোর ভাড়া ২-৩ বছর ধরে পৌরসভাকে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে হবিগঞ্জ পৌরসভা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দোকানগুলো পৌরসভার ভাড়াটিয়ারা সাব ভাড়া দিয়ে প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ৮-১০ হাজার আবার কেউ ১৫ হাজার টাকা আদায় করছেন। এছাড়া প্রতিটি দোকানের জন্য যে পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পুকুর ভরাট করে তারা অনেক বেশি জায়গাজুড়ে দোকান নির্মাণ করেছেন।
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম জাগো নিউজকে জানান, এরইমধ্যে তারা মার্কেট ও পুকুরের জমি মেপেছেন। যা ভাড়া দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি জমি দখল হয়ে গেছে। কাগজপত্র আর বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। অনেকেই আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে জমি দখলে রেখেছেন। এতদিন এটি কোনো প্রক্রিয়ার মধ্যে চলেনি।
আরও পড়ুন- উপহারের মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে দান করলেন হিরো আলম
তিনি বলেন, পৌরসভা থেকে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা প্রতি মাসে পৌরসভাকে দিচ্ছেন ৩শ’ টাকা। আর নিজেরা সাব ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে নিচ্ছেন ১০ হাজার টাকা। এতে পৌরসভা কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এর সমাধান হবে। অন্যথায় আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এফএ/জেআইএম