যশোর
ব্রোকারেজ হাউজ বাড়লেও সুদিন ফেরেনি

যশোরে ব্রোকারেজ হাউজ বাড়লেও সুদিন ফেরেনি শেয়ারবাজারে। নতুন করে যেমন বিও হিসাব খোলার সংখ্যা খুবই কম, আবার অনেক হিসাব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শেয়ার লেনদেন কমে যাওয়ায় হাউজগুলোকেও লোকসানে পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আস্থা সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের আগে যশোরে দুটি ব্রোকারেজ হাউজের শাখা ছিল। তখন যশোরে যে পরিমাণ বিনিয়োগকারী ছিলেন, এখন তার অর্ধেকও নেই। লেনদেন নেই সিকিভাগও। অথচ বর্তমানে এই জেলায় ৮টি ব্রোকারেজ হাউজের শাখা রয়েছে। এগুলো হলো জয়তুন সিকিউরিটিজ, রয়েল, ইউসিবি স্টকস, লংকাবাংলা, আকিজ, মাইকা, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ও এমটিবি।
আরও পড়ুন: দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা, ব্রোকারদের বিস্ময়
ব্রোকারেজ হাউজ ও বিনিয়োগকারীরা বলছেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন এখন অনেক কমে গেছে। বাজারের লেনদেন হওয়া সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইসে নেমে গেছে। তাতে এসব কোম্পানির খুব বেশি শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে না। ফলে কোম্পানিগুলোতে আটকে আছে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ। শেয়ারবাজারে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তখনই শেয়ার কেনেন, যখন তার হাতে কেনার মতো অর্থ থাকে। সম্প্রতি ভালো ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করে অনেকে আটকে গেছেন। ফলে তাদের বিনিয়োগ সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এছাড়া ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর একযুগের বেশি সময় পার হলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ফেরেনি।
জয়তুন সিকিউরিটিজ্ লিমিটেডের হিসাবরক্ষক জেসমিন আরা জানান, ২০০৯ সাল থেকে তারা যশোরে শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের দশ সহস্রাধিক বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কিন্তু এর অর্ধেকের বেশিই ক্লোজ হয়ে গেছে। এর বড় কারণ ‘আইপিও’র প্রক্রিয়ার পরিবর্তন। আইপিও’র লটারি প্রক্রিয়া তুলে দেওয়ায় অনেকেই বিও হিসাব ক্লোজ করেছেন। ২০১০ সালে ধসের পর অনেক বিনিয়োগকারী যেমন পুঁজি হারিয়েছেন, তেমনি অনেকেই এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আগে যেখানে প্রতিদিন ২-৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হতো। এখন তা ৫ লাখ থেকে ৫০ লাখের মধ্যে ওঠানামা করে। কখনও ২-৩ লাখেও নেমে আসে।
আরও পড়ুন: রাস্তায় নামলেন বিনিয়োগকারীরা
যশোরে শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত লুৎফর রহমান ডাবলু জানান, তিনি ২০০৭ সাল থেকে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কারসাজির কারণে শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল। ফলে বিনিয়োগকারীরা এই বাজারে আস্থা পান না। একটি শেয়ারের দাম দ্বিগুণ, তিনগুণ, চারগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। অনেকে না বুঝে ওই শেয়ারের দিকে ছুটতে থাকেন। এরপর আবার সেই শেয়ারের দাম পড়ে যায়। অথচ সে সময় দেখা যায়, অন্য শেয়ারগুলো নিয়ে কোনো নড়াচড়া হয় না। কারসাজি না করলে এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। এভাবে চক্করে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
জয়তুন সিকিউরিটিজ্ লিমিটেডের উপদেষ্টা আব্দুল আজিজ বলেন, বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনতে শেয়ারবাজারের আস্থার সংকট দূর করতে হবে। সরকার এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এটি নিয়ে কাজ করতে হবে। শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া বা দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে কারসাজি থাকলে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আস্থার সংকট দূর করা গেলে বাজার আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে শেয়ারবাজারে বেড়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী
ইউসিবি স্টকস্ ব্রোকারেজ লিমিটেড যশোরের ম্যানেজার দেশবন্ধু বিশ্বাস বলেন, ২০১০ সালে ধসের পর এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজার স্থিতিশীল হয়নি। এজন্য ‘মার্কেটকে রিকনস্ট্রাকশন’ করা প্রয়োজন। সেটি হচ্ছে, তবে ধীরগতিতে। এজন্য সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, যশোরে আগে দুটি ব্রোকারেজ হাউজ ছিল। এখন সেখানে ৮টি হাউজ। ব্রোকারেজ হাউজ বাড়লেও বিনিয়োগকারী বাড়ছে না। এর অন্যতম কারণ আস্থার সংকট। সেটি দূর করা গেলেই শেয়ারবাজার আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
এসএইচএস/এএসএম