নওগাঁ বিসিক
কাঁচামালের দাম দ্বিগুণে কমেছে উৎপাদন, গ্যাসের দাবি

কাঁচামালের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় নওগাঁয় বিসিকের কারখানাগুলোর উৎপাদন কমেছে। এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে কিছু কারখানা। তবে জেলায় গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে এ ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছেন কারখানা মালিকরা। শুধু তাই নয়, গ্যাস পেলে ব্যয় কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে উৎপাদন। যার ফলে অর্থনীতিতে এগিয়ে যাবে এ জেলা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নওগাঁ সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে নওগাঁ শহরের প্রবেশ মুখ শালুকা এলাকায় বিসিক গড়ে তোলা হয়। সেখানে ১৫ দশমিক ১৪ একর জমির ওপর অবকাঠামো তৈরি করা হয়। যেখানে ৮২টি প্লটে ৬৮টি শিল্প ইউনিট গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ১৫টি মেশিনারিজ কারখানা, একটি চিড়া, দুইটি মুড়ি ও দুইটি বেকারি কারখানা, তিনটি সরিষা তৈল উৎপাদন কারখানা, তিনটি পশুখাদ্য এবং একটি সাবমারসিবল পাম্প কারখানাসহ আরও কয়েকটি কারখানা রয়েছে। শিল্প নগরীতে প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে গড়ে ওঠা কারখানা থেকে গত অর্থবছরে ৭৫০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়েছে।
কারখানা মালিকদের অভিযোগ, শিল্পনগরীর ভেতরে প্রায় ২৫০০ ফুট রাস্তা রয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এরমধ্যে ১৮০ ফুট কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানা খন্দে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা জমে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বেড়েছে মশার উপদ্রবও। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় নওগাঁ বিসিকে পণ্য উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়ছে। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বাজারে টিকতে পারছেন না। এ সুযোগে দেশের বাইরের পণ্য জায়গা করে নিচ্ছে। এ অবস্থায় জেলায় গ্যাস সরবরাহ না করা হলে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে নওগাঁর শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া উৎপাদন কমায় কারখানার শ্রমিকদের মজুরি কমে যাওয়ায় সংসার সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নওগাঁ বিসিকে কাজ করা সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের শ্রমিক রাজু আহমেদ বলেন, গত ৩৫ বছর থেকে কাজ করছি। আগে মাসে ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা মজুরিতে কাজ করতাম। সে সময় সংসার ভালো চলতো। বর্তমানে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। তারপরও এ টাকা দিয়ে সংসার সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। আর এ কাজে লোকজন আসতে চায় না। মনোযোগ দিতে হয় এবং পরিশ্রম বেশি। অনেকেই কাজ শিখে দেশের বাইরে চলে যায়। এক সময় কারিগরের অভাবে হয়তো মেশিনারিজ যন্ত্রাংশের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।
শিল্পনগরীর বারিক ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারী বলেন, গত এক বছরে কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ভাঙারি লোহা ২৮ হাজার টাকা টন থেকে ৬০-৬২ হাজার টাকা, ফার্নেস অয়েল বা পোড়া মোবিল আট হাজার টাকা ব্যারেল থেকে ১৪-১৬ হাজার টাকা হয়েছে। খরচ বাড়ায় প্রয়োজনমতো উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর ৩৫ জন কর্মচারী কাজ করলেও কারখানা টিকিয়ে রাখতে শ্রমিক সংখ্যা কমিয়ে ১৪ জন রাখা হয়েছে।
'
তিনি বলেন, প্রতিমাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন করা করা হচ্ছে। উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ছে। অন্য জেলায় গ্যাস থাকায় তাদের উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে। আবার দেশের বাইরে থেকেও পণ্য আসছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। গ্যাস চালু হলে কলকারখানায় জ্বালানি খরচ কমে উৎপাদন বেশি হবে। মাসে তখন দ্বিগুণ পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। যদি গ্যাস না আসে ব্যবসায় টিকে থাকা হয়ত সম্ভব হবে না।
শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা আমিনুর রহমান বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা আরও ভালো করা দরকার। বর্ষা মৌসুমে সহজে পানি বেরিয়ে যেতে না পারায় জমে থেকে দুর্গন্ধসহ মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তা সংস্কার জরুরি।
জেলার উন্নয়নে গ্যাসের দাবিতে গত ১০ বছর থেকে আন্দোলন করে আসছে ‘গ্যাস চাই কমিটি’। জেলায় গ্যাস আসলে আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তবে স্বদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করছেন এ সংগঠনের আহ্বায়ক কামাল সিদ্দিকী বাবু। তিনি বলেন, পাশের জেলা বগুড়া ৪২ কিলোমিটার দূরে। সেখানে গ্যাসের ব্যবস্থা আছে। অথচ আমাদের জেলায় গ্যাস নেই। রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এরইমধ্যে অনেক চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। যদি এ জেলায় গ্যাস আসে অনেক শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অর্থনীতিতে আমরা এগিয়ে যাবো।
নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার বলেন, শিল্প নগরীতে ৮২টি প্লটে ৬৮টি শিল্প ইউনিট গড়ে উঠেছে। যেখানে প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনটি খাদ্য উৎপাদন কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবস্থা করা গেলে উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি খরচ কমে আসবে। তবে গুণগত মান ঠিক রাখায় বাজারে তারা টিকে আছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তার কিছুটা সমস্যা আছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলমান আছে। আগামীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তা সংস্কার করা হবে।
তিনি বলেন, কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকে দেশের বাইরে চলে যায়। এ কারণে শ্রমিক ধরে রাখা যাচ্ছে না। শিল্প নগরীর জায়গার ব্যাপক চাহিদা থাকায় নতুন করে আরও একটি শিল্প নগরী গড়ে তোলা হবে।
এমআরআর/জিকেএস